সরকার মাঠ পর্যায় থেকে কর আদায় বাড়াতে ‘বেসরকারি ব্যক্তি’ নিয়োগ করবে। তবে মানুষের কাছ থেকে কর আদায় করার ক্ষমতা ওই নির্দিষ্ট ব্যক্তির থাকবে না। তারা শুধু করদাতাদের রিটার্ন প্রস্তুত ও জমায় সহায়তা করবেন।
একটি বিধিমালার আওতায় সরকার নিযুক্ত এই ব্যক্তিরা যাঁর রিটার্ন প্রস্তুত ও জমায় সহায়তা করবেন, সেই নির্দিষ্ট করদাতার আইনি প্রতিনিধিও হতে পারবেন না। এ ধরনের সহায়তা নেওয়ার জন্য করদাতাকে কোনো টাকা দিতে হবে না।
এই বেসরকারি ব্যক্তি বা এজেন্টরা কাজ করবেন এনবিআর নিয়োগকৃত এলাকাভিত্তিক বেসরকারি সহায়তা প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে।
আসন্ন বাজেটে এ ধরনের বেসরকারি ব্যক্তি ও সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান নিয়োগের ঘোষণা থাকতে পারে বলে জানা গেছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তাঁর বাজেট বক্তৃতায় এ ঘোষণা দিতে পারেন। আগামী বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাজেট দেবেন অর্থমন্ত্রী। একজন করদাতা যে কর পরিশোধ করবেন, এনবিআর সেই করের একটি নির্দিষ্ট অংশ এজেন্টকে দেবে। রিটার্ন প্রস্তুত ও জমা দিয়ে সহায়তা করার জন্য এজেন্ট প্রথম পাঁচ বছর পর্যন্ত অর্থ পাবেন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়কর রিটার্ন প্রস্তুতকারী বিধিমালা ২০২৩-এর খসড়া প্রস্তুত করেছে। সেখানে এই বেসরকারি এজেন্টরা কী কাজ করবেন, কারা এমন এজেন্ট হতে পারবেন, এজেন্ট হওয়ার প্রক্রিয়া কী—এসব বিষয়ে বলা হয়েছে।
যোগ্যতা ও নিয়োগপ্রক্রিয়া
বলা হয়েছে, এজেন্ট হতে আগ্রহী ব্যক্তিকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। তবে তিনি সরকারি চাকরি করলে রিটার্ন প্রস্তুতকারী সনদ পাবেন না। তাঁকে কমপক্ষে স্নাতক পাস হতে হবে। ওই ব্যক্তিকে অবশ্য কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন) হতে হবে এবং রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র থাকতে হবে। কম্পিউটার চালনা ও তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে।
তবে আগ্রহী প্রার্থীদের এনবিআরে পরীক্ষা দিয়ে রিটার্ন প্রস্তুতকারীর সনদ নিতে হবে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হলে এ সনদ মিলবে না। এনবিআর পরীক্ষা নেওয়ার আগে প্রয়োজনীয় পাঠ্যসূচি প্রণয়ন ও প্রচার করবে।
তবে কিছু পেশাজীবী পরীক্ষা ছাড়াই রিটার্ন প্রস্তুতকারীর সনদ নিতে পারবেন। এ তালিকায় আছে, সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদ, সাচিবিক বিদ্যায় দক্ষতা অর্জনকারী, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে নিবন্ধিত আইনজীবী এবং কর আইনজীবী।
অন্যদিকে এনবিআর বেসরকারি সহায়তা প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করবে এবং তারা যাবতীয় কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য আয়কর রিটার্ন প্রস্তুতকারীকে কম্পিউটার, ল্যাব, প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের সহায়তা দেবে। নির্দিষ্ট এলাকাভিত্তিক এক বা একাধিক প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। ওই প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের আয়কর আইন ও কর ব্যবস্থা নিয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকতে হবে।
কার কী লাভ
এ ধরনের কার্যক্রমে প্রণোদনা হিসেবে রিটার্ন প্রস্তুতকারীকে অর্থ দেবে এনবিআর। যে করদাতা যত টাকা কর দেবেন, এর একটি অংশ পাবেন ওই রিটার্ন প্রস্তুতকারী। এনবিআরের খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী, প্রথম তিন বছর ন্যূনতম করের ওপর ১০ শতাংশ, পরবর্তী ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত করের ওপর ২ শতাংশ, পরবর্তী ৫০ হাজার টাকার ১ শতাংশ এবং অবশিষ্ট করের ওপর দশমিক ৫ শতাংশ অর্থ দেওয়া হবে।
অন্যদিকে চতুর্থ ও পঞ্চম বছরের জন্য ন্যূনতম করের ওপর ৫ শতাংশ, পরবর্তী ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত করের ওপর ১ শতাংশ, পরবর্তী ৫০ হাজার টাকার দশমিক ৫ শতাংশ এবং অবশিষ্ট করের ওপর দশমিক ২৫ শতাংশ অর্থ দেওয়া হবে।
কোনো করদাতাকে পাঁচ বছর এভাবে রিটার্ন জমায় সহায়তা করার পর ষষ্ঠ বছর থেকে আর প্রণোদনা পাবেন না ওই ব্যক্তি বা এজেন্ট। অন্যদিকে সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান রিটার্ন প্রস্তুতকারীর প্রাপ্য প্রণোদনার ১০ শতাংশ সেবা মাশুল হিসেবে নিতে পারবে।
রিটার্ন প্রস্তুতকারী ব্যক্তি এনবিআরে প্রণোদনার অর্থ পাওয়ার জন্য সরাসরি আবেদন করতে পারবেন না। এক মৌসুমে একজন রিটার্ন প্রস্তুতকারী যে কজন করদাতাকে সেবা দিয়েছেন, সেই তথ্য তিনি সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানকে জানাবেন। সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান সেই অনুযায়ী এনবিআরে আবেদন করবে। কর কর্মকর্তারা আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই করে অর্থ ছাড় করবেন।
এনবিআরের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাজেট এ বিষয়ে ঘোষণা থাকবে। এ ছাড়া খসড়া বিধিমালা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশের পর সবার মতামত দেওয়ার জন্য আগামী ২৫ জুন পর্যন্ত সময় দেওয়া হবে। পরে তা চূড়ান্ত করা হবে।
প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার দেশে মাত্র ৮৭ লাখ কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন) আছেন। এর মধ্যে রিটার্ন জমা দেয় মাত্র ৩০ লাখ ব্যক্তি, যা মোট জনগোষ্ঠীর পৌনে ২ শতাংশ।
এনবিআরের কর্মকর্তারা মনে করেন, এখন উপজেলা, এমনকি গ্রামগঞ্জ পর্যন্ত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্প্রসারিত হয়েছে। কিন্তু উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায়েও করযোগ্য আয়ের লোকজন আছেন। এমনকি শহর এলাকায় এমন অনেক লোককে করের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। মূলত এনবিআর জনবলের অভাবে তাদের করজালে আনতে পারছে না।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আগামী বাজেটে করদাতাদের চিহ্নিত করে তাঁদের টিআইএন দেওয়া এবং রিটার্ন দেওয়ায় সহায়তা করার জন্য বেসরকারি খাতের এজেন্ট নিয়োগের জন্য একটি ধারা আয়কর অধ্যাদেশে সংযোজন করার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে।