Business Care News

Business News That Matters

hilsa supply comes from Bangladesh

বিশ্বের ৮০ ভাগ ইলিশের যোগান আসে বাংলাদেশ থেকে

জিডিপিতে ইলিশের একক অবদান ১২ শতাংশ এবং বিশ্বের ৮০ ভাগ ইলিশের যোগান আসে বাংলাদেশ থেকে। সুস্বাদু ও পুষ্টিকর এই মাছটি শুধু আমাদের জাতীয় মাছই নয় বিশ্বের মানদন্ডে এটি একটি উল্লেখযোগ্য বানিজ্যিক অবদানের মাধ্যম। ইলিশ দিয়ে এখন কূটনীতিক সম্পর্ক হয়। এক দেশে থেকে আরেক দেশে ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে। ইলিশের উৎপাদন কমেনি, বরং বেড়েছে। তবে তাদের আশ্রয়স্থল পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় আমরা গবেষণা বাড়াতে পারিনি।

entrepreneurship-training-program-banner

ইলিশ মাছ রক্ষা, সংরক্ষণ ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। এ্ররই মধ্যে ইলিশ রক্ষা ও উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আন্তঃদেশীয় সমন্বয়ের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের সুপারিশ করেছেন আইনপ্রণেতা এবং বিশেষজ্ঞরা। 

বাংলাদেশ সরকার ইলিশ মাছ ধরার ক্ষেত্রে ডিমপারার মৌসুমে নিষেধাজ্ঞা করে থাকলেও বেশ কিছু প্রতিবন্ধকরার কারণে ইলিশ উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। এর মধ্যে একটি অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারতের ভিন্ন ভিন্ন তারিখে সমুদ্রে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা থাকা। দুটি দেশের একদেশে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা থাকলেও অন্যদেশের সীমান্তের মানুষ নির্বিচারে মাছ শিকার করে। ফলে সরকারের নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে।

ইলিশ গভীর জলের মাছ। কিন্তু নদীর গভীরতা কমে গেছে, পলি পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী নদী ড্রেজিং করার জন্য বরাদ্দ দেওয়ার পরও নানা বাধার কারণে আমরা তা করতে পারছি না। এরপর নদীতে পর্চা ও বিষাক্ত বর্জ্য ফেলার কারণে মাছের স্বাদ ও উৎপাদন কমে যাচ্ছে।

জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন এবং ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ আয়োজিত ‘উপকূলের ইলিশ ও জেলে’ বিষয়ক জাতীয় সংলাপে তারা এসব কথা বলেন ।

বাপার সভাপতি সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংলাপ সঞ্চালনা করেন বাপা’র সাধারণ সম্পাদক ও ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল। 

আলোচনায় অংশ নেন সংসদ সদস্য এস এম শাহজাদা ও আক্তারুজ্জামান বাবু, মৎস্য অধিদপ্তরের উপপ্রধান মাসুদ আরা মমি, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহ অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল ওহাব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা অধ্যাপক গুলশান আরা লতিফা, মৎস্য গবেষক ড. সৈয়দ আলী আজহার, খুলনার পাইকগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম মন্টু, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র, বাপা মোংলার আহ্বায়ক মো. নুর আলম শেখসহ জেলে, আড়ৎদার ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। 

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাকুয়ালচার বিভগের চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ আলী

সভাপতির বক্তব্যে অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, আমরা ইতিবাচক কথা কেন বলতে পারছি না? সরকারিভাবে ইলিশ নিয়ে যে তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে, এর সুফল কেন পাচ্ছি না? জেলেরা কেন নেতিবাচক কথা বলছেন? আমরা যারা ভোক্তা আগে প্রতিদিন ইলিশ খেতাম এখন কেন খেতে পারছি না। এটা সরকার ও রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যারা আছেন তাদের বুঝতে হবে। এখানে জেলেরা তাদের সমস্যা ও সংকটের কথা তুলে ধরেছেন। সরকার প্রণোদনা দিচ্ছে, কিন্তু একজন জেলের সংসার কি অনুদানের ৪০ কেজি চালে একমাস চলে? তাদেরকে ভাতার যে কার্ড দেওয়া হয়, সেখানেও অনিয়ম এবং অপ্রতুলতার কারণে অধিকাংশ জেলেরাই এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সরকারের উচিত অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি জনসাধারণের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন এবং বিকাশে আরো যত্নবান হওয়া।

মৎস্য অধিদপ্তরের উপপ্রধান মাসুদ আরা মমি বলেন, ৮০ দশকে ইলিশ মাছের উৎপাদন পরিমাণ ছিল মোট ২০ শতাংশ। ২০০২-০৩ এই উৎপাদন কমে তা হয় ৮ শতাংশে। বর্তমান সরকারের আমলে নানা প্রকল্পে গ্রহণে ফলে উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ লাখ ৬০ লক্ষ মেট্রিক টন।

অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল ওহাব বলেন, পরিবেশ, নদী ও সমুদ্র আজকে গরীর জেলেদের বিপক্ষে। ইলিশ বান্ধব দেশ গড়তে হলে জেলেদের রক্ষায় মাসিক বেতন নির্ধারণ করতে হবে।

অধ্যাপক গুলশান আরা লতিফা বলেন, সরকারের উচিৎ ইলিশের অভয়াশ্রমগুলোকে রক্ষায় উন্নয়ন প্রকল্পের পূর্ববর্তী গবেষণার স্বচ্ছতা ও ইলিশ রক্ষায় প্রণীত বিধি-বিধানগুলোর সঠিক বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।

গবেষক অধ্যাপক ড. সৈয়দ আলী আজহার বলেন, জেলেদের পরিবারে নিরাপত্তার জন্য ইন্সুরেন্স ব্যবস্থা, গ্রামীণ তহবিল গঠন ও হয়রানি গ্রেফতার বন্ধ করতে হবে।

বাপা সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, ২০১০ সালে পশুর নদীর এক লিটার পানিতে ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার মাছের ডিম পাওয়া যেত। কিন্তু ২০১৭ সালের গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি লিটারে দুই হাজার ৬শ’তে নেমে এসেছে।

ইলিশ আমাদের বিনিয়োগ খাতের এক অনন্য উৎস। তাই এই মাছটিকে টিকেয়ে রাখতে এর নিরাপত্তা, উৎপাদনশীলতা ও সংরক্ষণের লক্ষ্যে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

Skip to content