প্রশ্নঃ আমাদের কাজে আয় উপার্জনে বরকত নেই কেন?
উত্তরঃ আনন্দ নিয়ে কাজ করি না বলে। উদাহরণস্বরূপ একজন শিক্ষককে দেখুন। যিনি হয়তো দিনে পাঁচটা করে ব্যাচ পড়াচ্ছেন। তিনি কি আনন্দের সাথে পড়ান? দুয়েকটি ব্যতিক্রম বাদে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই না। একরাশ বিরক্তি, মেজাজ তিরিক্ষি। উফ! আবার একটা ব্যাচ পড়াতে হবে! কী ঝামেলা! ইত্যাদি।
একবারও চিন্তা করে দেখেন না—এই ছাত্রগুলো পড়তে আসছে বলেই তার উপার্জনের সুযোগ হয়েছে। স্বচ্ছন্দে জীবন যাপন করতে পারছেন। এই ভেবে তার তো শুকরিয়ার সাথে, আনন্দের সাথে পড়ানো উচিত ছিল। কিন্তু তা কি হয়? আপনাদের নিশ্চয়ই অনেকের অভিজ্ঞতা আছে, অন্তত সন্তানকে পড়াতে নিয়ে যাওয়ার সুবাদে। তারা অধিকাংশই আনন্দ নিয়ে পড়ান না। আর এজন্যেই তাদের জীবনে বরকত নেই। কারণ বিরক্তিসহ যে কাজ করা হয় সে কাজে কখনো বরকত থাকে না।
একটা উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি পরিষ্কার করা যেতে পারে। ধরুন, আপনি মাসে ৫০ হাজার টাকা উপার্জন করেন। এর মধ্যে একদিন আপনার হঠাৎ পেটে ব্যথা হলো। কিছুতেই কমছে না। শেষে গেলেন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে। ডাক্তারের ভিজিট দিলেন ১০০০ টাকা। কিন্তু তাতেও বোঝা গেল না ব্যথার কারণ। বোঝার জন্যে ডাক্তার একগাদা টেস্ট দিলেন।
এই টেস্ট, সেই টেস্ট, আলট্রাসনো, সুপারসনো—সেগুলো করতে গিয়ে চলে গেল হয়তো আরো হাজার পনের। এদিকে সংসারের নিয়মিত ব্যয় তো আছেই। আর যেহেতু ৫০ হাজার টাকা আপনার উপার্জন, আপনার জীবন যাপনের মানও সেরকম। ফলে ব্যয় সংকোচনের সুযোগ নেই। সব মিলে মাস শেষে নিয়মিত-অনিয়মিত মোট ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়ালো ৭০ হাজার টাকা। অর্থাৎ ২০ হাজার টাকা ঘাটতি, যা হয়তো ঋণ করে যোগাড় করেছিলেন।
আবার হয়তো আপনি ১৫ হাজার টাকা উপার্জন করছেন। চিত্তে আনন্দ আছে, কোনো রোগ নেই, সমস্যা নেই। সিটি স্ক্যানের দরকার নেই, প্রয়োজন নেই এমআরআইয়ের। আপনার খরচ হলো মাসে ১২ হাজার টাকা। উদ্বৃত্ত হলো তিন হাজার টাকা। তো, দুটার মধ্যে কোনটাতে সুখ? উদ্বৃত্ত থাকার, না ঋণগ্রস্ত হওয়ার? উদ্বৃত্ত থাকার। এই দৃষ্টিভঙ্গিটাকে বুঝতে হবে। আসলে আমাদের এই দৃষ্টিভঙ্গি, এ জীবনদৃষ্টিকেই বলা হয়েছে নিয়ত।
আসলে জীবনের লক্ষ্য যদি হয় শুধু উপার্জন তাহলে অনেক টাকা হয়তো আপনি করতে পারবেন। কিন্তু শান্তি না-ও পেতে পারেন।
এক ডাক্তার দম্পতির কথা বলি। রাতদিন শুধু হাসপাতাল, ক্লিনিক আর চেম্বার। এই করতে গিয়ে তাদের একমাত্র ছেলেটিকে দেয়ার মতো আর কোনো সময় ছিল না তাদের। ফলে বখে গেল ছেলেটি। ড্রাগ এডিক্টেড হয়ে গেল। একসময় জোর করে ভর্তি করা হলো মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে। কিন্তু তাকে চিকিৎসা দেয়া যাচ্ছে না কিছুতেই। শেষমেশ সে রাজি হলো এই শর্তে যে, প্রতি ইনজেকশন নেয়ার বিনিময়ে তাকে ১০ হাজার করে টাকা দিতে হবে।
সারাজীবন মেশিনের মতো টাকা কামিয়েছেন যে মা-বাবা, এছাড়া তাদের দেয়ার আর কিছু ছিলও না। এদিকে টাকা পেয়ে ছেলের তো পোয়াবারো। টাকা দিয়ে সে ক্লিনিকের কর্মচারীদের কয়েকজনকে হাত করে ফেলল। তাদের মাধ্যমে ড্রাগ আনিয়ে দিব্যি হাসপাতালের মধ্যেই ড্রাগ নিতে লাগল।
এই ডাক্তার মা-বাবা যদি শুধু টাকা উপার্জনের কথা চিন্তা না করে রোগীদেরকে ভালবাসতেন, আন্তরিকভাবে তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতেন তাহলে অন্তত রোগীদের দোয়ার বিনিময়ে হলেও তাদের একমাত্র সন্তানের জীবন এভাবে নষ্ট হতো না।
আসলে এরাও ডাক্তার। আবার ডাক্তার বিধান রায়ও ডাক্তার ছিলেন। সেবাপরায়ণতা আর পেশার প্রতি ভালবাসার জন্যে যিনি আজো স্মরণীয় হয়ে আছেন মানুষের মনে।
মূল: প্রশ্নোত্তর | কোয়ান্টাম মেথড
Related Posts
Q&A Series – Episode 292: Failure is the pillar of success!
Q&A Series – Episode 291: What exactly is visualization?
Q&A Series – Episode 290: How does visualization work?