প্রশ্নঃ নগদ টাকা নেই। হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের ঋণ নিয়ে বাড়ি করার ব্যাপারে আপনার মতামত আশা করছি।
উত্তরঃ আসলে এই বাড়ি তৈরি করাকে আমার সবসময় একটা ঝামেলা মনে হয়। তরুণ বয়সে বেশ কয়েকজনকে আমি বাড়ি তৈরি করতে গিয়ে হার্ট-এটাকে মারা যেতে দেখেছি। এ কারণে আমার একটা সময়ে ধারণা ছিলো যে, বাড়ি তৈরি করতে গেলেই মানুষের হার্ট-এটাক হয়! বেশ কয়েকবছর আগের একটা ঘটনা-
আমার কাছে একবার এক গ্রাজুয়েট এসেছিলেন। ভদ্রলোক ব্যাংকার। লোন নিয়ে চার/ পাঁচ তলা বাড়ি করবেন-আমার পরামর্শ চাইতে এসেছেন। আমি বললাম, ‘খামোখা এসব বাড়ি করার কী দরকার!’ তিনি বললেন, ‘সে আপনি বুঝবেন না। আপনার তো এসব ব্যাপারে কোনো আগ্রহ নাই।’ কিছুদিন পর তার স্ত্রী এসে বললেন, উনি হার্ট-এটাক করে মারা গেছেন, এদিকে বাড়ির কাজ শেষ হয় নি। কারণটা কী? বাড়ি তৈরির সাথে কি হার্ট-এটাকের সম্পর্ক? না, সম্পর্কটা আসলে মানসিক চাপের।
বাড়ি তৈরির সময় আপনি যে মিস্ত্রিদের সাথে কথা বলবেন, তারা কখনোই এস্টিমেট দেয়ার সময় আসল খরচের ৫০%-র বেশি বলবে না। অর্থাৎ বাড়ি তৈরিতে যদি ৬০ লাখ টাকা খরচ হয় তো আপনাকে বলবে ৩০ লাখ। আপনি হয়তো আরো ১০ লাখ টাকা হাতে রেখে মোট ৪০ লাখ এস্টিমেট করে কাজে নেমে পড়লেন। এর মধ্যে ব্যাংক থেকে নিলেন ২০ লাখ। বাকিটা অন্যান্য সোর্স থেকে ধার-টার করে যোগাড় করলেন। আপনি নিশ্চিন্ত হলেন, যাক, বাড়ি তৈরির খরচের ব্যবস্থা হয়ে গেছে! শুরু হলো কাজ। হু হু করে খরচ হতে লাগলো। ৪০ লাখের পুরোটা খরচ করেও আপনি একসময় দেখলেন বাড়ি আপনার হয়েছে ঠিকই; কিন্তু সে কেবল কাঠামো। ফিনিশিং কিছুই হয় নি-ফ্লোর হয় নি, দরজা-জানালা হয় নি, বাথরুম হয় নি। আর খরচ বেশি লাগে এসব করতেই। এদিকে ফিনিশিং না করা পর্যন্ত আপনি না পারছেন নিজে সে বাড়িতে উঠতে, না পারছেন ভাড়া দিতে। ফলে এসব করার জন্যে আরো লাখ বিশেক যোগাড়ের সংগ্রামে নামতে হলো আপনাকে। টেনশনটা এখানেই।
কারণ ধার-কর্জ তো আগেই করা শেষ। ওদিকে যত সময় যাচ্ছে লোনের ইন্টারেস্ট বাড়ছে। ব্যস, আপনার আর ঘুম আসবে না। যে ভদ্রলোকের কথা বলছিলাম তিনিও কিন্তু এই চিন্তায় মারা গেলেন এবং শেষ পর্যন্ত ঋণের টাকা পরিশোধ না করায় ব্যাংক বাড়িটা নিয়ে নিলো। বাড়িও গেল, উনিও গেলেন। হলো না ছেলে-মেয়ের জন্যেও কিছু। অবশ্য কেউ এটা ভাববেন না যে, আমি বলছি-বাড়ি করতে গেলেই হার্ট-এটাক হয়! নিজের বাড়ি করার মধ্যে দোষের কিছু নাই। রসুলুল্লাহ (স)-এরও নিজের বাড়ি ছিলো। অতএব নিজের জন্যে বাড়ি করাও একটা সুন্নত। তবে আপনাকে একটা সিস্টেমে যেতে হবে। এস্টিমেশনের ব্যাপারে খুব সাবধান থাকবেন। মিস্ত্রি যা বলবে তার কমপক্ষে ডাবল ধরবেন। দরকার হলে ডাবলের ওপরে আরো টুয়েন্টি পার্সেন্ট ধরেন, পুরো টাকার ব্যবস্থা করে কাজ শুরু করুন। আপনার কোনো অসুবিধা হবে না। বাড়িও হবে। ভালোভাবে থাকতে পারবেন।
তথ্যসূত্রঃ প্রশ্নোত্তর | কোয়ান্টাম মেথড
Related Posts
Q&A Series – Episode 292: Failure is the pillar of success!
Q&A Series – Episode 291: What exactly is visualization?
Q&A Series – Episode 290: How does visualization work?