প্রশ্নঃ ডাব উৎপাদন গত পাঁচ বছরে কমেছে। এটা নাকি মোবাইল ফোন ও ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক রেডিয়েশনের জন্যে। এ ব্যাপারে আপনার অভিমত কী?
উত্তরঃ শুধু ডাব উৎপাদনই নয়, প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান ব্যবহারের সাথে সাথে আধুনিক মানুষের জীবনে যে বিপর্যয়টি ভয়াবহভাবে ধেয়ে আসছে তা হলো এই ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক রেডিয়েশন সৃষ্ট তড়িৎদূষণ বা ইলেক্ট্রোপলিউশন। এ প্রসঙ্গে সাপ্তাহিক বিপরীত স্রোত পত্রিকার ডিসেম্বর, ২০১১ সংখ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. গোলাম মোহাম্মদ ভূঞার একটি প্রচ্ছদ নিবন্ধ ছাপা হয়েছিল।
তাতে বলা হয়, আধুনিক প্রযুক্তির তড়িৎ কৌশলসমূহ—যেমন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, হেয়ার ড্রায়ার, টোস্টারসহ এখনকার কোটি কোটি মানুষের নিত্যব্যবহার্য মোবাইল ফোনের কারণে গত দুই দশক আগের তুলনায় মানবসমাজ আজ কোটি গুণ বেশি ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক রেডিয়েশন দূষণে আক্রান্ত। সেইসাথে আবাসিক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল এলাকায় অহরহ বিল্ডিংয়ের ছাদে গড়ে তোলা বেইজ স্টেশন বা টাওয়ার এন্টেনার রেডিয়েশন তো আছেই।
গবেষণায় দেখা গেছে—মোবাইলে ফোনে কথা বলার সময় কান ও ব্রেনের কোমল টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয় যা পরবর্তীতে ব্রেন টিউমার, ব্রেন ক্যান্সার ও অটিজমের ঝুঁকি বাড়ায়। ২০০৩ সালে সুইডেনের একদল বিজ্ঞানী দেখান যে, দিনে গড়ে একঘণ্টা মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে ব্রেন ক্যান্সার বা টিউমার হওয়ার ঝুঁকি ৩০% বেড়ে যায়। কোনো শিশু মোবাইলে মাত্র দুই মিনিট কথা বললেও তার ব্রেনে এতটাই প্রভাব ফেলে যে, পরবর্তী এক ঘণ্টায়ও তা স্বাভাবিক হয় না। ১৯৭০ সালে প্রতি ১০ হাজার শিশুর মধ্যে মাত্র একজনকে পাওয়া যেত অটিস্টিক। ২০০৩ সালে এ সংখ্যা হয় ১৬৬ জন! আর ২০০৮ সালের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, আমেরিকায় প্রতি ৮৮ জন শিশুর একজন অটিস্টিক!
এটা তো গেল মোবাইল সেটের ক্ষতি। কিন্তু যারা বেইজ স্টেশন বা টাওয়ার এলাকায় থাকেন, তারা তো ২৪ ঘণ্টাই আছেন উচ্চ ক্ষমতার এই বিকিরণের ভেতরে! সামান্য একটু উঁচু জায়গা পেলেই আমাদের দেশে যেভাবে ব্যাঙের ছাতার মতো এসব টাওয়ার দাঁড়িয়ে যায়, তা দেখেই বোঝা যায় বিষয়টা নিয়ে আমাদের কোনো সচেতনতাই নেই। অথচ পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে জনবসতি এলাকায় তো দূরের কথা, একটা টাওয়ার স্থাপনের জন্যে মানতে হয় অনেক বিধি-নিষেধ। অনেক উঁচুতে নির্মাণ করতে হবে, নির্ধারিত মাত্রার বেশি বিকিরণ করা যাবে না ইত্যাদি।
যা-ই হোক, নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে এসব যখন হবে তখন হবে। কিন্তু তার আগে একজন সাধারণ ব্যবহারকারী হিসেবে মোবাইলের ক্ষতি থেকে কিছুটা হলেও বেঁচে থাকার জন্যে আপনি যা করতে পারেন তা হলো- মোবাইল ফোন যতটা সম্ভব কম ব্যবহার করা। শুধু প্রয়োজনীয় কথাটুকু বলেই ফোন রেখে দিন। ‘অন’ অবস্থায় সেটটাকে দেহ থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করবেন। ঘুমের সময় মাথার কাছে না রেখে পাঁচ/ ছয় ফুট দূরে রাখুন। আর চেষ্টা করুন কথা বলার সময় এয়ারফোন ব্যবহার করতে। আর খুবই গুরুত্বপূর্ণ হলো শিশুদেরকে মোবাইল থেকে দূরে রাখা।
আসলে আধুনিক প্রযুক্তির উপকরণগুলো আমাদের যেমন ব্যবহার করতে হবে, পাশাপাশি চেষ্টা করতে হবে এগুলোর ক্ষতি থেকে বেঁচে থাকার।
তথ্যসূত্রঃ প্রশ্নোত্তর | কোয়ান্টাম মেথড
Related Posts
Q&A Series – Episode 292: Failure is the pillar of success!
Q&A Series – Episode 291: What exactly is visualization?
Q&A Series – Episode 290: How does visualization work?