প্রশ্নঃ হৃদরোগ নিরাময়ে কি মেডিটেশনের ভূমিকা আছে?
উত্তরঃ ডাক্তারদের একসময় ধারণা ছিল, একবার যদি আর্টারি ব্লকড হওয়া শুরু করে তাহলে এনজিওপ্লাস্টি বা বাইপাস ছাড়া কোনো উপায় নাই। প্রথম এই ধারণা ভেঙে দেন ডা. ডীন অরনিশ। তিনি সানফ্রান্সিসকোর কার্ডিওলজিস্ট। ১৯৮৬ সালে ৪০ জন হৃদরোগী নিয়ে তিনি গবেষণা করলেন। কোনো ওষুধ নয়, এনজিওপ্লাস্টি নয়, বাইপাস নয়-মেডিটেশন, যোগব্যায়াম, লো-কোলেস্টেরল ডায়েট এবং কাউন্সেলিং।
এক বছর পরে ভালো হয়ে গেলেন সবাই। নিউইয়র্ক টাইমসের প্রথম পৃষ্ঠার খবর ছিল এটি। ১৯৯৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইনসিওরেন্স কোম্পানিগুলো ২০০ রোগীকে উদ্বুদ্ধ করলো ডীন অরনিশের প্রোগ্রামে যেতে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রে হৃদরোগ হচ্ছে নাম্বার ওয়ান কিলার ডিজিস। এত হাইটেক/ উন্নত চিকিৎসাব্যবস্থা, তারপরও শতকরা ৫০ জন মারা যায় হৃদরোগে।
এদিকে এনজিওপ্লাস্টি/ বাইপাস করলে যে আপনি ভালো হয়ে যাবেন তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আবারো আর্টারি ব্লকড হতে পারে। এবং যুক্তরাষ্ট্রে এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল চিকিৎসা। ১৯৯৩ সালেই ছিল ১৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার ডলার। তারা উদ্বুদ্ধ করলো-ডীন অরনিশের প্রোগ্রামে যাও। রোগীরা বলল, যদি ভালো না হই? তারা বলল, যদি ভালো না হও অপারেশন করাব, পয়সা আমরা দেবো।
২০০ জনের মধ্যে ১৯০ জন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ অব্যাহত রাখলেন। আর ১৯০ জনের মধ্যে ১৮৯ জন ভালো হয়ে গেলেন। একজনকে শুধু অপারেশন করার প্রয়োজন হয়েছিল। এটি নিউজউইক জুলাই ২৪, ১৯৯৫ সংখ্যার রিপোর্ট। হৃদরোগ নিরাময়ে মেডিটেশনকে আর বিকল্প চিকিৎসা বলা হয় না। এটি চিকিৎসার মূলধারায় প্রবেশ করেছে।
সে কারণেই বিশ্বজুড়ে কার্ডিওলজির মেডিকেল টেক্সটবইগুলোতে মিলছে তারই স্বীকৃতি। ‘Heart Disease : A Textbook of Cardiovascular Medicine’- Eugene MD-Braunwald’s -এর লেখা এ বইটি বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ হৃদরোগ চিকিৎসা শিক্ষার্থীর নিত্যদিনের পাঠ্যবই। এই বইয়ের ৮ম সংস্করণের পৃষ্ঠা ১১৫৭-তে বলা হয়েছে, ‘মেডিটেশন, যোগব্যায়াম এবং দমচর্চার এক সমন্বিত পদ্ধতিতে স্ট্রেসমুক্তি বা ব্যথা নিরাময়ের উপকরণ আছে মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন পদ্ধতিতে।
অনেকগুলো গবেষণার ফলাফলের একটা মেটা-এনালিসিসে দেখা গেছে মেডিটেশন চর্চা করে বহু মানুষ স্ট্রেস থেকে, অনেক ধরনের রোগ থেকে নিরাময় লাভ করেছেন…. শুধু ব্লাডপ্রেশার কমানোই নয়, দেহে ইনসুলিনের মাত্রাকে স্বাভাবিক করা এবং হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে মেডিটেশনের চমৎকার ফলাফল দেখা গেছে।’
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রখ্যাত গবেষক এবং বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতায় সংকলিত আরেকটি টেক্সট বই হলো Hurst`s: The Heart. এ বইয়ের ১২ তম সংস্করণে বলা হয়েছে, ‘মেডিটেশন চর্চা করে অনেকেই তাদের জীবনে প্রশান্তি, সুস্বাস্থ্য এবং ভালো থাকার অনুভূতি লাভ করেছেন। এমনকি এনজাইনা নামক যে ভীতিকর বুকে ব্যথা বহু হৃদরোগীর দৈনন্দিন আতঙ্কের বিষয়, তা থেকেও মুক্তি মিলেছে মেডিটেশন চর্চা করে। শুধু তা-ই নয়, এথেরোরিগ্রেশনের মতো অসাধারণ ফলও পাওয়া গেছে এর মাধ্যমে। ফলে এখন শুধু হৃদরোগ প্রতিরোধই নয়, হৃদরোগ নিরাময়ের জন্যেও মেডিটেশন একটি পরীক্ষিত এবং স্বীকৃত পদ্ধতি।’
কাজেই সেদিন খুব বেশি দূরে নয়, যখন কার্ডিওলজির ছাত্রছাত্রীদের পাঠ্যক্রমেরই একটি অংশ হবে-কীভাবে মেডিটেশন করতে হয়, তা নিজে শেখা ও রোগীদেরকে শেখানো।
কোয়ান্টামে এসেও গত ২০ বছরে হৃদরোগ প্রতিরোধ ও তা থেকে নিরাময় লাভ করেছেন শত শত মানুষ। বাইপাস অপারেশন না করিয়েও দিব্যি ভালো আছেন ১৮ বছর ধরে। আর অপারেশন করার পর এলেও তারা ফিরে পেয়েছেন কর্মোদ্দীপনাময় স্বচ্ছন্দ জীবন। গড়ে ওঠেছে এনজিওপ্লাস্টি ও বাইপাস ছাড়া হৃদরোগ প্রতিরোধ ও নিরাময় প্রকল্প। দু’দিনব্যাপী ওরিয়েন্টেশনের পর এ ক্লাবের নিয়মিত ফলোআপ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হয়ে শত শত মানুষ এখন সুস্থ দেহ প্রশান্ত মন কর্মব্যস্ত দীর্ঘজীবনের মন্ত্রে উজ্জীবিত।
তথ্যসূত্রঃ প্রশ্নোত্তর | কোয়ান্টাম মেথড
Related Posts
Q&A Series – Episode 292: Failure is the pillar of success!
Q&A Series – Episode 291: What exactly is visualization?
Q&A Series – Episode 290: How does visualization work?