প্রশ্নঃ অনেকদিন ধরে ব্যবসা করছি। প্রথমদিকে ভালো চললেও এখন অবস্থা খুব খারাপ। পরিচিতদের কাছ থেকে ধার আগেই করেছি। এখন ভেবেছিলাম ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আবার শুরু করব। কিন্তু আপনার কথা শুনে ভয় পাচ্ছি। এখন কী করা উচিত বুঝতে পারছি না।
উত্তরঃ আপনাকে একটা উদাহরণ দেই। পপতারকা মাইকেল জ্যাকসন ২০১০ সালে মারা যান। এই শিল্পীর মৃত্যুর কারণ প্রোপানোলল এবং লোরাযেপামের মতো ওষুধের ওভারডোজ, যেগুলো তিনি সেবন করছিলেন ইনসমনিয়া থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কেন তার এ ওষুধগুলোর প্রয়োজন হলো? তার ইনসমনিয়ার কারণ কী? জ্যাকসনের সাম্প্রতিককালের বন্ধু এবং সমবয়সী ইনক্রেডিবল হাল্কের অভিনেতা লাও ফেরিগনো সরাসরি বলেছেন, এসবের নেপথ্যে রয়েছে জ্যাকসনের বিশাল অঙ্কের ঋণ এবং এ থেকে সৃষ্ট মানসিক চাপ।
মাইকেল জ্যাকসনকে কেন ঋণ নিতে হয়েছে? তার অবস্থা কি খারাপ ছিল? শুধু আমেরিকাতেই তার এলবাম বিক্রি হয়েছে ৬১ মিলিয়নের ওপরে। শুধু ক্যাসেট বিক্রি থেকেই তার আয় হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি ডলার অর্থাৎ আমাদের দেশি টাকায় সাত হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এতকিছুর পরও মৃত্যুর সময় তার ঋণের পরিমাণ ছিল ৪০ কোটি ডলার অর্থাৎ ২,৮০০ কোটি টাকা। কারণ প্রতিবছরই তিনি ব্যয় করতেন তার আয়ের চেয়ে দুই/ তিন কোটি ডলার বেশি যা আমাদের টাকায় ২০০ কোটি টাকারও বেশি।
এসব নিয়ে মৃত্যুর আগের বছরগুলোতে তাকে বেশ কয়েকটি মামলার মুখোমুখি হতে হয়। বাহরাইনের রাজার দ্বিতীয় ছেলে আবদুল্লাহ বিন হামাদ আল খলিফা, যিনি একসময় জ্যাকসনকে প্রচুর অর্থ ধার দিয়েছিলেন এলবাম এবং আত্মজীবনীর জন্যে, পরবর্তীতে হতাশ হয়ে প্রায় ৫০ কোটি টাকার মামলা করেন জ্যাকসনের বিরুদ্ধে।
ঋণ পরিশোধ না করতে পারলে নেভারল্যান্ডসহ সমস্ত সম্পত্তি নিলামে উঠবে—এই আশঙ্কা থেকেই লন্ডনে কনসার্টের সিদ্ধান্ত নেন জ্যাকসন। আশা করছিলেন—এই কনসার্টের আয় থেকে ঋণ পরিশোধের টাকা উঠে আসবে। এজন্যে নিজের শরীরের ওপরও কম অত্যাচার করেন নি তিনি। কিন্তু এতসবের পরও শেষরক্ষা হয় নি। ঋণের চাপে বিলীন হয়ে গেলেন এই ক্ষণজন্মা শিল্পী।
এজন্যে আমরা সবসময় বলি, ঋণ কোনো সমাধান নয়। যদি ঋণ নিলেই পরিবর্তন আসত তাহলে কোটি কোটি টাকা ঋণ বা বিদেশি সাহায্য নেয়ার পর আমরা ‘সুপার পাওয়ার’ হয়ে যেতাম, ‘সুপার পুওর’ থাকতাম না। আসলে ঋণের বৃত্তে যে একবার প্রবেশ করে সে আর বের হতে পারে না। একবার জড়িয়ে পড়লে ঋণের পরিমাণ বাড়তেই থাকে—সেটা সামান্য কৃষিঋণই হোক, পণ্যঋণই হোক বা ব্যবসার জন্যে ব্যাংক থেকে নেয়া লাখ লাখ টাকাই হোক কিংবা বিদেশি সাহায্যের নামে দাতা সংস্থার অর্থ হোক।
আপনাকে এ কথাগুলো বলার উদ্দেশ্য হলো, ঋণের ভয়াবহতা বোঝানো। আপনি যে ভাবছেন, ঋণ নিলে অবস্থার উন্নতি হবে সেটা ঠিক নয়। যদি হাতে টাকা না থাকে তো কিছু মেশিন বা ফার্নিচার বিক্রি করে দিতে পারেন। অথবা অন্য কোনোভাবে চেষ্টা করুন। হয়তো সময় লাগবে, কিন্তু আপনি বিপদে পড়বেন না।
Related Posts
Q&A Series – Episode 292: Failure is the pillar of success!
Q&A Series – Episode 291: What exactly is visualization?
Q&A Series – Episode 290: How does visualization work?