প্রশ্নঃ ইনসমনিয়ায় ভুগছি, অনেক ডাক্তারের ওষুধ খেয়েছি কিন্তু তেমন কোনো উপকার পাই নি।
উত্তরঃ সাধারণভাবে “ইনসমনিয়া বা ঘুম না আসা” এর কারণ হচ্ছে ব্রেনের জাগৃতি কেন্দ্রকে পরিচালিত করে যে হরমোন তার নিঃসরণ মাত্রা হ্রাস না পাওয়া। হরমোন নিঃসরণ অব্যাহত রয়েছে, জাগৃতি কেন্দ্র সক্রিয় রয়েছে, আপনি জেগে থাকছেন। ঘুমানোর ইচ্ছা সত্ত্বেও ঘুম আসছে না। আরেকভাবে বলা যায়, ব্রেন কাজ করতে চাচ্ছে, আপনি ঘুমাতে চাইছেন। আর এই দ্বন্দ্বে ব্রেনের জাগৃতি কেন্দ্রই জয়ী হচ্ছে।
আর বর্তমানে এর মূল কারণ হচ্ছে ভার্চুয়াল ভাইরাস। সাম্প্রতিক সময়ে স্মার্টফোনসহ নানা ধরনের প্রযুক্তি পণ্যের সুবাদে অনলাইন বা ডিজিটাল সময় কাটানোর যে অসুস্থ প্রবণতা বা আসক্তি মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে তাকেই এককথায় বলা যেতে পারে ভার্চুয়াল আসক্তি। আর ইদানিং আমাদের দেশের যে এক চতুর্থাংশ মানুষ অনিদ্রায় আক্রান্ত, তার একটা বড় কারণই ভার্চুয়াল ভাইরাস। গভীর রাত পর্যন্ত জেগে জেগে এসব দেখার ফলে তাদের রাতে গভীর ঘুম হয় না, হাল্কা ঘুম হয়, ঘুমের মধ্যেও একটু পর পর জেগে ওঠেন। আর কেউ কেউ তো আবার রাতে ঘুমান না, দিনে ঘুমান।
আমরা যারা স্মার্টফোন ব্যবহার করি, তাদের কী হয়? দিনের মধ্যে অসংখ্যবার একটু পর পর আমরা দেখে নিচ্ছি কোনো মেসেজ এলো কি না, যদিও আমরা জানি, আমাদের ফোনে আসা শতকরা ৭০ ভাগ মেসেজ অপ্রয়োজনীয়। এটা একটা নেশা।এমনকি যখন আমরা ঘুমাতে যাচ্ছি তখনো মস্তিষ্কের ভেতরে চলতে থাকে এই প্রবণতা। যেমন, আমরা অনেকেই ঘুমানোর আগে ফোন সাইলেন্ট মোডে রাখি যেন ভালোভাবে ঘুমাতে পারি। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, ফোন সাইলেন্ট মোডে রাখলে আওয়াজ হচ্ছে না বটে কিন্তু আলো তো জ্বলে উঠছে, সেইসাথে মোবাইল রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি রেডিয়েশন তো আছেই। ফলে চোখ বন্ধ থাকলেও কল বা মেসেজ আসার সাথে সাথে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই হয়তো চোখ খুলে যাচ্ছে। আর এভাবেই নষ্ট হচ্ছে ঘুমের গভীরতা। আসলে আমরা স্মার্টফোনের ওপর এত বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি যে, আমাদের নিয়ন্ত্রণ আর আমাদের হাতে নেই। আমাদের নিয়ন্ত্রণ করছে এই স্মার্টফোন বা শয়তানের ছোট বাক্স।
এরপর তো আছে টিভি সিরিয়াল।এই টিভি সিরিয়ালগুলোর মূল বিষয়ই হচ্ছে চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র আর পরকীয়া। আপনি যখন এসব দেখছেন, আপনার নার্ভাস সিস্টেম তো এটাকেই বাস্তব মনে করছে এবং সে টেন্সড হয়ে যাচ্ছে। আর একবার যখন নার্ভ টেন্সড হয়ে যায় এটা স্বাভাবিক অবস্থায় আসতে সময় লাগে দেড় ঘন্টা। কাজেই আপনি যদি রাত ১ টায় টিভি সিরিয়াল শেষ করেন, রাত আড়াইটার আগে আপনি ঘুমাতে পারবেন না। আপনার ঘুমের সমস্যা হবেই।
এজন্যে রাতে ভালো ঘুমাতে চাইলে রাত ১১টায় সব ইলেক্ট্রোনিক ডিভাইস বন্ধ করে দেবেন। কাজ থাকলে ভোরে উঠে করেন, কিন্তু রাত জেগে নয়। জীবন থেকে গভীর ঘুমের পথে অন্তরায়গুলোকে আস্তে আস্তে দূর করে দিন।আসলে প্রযুক্তি পণ্য শুধু প্রয়োজনে ব্যবহার করবেন। আমরা প্রযুক্তি পণ্যের বিপক্ষে নই। আমরা প্রযুক্তিপণ্য আসক্তির বিপক্ষে।
আর ব্রেনের জাগৃতি কেন্দ্রকে পরিচালিত করে যে হরমোন তার নিঃসরণ মাত্রা কিভাবে হ্রাস করা যায় এর জবাব লেখা আছে আলিফ লায়লায়, সেই আলাদীনের গল্পে। গল্পে আছে আলাদীন যখন চেরাগ ঘষে দৈত্যকে নিয়ে আসে, তখন দৈত্য শর্ত দিয়েছিল, তাকে সারাক্ষণ কাজ দিতে হবে। কাজ দিতে না পারলে সে আলাদীনের ঘাড় মটকাবে। আলাদীন তাকে যে কাজ দেয়, দৈত্য তা সাথে সাথে সম্পন্ন করে। আলাদীন পড়ল মহাফাঁপড়ে। এখন উপায়! দৌড়ে সে মায়ের কাছে গেল। মা তাকে বুদ্ধি বলে দিলেন। একটা কুকুর হাতে দিয়ে বললেন, দৈত্যকে বলো এই কুকুরের লেজ সোজা করে দিতে, কিন্তু লেজ যেন না ভাঙে। তারপরের ঘটনা আপনি জানেন। দৈত্য আলাদীনের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল। অনিদ্রার দৈত্যকেও আপনি ইচ্ছা করলে এভাবে বশে আনতে পারেন অনায়াসে। ব্রেনকে এমন কাজ দিন যা অর্থহীন, একঘেয়ে, সমাপ্ত হওয়ার মতো নয়। দেহ-মন ক্লান্ত হয়ে আসবে। হরমোন নিঃসরণ কমে যাওয়ায় জাগৃতি কেন্দ্র অচল হয়ে যাবে। আপনি ঘুমিয়ে পড়বেন। মনোবিজ্ঞানীরা সারাবিশ্বে এখন ওষুধের পরিবর্তে অনিদ্রার দৈত্যকে এই প্রক্রিয়ায় বশ করছেন। আপনিও প্রয়োজনে তা করতে পারেন।
এই প্রক্রিয়া শেখার জন্যে আপনি কোয়ান্টাম মেথড বই থেকে ‘আয় ঘুম আয়’ টেকনিক শিখতে পারেন। এ-ছাড়া হাজার হাজার মানুষ অনিদ্রা বা ইনসমনিয়া থেকে মুক্তির জন্যে কোয়ান্টাম মেথড কোর্সে অংশগ্রহণ করেছেন। তারা কোর্সের দ্বিতীয়দিন থেকে ঘুমের ওষুধ ছাড়াই চমৎকার ঘুমাতে পারছেন। নিয়মিত মেডিটেশন চর্চায় তারা চিরতরে বিদায় জানিয়েছেন অনিদ্রাকে।
এর সাথে আপনি কোয়ান্টাম ইয়োগা চর্চা করতে পারেন। কারণ কোয়ান্টাম ইয়োগার কিছু নির্দিষ্ট আসন করার ফলে মস্তিষ্কের ঘুম নিয়ন্ত্রণকারী অংশে রক্ত চলাচল নিয়মিত ও সচল হয়। ফলে ঘুম স্বাভাবিক হয়। কোয়ান্টাম ইয়োগা শরীরের সমস্ত পেশি-অস্থি ও গ্রন্থিতে আরামদায়ক অনুভূতি সৃষ্টি করে বলে ঘুম হয় চমৎকার।
কিন্তু অনিদ্রা বা ঘুম না আসার কারণ যদি মানসিক সমস্যা হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
তথ্যসূত্রঃ প্রশ্নোত্তর | কোয়ান্টাম মেথড