প্রশ্নঃ আমি অন্যদের সাথে মিলেমিশে থাকতে চাই। কিন্তু দেখা যায়, ছোটখাটো বিষয় নিয়ে প্রায়ই ভুল বোঝাবুঝি হয়। সমস্যাটা কোথায় আমি বুঝি না। এদিকে পরবর্তী বেশ কিছুটা সময় বিষয়টি নিয়ে ভারাক্রান্ত থাকি।
উত্তরঃ আসলে সমস্যাকে শনাক্ত করতে পারা সমাধানের অর্ধেক। আর মনোজাগতিক ক্ষেত্রে সমস্যাকে শনাক্ত করতে পারা হচ্ছে, সমাধানের ৯০ ভাগ। বাকি ১০ ভাগ হচ্ছে সচেতন থাকা, অভ্যাসটা শুধরে নেয়া আর কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে সেই সময়টাকে পার হতে দেয়া, অর্থাৎ নীরব থাকা।
ভুল বোঝাবুঝির একটি বড় কারণ হলো, সমস্যাটির জন্যে যে আমারও কিছু দায় আছে, সেটা বুঝতে না পারা। আমরা মনে করি, সমস্যাটি অপর পক্ষের কারণে হয়েছে। আমি ঠিক আছি। আমার প্রতি অন্যায়, অবিচার করা হয়েছে। আমাকে কেন বুঝল না। সাধারণত পরিবারের সদস্য, প্রিয়জন এবং ঘনিষ্ঠদের মধ্যেই এ জটিলতা হয়।
অর্থাৎ দুপক্ষই আশা করে, অন্যপক্ষ তাকে বুঝবে। কিন্তু বোঝার জন্যে প্রথম উদ্যোগ যে তিনিই নিতে পারেন, সেটা তিনি মনে করেন না। ফলে যা হওয়ার তা-ই হয়। কেউ কাউকে বুঝতে চায় না। তখন সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়। শক্তিশালী পক্ষ হয়তো অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রতিপক্ষের ওপর কর্তৃত্ব করেন। যেমন, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে স্বামী যদি রগচটা হন, স্ত্রী তখন মেনে নেন যে, এটাই আমার কপাল। এটা আমার দুর্ভাগ্য।
আর স্ত্রী মেজাজী হলে স্বামী তখন আপসের মনোভাব গ্রহণ করেন। ঝামেলা-ঝঞ্ঝাটকে পরিহার করেন। চীনা দার্শনিক কনফুসিয়াস খুব সুন্দরভাবে বলেছিলেন, মানুষ বিতর্কে জড়িয়ে প্রথম যে ভুলটা করে তা হলো তার বুদ্ধিকে সে ব্যবহার করে বিতর্ক জয়ের জন্যে, এড়ানোর জন্যে নয়। কাজেই পারিবারিক ক্ষেত্রে এবং জীবনের যে-কোনো ক্ষেত্রে বুদ্ধিমানের কাজ হবে বিতর্ক এড়ানো। কারণ যে বিরোধে হার হবে, সে বিরোধে যাওয়ারই বা দরকার কী?
পারস্পরিক সম্পর্কের জটিলতা নিরসনের সবচেয়ে কার্যকর সমাধান হলো নিজের ভুল খুঁজে বের করা এবং অপরপক্ষের অবস্থান থেকে ভাবা, তাকে বোঝার চেষ্টা করা। কারণ আপনি নিজে যা করেন না, অপরপক্ষের কাছ থেকে আপনি সেটা আশাও করতে পারেন না।
আর যখন আপনি অপরপক্ষকে ভুল বলে ধরে নিচ্ছেন, তখন আপনার মনে হচ্ছে, ভুল বোঝাবুঝি দূর করার দায়িত্বও তার। কিন্তু যদি ভাবতেন, আপনি তাকে বোঝাতে পারেন নি বলে সে ভুল বুঝেছে, তখন দায়িত্বটা আপনি নিতেন। তখন দেখা যেত, আপনিই সমাধানের জন্যে এগিয়ে যাচ্ছেন এবং সমাধানও হচ্ছে খুব সহজেই।
তথ্যসূত্রঃ প্রশ্নোত্তর | কোয়ান্টাম মেথড