প্রশ্নঃ প্রেম বা প্রেমের বিয়েকে আপনি সাফল্যের প্রধান অন্তরায় বলেছেন। কিন্তু অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ বা পারিবারিক সম্মতির বিয়েতে মা-বাবা সবসময় ছেলের পরিবার ও যোগ্যতা ইত্যাদি দেখে। তারা এটা কখনো বুঝতে চেষ্টা করে না, আদৌ ছেলের সাথে মেয়েটির এডজাস্টমেন্ট বা মিল হবে কিনা, যেটা একজন মানুষের সাথে কিছুদিন চললে বোঝা যায়। এ-ক্ষেত্রে মেয়েটির ভাগ্যের ওপর সবকিছু ছেড়ে দেয়া ছাড়া কিছু কি করার আছে? আপনার দৃষ্টিভঙ্গি জানতে চাই।
উত্তরঃ ‘প্রেম বা প্রেমের বিয়েকে আমরা সাফল্যের প্রধান অন্তরায়’ বলি নি। আমরা যেটাকে অপছন্দ করি, সেটা হচ্ছে শিক্ষার্থী জীবনে প্রেম। কারণ মা-বাবা আপনাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে, কলেজে পাঠাচ্ছেন-প্রেম করার জন্যে নয়, জ্ঞান অর্জনের জন্যে । কিন্তু আপনি ক্লাস, পড়াশোনা বাদ দিয়ে ফুচকা খাচ্ছেন, সিনেমা দেখছেন, এখানে-সেখানে ঘুরছেন; পড়াশোনার দিকে তখন আর আপনার মন থাকছে না।
আর অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ অথবা পারিবারিক সম্মতির বিয়ে, এ-ক্ষেত্রে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি খুব পরিষ্কার। বিয়ের ব্যাপারে ছেলে/ মেয়ের পছন্দ হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এটা হচ্ছে প্রথম পয়েন্ট। কারণ মা-বাবার মত অবশ্যই দেবেন। কিন্তু সবকিছু তারা ঠিক করে দেবেন, এটা আমরা সমর্থন করি না। ঘর করবেন আপনারা। পারিবারিক সম্মতির পাশাপাশি তাই আপনাদের দুজনের পারস্পরিক পছন্দও খুব গুরুত্বপূর্ণ!
দ্বিতীয় পয়েন্ট হচ্ছে সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলটা সমান হতে হবে। হয়তো মেয়ে বোরখা পরে, ছেলে নাট্যকর্মী। দুজনের সামাজিক স্তর যদি সমানও হয় সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল ভিন্ন হওয়ার কারণে তারা তো বিয়ের পরদিনই চাইবেন যে, মেয়ে বোরখা ছাড়ুক। তাই এখানে গিয়ে স্বাভাবিকভাবেই মেয়েটি মানিয়ে নিতে পারবে না।
আর কিছুদিন সাথে চললে পরস্পরকে চেনা যায়, এটাও ভুল ধারণা। কারণ প্রেমের সম্পর্ক হচ্ছে মেকি সম্পর্ক। শুধু একজন আরেকজনকে খুশি করার, প্রশংসা করার সম্পর্ক। এই সম্পর্কে কোনো দায়-দায়িত্ব নেই। আপনি ছয় মাস হোটেলে হোটেলে থাকুন, ভালো ভালো রেস্টুরেন্টে খাওয়াদাওয়া করুন, দেখুন চিনতে পারেন কিনা। পারবেন না। কারণ ঐ সম্পর্কটা হচ্ছে মেকি সম্পর্ক। যদি তা না হতো, তাহলে ইউরোপ আমেরিকার বিয়েগুলো এত ডেটিংয়ের পরেও ভেঙে যেত না। আর এখন তো তারা বিয়েই করে না। একসাথে থাকে। যখন মতের মিল হলো না, ব্যস দুজন দুদিকে বেরিয়ে গেল। আরো ঠুনকো আরো অস্থির হয়ে গেছে তাদের সম্পর্ক!
আমাদের দেশেও প্রেমের বিয়ের একটা বড় অংশ ব্যর্থ হয় এবং ভেঙে যায়। কারণ প্রেমের সম্পর্ক হলো পরস্পর পরস্পরকে তেল দেয়া। কিন্তু বিয়ে হচ্ছে পারস্পরিক দায়িত্ব-কর্তব্যের এবং এটা সারাজীবনের সম্পর্ক। প্রেম মানে হচ্ছে ফুচকা আর ফাস্টফুডের দোকান। কিন্তু বিয়ের পরে তো ফুড তৈরি করতে হয়। তখন শুরু হয় সমস্যা। মনে হবে, ‘আরে, বিয়ের আগে এত সুন্দর করে কথা বলত! এখন দেখি ধমক দিয়ে বলছে, এখনো নাশতা রেডি হয় নি?’ ব্যস, অশান্তির শুরু। কারণ যতক্ষণ পর্যন্ত দায়িত্বের মুখোমুখি না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত আসলে কেউ কাউকে চিনতে পারে না।
অতএব ঘোরাঘুরি করলেই হবু স্ত্রীকে বা স্বামীকে আপনি জানতে পারবেন, এই ধারণা বাদ দিন। এক্ষেত্রে নিজের প্রজ্ঞা বা সিক্সথ সেন্সকে বরং গুরুত্ব দিন। অন্তরকে জিজ্ঞেস করুন, ছেলেটি বা মেয়েটি কেমন হবে আমার জন্যে? আর কিছু এডজাস্টমেন্ট তো করতেই হবে।
বিয়ের ব্যাপারে সহজ ফর্মুলা হচ্ছে, প্রত্যেকেরই পজেটিভ এবং নেগেটিভ কিছু পয়েন্ট থাকে। আপনি যদি মেয়ে হন, ছেলের পজেটিভ এবং নেগেটিভ পয়েন্টগুলো নোট করুন এবং দেখুন আপনার পজেটিভ পয়েন্ট ও নেগেটিভ পয়েন্ট কী কী? দেখুন কতটা ম্যাচ হয়। যদি ৬০/৭০ ভাগ মিলে যায়, বাকিটা নিয়ে আর খুঁতখুঁত না করাই ভালো। সেটুকুকে মেনে নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। কারণ বিয়ের পুরো ব্যাপারটাই হচ্ছে এডজাস্টমেন্ট। যদি মতের এবং চিন্তার মিল থাকে, এডজাস্টমেন্ট তুলনামূলক সহজে হয়।
তথ্যসূত্রঃ প্রশ্নোত্তর | কোয়ান্টাম মেথড