প্রশ্নঃ আমার সবসময় মনে হয় আমি ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাব। আমি কোনোভাবেই এটা ভুলতে পারছি না। এ দুশ্চিন্তা থেকে আমি কীভাবে মুক্তি পাব?
উত্তরঃ এটা তো সত্য যে, আপনি মারা যাবেন। রোগকে ভয় পান আর না পান, আপনি মারা যাবেনই। যেহেতু আপনি মারা যাবেনই, তো আপনার ভয় পাওয়ার দরকারটা কী? মৃত্যুভয়ের চেয়ে অলীক ভয় আর কিছু নেই। আমরা সবসময় আতঙ্কিত থাকি, যদি মারা যাই! ভাবখানা এমন যে, আমার আগে কেউ মারা যায় নি। আমিই প্রথম মারা যাব।
অথচ বাস্তব সত্য হচ্ছে পৃথিবীতে আসার পর আপনার জীবনে যদি একটি মাত্র সত্য থাকে তবে তা হচ্ছে মৃত্যু। আপনি যত ভালো কাজ করেন না কেন আপনি মারা যাবেন। যেমন নবী-রসুল, দরবেশ, মুনি-ঋষি, ধর্মবেত্তা সবারই দৈহিক মৃত্যু হয়েছে। আবার সবচেয়ে খারাপ কাজ যারা করেছে, জুলুম করেছে, অত্যাচার করেছে, মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচার জন্যে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরি করেছে, তারাও মৃত্যুর হাত থেকে রেহাই পায় নি। লৌহ যবনিকার মাঝেই স্টালিন মারা গেছেন। সিআইএ বা এফবিআই কেনেডিকে বাঁচাতে পারে নি। হিটলার এটম বোমাপ্রুফ বাংকারে আত্মহত্যা করে ভবলীলা সাঙ্গ করেছেন। আসলে মৃত্যু জীবনের অবধারিত সত্য। তাই মৃত্যুকে ভয় পাওয়া বোকামি মাত্র।
মৃত্যুভয় নিয়ে সুন্দরবনের বিখ্যাত বাঘ শিকারী পচাব্দি গাজীর চমৎকার এক গল্প রয়েছে। ৫৭ টি বাঘ শিকারকারী পচাব্দি গাজীর বাবা ও দাদাও ছিলেন বাঘ শিকারী। পৃথিবীর সর্বাধিক সংখ্যক বাঘ শিকারকারী পচাব্দি গাজীর এক বন্ধু একদিন বলল, পচা, তোর বাঘকে ভয় করে না। জবাবে পচাব্দি বললেন, না। বন্ধু আবার বলল, তোর বাবাকে তো বাঘে খেয়েছে! তারপরও তোর বাঘকে ভয় করে না? পচাব্দির জবাব, না। বন্ধু আবার বলল, তোর দাদাকেও তো বাঘে খেয়েছে। তারপরও তোর বাঘকে ভয় করে না? পচাব্দির সেই একই জবাব, না।
এবার পচাব্দির পালা। পচাব্দি তার বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলেন, তোর বাবা কীভাবে মারা গেছে? বন্ধুর জবাব, রাতে বিছানায় শুয়ে ছিলেন। সকালবেলা সবাই দেখল তিনি মারা গেছেন। তোর দাদা? পচাব্দি জানতে চাইলেন। দাদাও রাতে বিছানায় শুয়ে ছিলেন। সকালবেলা সবাই দেখলো তিনি মারা গেছেন, বন্ধু জানাল। এরপর মুচকি হেসে পচাব্দি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুই কি এখনও রাতে বিছানায় ঘুমাস! বিছানাকে তোর ভয় করে না?
অর্থাৎ বাঘের হাতে মৃত্যু আসুক বা বিছানায় শুয়ে, মারা আপনি যাবেনই। মৃত্যু জীবনের অবধারিত সত্য। তবে যদি আপনি মৃত্যুকে ভয় পান তবে প্রতিদিন আপনি নব নবভাবে মৃত্যুযন্ত্রণা ভোগ করবেন। আর মৃত্যুকে ভয় না পেলে আপনি শুধু একবারই মারা যাবেন। সেই জন্যেই বলা হয়, বীরের মৃত্যু একবার আর ভীরু মরে হাজারবার।
তথ্যসূত্রঃ প্রশ্নোত্তর | কোয়ান্টাম মেথড