প্রশ্নঃ কোনো একটা লক্ষ্য স্থির করে যখন এগুতে শুরু করি তখন বার বার বিক্ষিপ্ত হই। লক্ষ্যচ্যুত হই। কী করবো?
উত্তরঃ এখানেই সফল আর অসফলদের পার্থক্য। যারা সফল তারা কখনো বিশ্বাস হারায় না। তারা কখনো লক্ষ্যচ্যুত হয় না। বরং শত বাধা-বিপত্তিতেও তারা অবিচল থাকে তাদের লক্ষ্যে। কবিগুরুর একটা বিখ্যাত কাব্যনাট্য ‘কচ ও দেবযানী’।
এটা যে সময়ের কাহিনী তখন ত্রিভুবন দখল নিয়ে দেবতা আর অসুরদের মধ্যে লড়াই চলছিলো। ইন্দ্রপুরীতে ছিলেন দেবতাদের পরম পূজনীয় আচার্য বৃহস্পতি। আর অসুর সাম্রাজ্যে ছিলেন শুক্রাচার্য যার আবিষ্কৃত মৃতসঞ্জীবনী মন্ত্রের গুণে অসুরেরা হয়ে উঠেছিলো অদম্য। কারণ এ দিয়ে মৃতকে জীবিত করে তোলা যেত। দেবতারা বৃহস্পতিপুত্র কচকে অনুরোধ করলো, সে যাতে শুক্রাচার্যের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে মৃতসঞ্জীবনীর গুপ্তবিদ্যা আয়ত্ত করার চেষ্টা চালায়। কচ রাজী হলো এবং চলে গেল অসুররাজ্যের রাজধানীতে। শুক্রাচার্যের গৃহে বিদ্যাশিক্ষা করতে লাগলো আর সেই সময়ের রীতি অনুযায়ী গুরুগৃহের দৈনন্দিন কাজে সাহায্য করতো। কালক্রমে সদালাপী বিচক্ষণ বুদ্ধিমান চৌকস কচ পরিণত হলো শুক্রাচার্যের অন্যতম প্রিয় শিষ্যে।
তবে শুধু শুক্রাচার্য নয়, তার কন্যা দেবযানীর মনও জয় করে নিলো কচ। কচের সুমধুর সংগীত আর অপূর্ব চিত্রকলার প্রতি দেবযানীর মুগ্ধতা একসময় কচের প্রতি ভালবাসায় রূপান্তরিত হলো। কচের ব্যবহারেও দেবযানীর প্রতি অনুরক্ততা প্রকাশ পেতো। তবে তা ছিলো গুরুকন্যার প্রতি কচের স্রেফ শ্রদ্ধাভক্তিরই নিদর্শন-যাকে দেবযানী অনুরাগ ভেবে ভুল করেছিলো। দেবযানী অপেক্ষা করছিলো কচের শিক্ষাজীবন তথা ব্রহ্মচর্য শেষ হওয়ার। কিন্তু সমস্যা হলো, অসুরেরা ইন্দ্রপুরবাসী কচের অসুররাজ্যে আগমনকে ভালোভাবে নেয় নি। তারা আশঙ্কা করলো, কচ হয়তো মৃতসঞ্জীবনী মন্ত্রের খোঁজে এখানে এসেছে। পর পর তিনবার তারা কচকে হত্যা করলো। কিন্তু প্রতিবারই বাবার মৃতসঞ্জীবনীর গুপ্তবিদ্যার সহযোগিতায় কচকে বাঁচিয়ে তুলতো দেবযানী। ইতোমধ্যে কচের বিদ্যাশিক্ষা সমাপ্ত হলো।
শুক্রাচার্য নিশ্চিত ছিলেন যে, কচ দেবযানীকে বিয়ে করে অসুররাজ্যে থেকে যাবে। কিন্তু কচ জানালো যে, সে ইন্দ্রপুরীতে ফিরে যাবে। গুরুর কাছে এলো বিদায়ী আশীর্বাদ নেয়ার জন্যে। শুনে দেবযানী তো অস্থির। সে কচকে তার ভালবাসার কথা জানালো এবং বিয়ে করতে চাইলো। কিন্তু কচ তার সিদ্ধান্তে অটল-সে ফিরে যাবেই। দেবযানী নানাভাবে বোঝাতে লাগলো, আবেগ দিয়ে দুর্বল করতে চাইলো। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না দেখে শেষমেশ ক্রুদ্ধ হয়ে উঠলো। অভিশাপ দিলো, ‘যে বিদ্যার তরে মোরে কর অবহেলা, সে বিদ্যা তোমার সম্পূর্ণ হবে না বশ। শিখাইবে কিন্তু পারিবে না করিতে প্রয়োগ। তুমি শুধু ভার বয়ে যাবে’।
অর্থাৎ এই মৃতসঞ্জীবনী বিদ্যা অন্যকে শেখাতে পারলেও কচ নিজে কখনো এটা ব্যবহার করে কাউকে জীবিত করতে পারবে না। কিন্তু এত বড় অভিশাপ পেয়েও কচ এতটুকু দমে গেল না। সে বরং দেবযানীকে বললো, ‘আমি বর দিনু দেবী তুমি সুখী হবে। ভুলে যাবে সকল গ্লানি বিপুল গৌরবে’। এভাবেই দেবযানীর ভালবাসা উপেক্ষা করে কচ চলে গিয়েছিলো ইন্দ্রপুরীতে তার কর্তব্য পালনে। অর্থাৎ আপনার লক্ষ্য অর্জনের পথে যে বাধাই আসুক, যে প্রলোভনই আসুক-লক্ষ্যে আপনাকে অটল থাকতে হবে। আপনার মনছবি থেকে আপনাকে কেউ যেন টলাতে না পারে। আপনি আপনার লক্ষ্যে পৌঁছবেনই।
তথ্যসূত্রঃ প্রশ্নোত্তর | কোয়ান্টাম মেথড
Related Posts
Q&A Series – Episode 292: Failure is the pillar of success!
Q&A Series – Episode 291: What exactly is visualization?
Q&A Series – Episode 290: How does visualization work?