প্রশ্নঃ পেশাগত সাফল্যের জন্যে কোয়ান্টাম মেথড কি কার্যকর?
উত্তরঃ পেশাগত সাফল্যের জন্যে মেডিটেশনের ইতিবাচক ভূমিকা সম্পর্কে এখন আর কোনো সন্দেহ নেই। মেডিটেশনকে কাজে লাগিয়ে অসাধারণ সাফল্য লাভ করছে বিশ্বব্যাপী অসংখ্য কোম্পানি ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। যাদের মধ্যে রয়েছে তোশিবা, সনি, টয়োটা, সুমিতমো, ভলভো, জেনারেল মটরস বা আইবিএম-এর মতো বিশ্বখ্যাত কোম্পানি। জেনারেল মটরস ঘোষণা করেছে, তাদের যেসব কর্মী মেডিটেশন কোর্সে অংশ নিতে আগ্রহী, তাদের ব্যয়ভার কোম্পানি বহন করবে। কর্মীদের মেডিটেশন শেখানোর জন্যে কোরিয়ার স্যামসাং শিল্পগোষ্ঠী রাজধানী সিউলের দক্ষিণে ১৭ একর জায়গা জুড়ে গড়ে তুলেছে এক বিশাল প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।
পেশাগত ক্ষেত্রে মেডিটেশনের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক গবেষণা হয়েছে। এসব গবেষণায় দেখা গেছে, কোম্পানিতে মেডিটেশন চালু করার ফলে কর্মীদের টেনশন অস্থিরতা অবসাদ ও অনিদ্রা কমেছে, ধূমপান ও নেশার আসক্তি কমেছে এবং দক্ষতা কর্মসন্তুষ্টি ও পারস্পরিক সম্পর্কোন্নয়ন বেড়েছে লক্ষণীয় মাত্রায়। যে কর্মীরা সৃজনশীল বুদ্ধিমান সুস্থ এবং প্রাণবন্ত- স্বাভাবিকভাবে তারাই বেশি কাজ করতে পারে। তখন উৎপাদনক্ষমতা বাড়ে, অনুপস্থিতির হার কমে এবং দলগতভাবে কাজ করার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
জবস্ট্রেস আধুনিক ব্যাবসা জগতের প্রধান চ্যালেঞ্জ। ১৯৯৩ সালে আন্তর্জাতিক শ্রমসংস্থা বা আইএলও-এর একটি রিপোর্ট অনুযায়ী জবস্ট্রেসের কারণে আমেরিকায় প্রতিবছর ২০০ বিলিয়ন ডলার অপচয় হয়। অলটারনেটিভ থেরাপি জার্নালের ১৯৯৬-এর একটি সংখ্যায় বলা হয়, শতকরা ৫৪ ভাগ ক্ষেত্রে কাজে অনুপস্থিতির কারণ হলো ক্রনিক ব্যথা, হাইপারটেনশন এবং মাথাব্যথা। আর এ সবকটি সমস্যাই তৈরি হয় মানসিক চাপ ও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থেকে।
আর এখানেই মেডিটেশনের ভূমিকা। বিজনেস উইকের ‘কোম্পানিজ আর ব্যাটলিং এমপ্লয়িজ স্ট্রেস উইথ মেডিটেশন’ শীর্ষক এক রিপোর্টে বলা হয়, আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ, ম্যাসাচুসেটস্ ইউনিভার্সিটি এবং হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির একাধিক গবেষণা থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, মেডিটেশন মানুষের ব্রেনের তৎপরতা বাড়ায়, তার বুদ্ধিমত্তা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং মনোযোগের ক্ষমতাকে বাড়ায়।
অন্যদিকে কর্মীরা প্রায়ই আক্রান্ত হয়-এরকম নানা ধরনের ব্যথা-বেদনা দূর করতে সাহায্য করে মেডিটেশন। এসব কারণে পৃথিবীর বড় বড় কর্পোরেশনগুলো এখন তাদের কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করছে মেডিটেশনে। ব্যবস্থা করছে ফ্রি মেডিটেশন ক্লাসের। কারণ এতে যে খরচ হচ্ছে সে তুলনায় উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ছে অনেক বেশি। বলা যেতে পারে, পেশাগত উদ্বেগ নিরসনের সবচেয়ে কার্যকরী ও সাশ্রয়ী একটি উপায় হচ্ছে মেডিটেশন। শুধু পাশ্চাত্যই নয়, ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও নিয়মিত আয়োজিত হচ্ছে স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম।
বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। গত ২০ বছর ধরে কোয়ান্টাম মেথড কোর্সের প্রায় চার শত ব্যাচে অংশ নিয়েছেন শত শত পেশাজীবী ও শিল্প-বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। এদের মধ্যে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী ও ব্যাংকারসহ রয়েছেন বড় শিল্পগোষ্ঠীর চেয়ারম্যান, বহুজাতিক কোম্পানির সিইও থেকে শুরু করে অসংখ্য পাবলিক ও প্রাইভেট কোম্পানির এক্সিকিউটিভ এবং ব্যবসায়ী। মেডিটেশন চর্চা করে ব্যক্তিগত উন্নয়নের পাশাপাশি তারা পেয়েছেন পেশাগত উপকারও। এ নিয়ে এক গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে ‘ইনস্টিটিউট অফ কস্ট এন্ড ম্যানেজমেন্ট একাউন্টেন্টস অফ বাংলাদেশ’-এর জার্নাল ‘দি কস্ট এন্ড ম্যানেজমেন্ট’-এর নভেম্বর-ডিসেম্বর সংখ্যায়। ‘দি ইনফ্লুয়েন্স অফ এ মেডিটেশন-রিলাক্সেশন টেকনিক অন এক্সিকিউটিভ পারফরমেন্স’ শিরোনামের এ প্রবন্ধে কোয়ান্টাম মেথড কোর্সে অংশগ্রহণকারী ২০ জন শিল্পমালিক ও ব্যবস্থাপকের মেডিটেশন পরবর্তী অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা করা হয়।
এতে দেখা যায়, মেডিটেশনের ফলে মালিক ব্যবস্থাপকদের কাজে উৎসাহ এবং তৎপরতা বেড়ে গেছে। বস, সহকর্মী ও অধীনস্থদের সাথে সম্পর্কেও ঘটেছে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। নেতিবাচক আবেগ অর্থাৎ রাগ-ক্ষোভ-ঈর্ষাকে নিয়ন্ত্রণ করে তারা এখন আগের চেয়ে ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন। শারীরিক-মানসিকভাবেও তারা আগের চেয়ে সুস্থ ও প্রশান্ত।
সুত্রঃ প্রশ্নোত্তর | কোয়ান্টাম মেথড
Related Posts
Q&A Series – Episode 292: Failure is the pillar of success!
Q&A Series – Episode 291: What exactly is visualization?
Q&A Series – Episode 290: How does visualization work?