
প্রশ্নঃ আজকাল বিয়ের জন্যে পাত্র-পাত্রী বেছে নিতে ম্যারেজ মিডিয়ার দ্বারস্থ হন অনেকেই। এগুলো কি নির্ভরযোগ্য?
উত্তরঃ সবকিছুই নির্ভরযোগ্য যদি যাচাই করে নেন। আর কোনোকিছুই নির্ভরযোগ্য নয়, যদি যাচাই না করেন-যদি প্রজ্ঞা, বাস্তববুদ্ধি প্রয়োগ না করেন তাহলে আপনি প্রতারিত হবেন। ম্যারেজ মিডিয়ার নামে প্রতারণার যে নানা কৌশল চলছে, ২১ জুন, ২০১২-এর দৈনিক ইত্তেফাকের একটি অনুসন্ধানী রিপোর্টে উঠে এসেছে তার কিছু তথ্য-
‘ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশের প্রবাসী পাত্রীর পাত্র চাই। পছন্দ হলে পাত্রীর খরচে পাত্রকে বিদেশে নেয়া হবে। পাত্র বিপত্নীক হলেও সমস্যা নেই। যোগাযোগ করুন সরাসরি, মোবাইল নম্বর…।’ এভাবেই বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে চটকদার বিজ্ঞাপন ছেপে দেশের বেকার ও বিদেশ গমনেচ্ছুদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। এরপর বিবাহ-ইচ্ছুক পাত্র তাদের অফিসে এলে কথিত পাত্রীসহ তারা যেকোনো হোটেলে বসে কথাবার্তা চূড়ান্ত করে। লিখিত চুক্তি হয়।
এরপর বিয়ে ও অন্যান্য খরচের কথা বলে পাত্রের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করে। বিয়ে তো হবেই-এ বিশ্বাসে পাত্ররাও দেয়। তবে বিয়ের দিনক্ষণের পূর্বেই লাপাত্তা হয়ে যায় পাত্রী। এভাবে অবিবাহিত ও ভাগ্য পরিবর্তনে প্রত্যাশী পুরুষদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ‘ম্যারেজ মিডিয়া’ পরিচয়ধারী প্রতারণা প্রতিষ্ঠান।
গোয়েন্দা পুলিশের মতে, ঢাকা শহরে এ ধরনের অন্তত একশ প্রতারণা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তাদের রয়েছে পাত্রী পরিচয়ধারী নারী-প্রতারক। এ মহিলারা পাত্রী হিসেবে একবার সাক্ষাৎকার দিলেই পায় এক হাজার টাকা। গত রবিবার রাতে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এ ধরনের প্রতারণার অভিযোগে রামপুরার বনশ্রী এলাকা হতে ম্যারেজ মিডিয়া চক্রের আমেরিকা ও কানাডা প্রবাসী দুই ভুয়া পাত্রীসহ নয়জনকে গ্রেফতার করেছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগ জানায়, এ চক্রটি অনেকদিন থেকে পত্রিকায় ‘পাত্র চাই’ বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা করে আসছিলো। বিজ্ঞাপন দেখে লোকজন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে প্রবাসী পাত্রী হিসেবে কথিতদের দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিতো।
পুলিশ তাদের কাছ থেকে ২২টি পাসপোর্ট, বিভিন্ন দেশের প্রতিষ্ঠানের মালিক পরিচয়ের ২৫টি জাল আইডি কার্ড, ৪০টি জাল ইমিগ্রান্ট ভিসা ফরম, ১০টি নকল ভিসা, ৭৬টি বায়োডাটা ফরম, একটি ল্যাপটপ ও বিভিন্ন ধরনের জাল কাগজপত্র উদ্ধার করেছে। তারা আরো জানান, এ চক্রের দুজনকে এর আগেও গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেফতার করেছিলো। সম্প্রতি তারা আদালত থেকে জামিন নিয়ে কারাগার থেকে বের হয়ে পুনরায় ম্যারেজ মিডিয়ার অফিস খুলে তাদের ব্যবসা শুরু করে।
এই চক্রের প্রতারণার শিকার একজন জানান, তিনি ২০১১ সালের নভেম্বর মাসে এই ম্যারেজ মিডিয়ার একটি বিজ্ঞাপন দেখে যোগাযোগ করেন। এরপর তাদেরকে বায়োডাটা দেন। এর চারদিন পরে ম্যারেজ মিডিয়ার লোকজন তাকে কথিত আমেরিকা প্রবাসী এবং গার্মেন্টস মালিক পরিচয়ে রীদিতা জামান নামের এক পাত্রীর সঙ্গে দেখা করিয়ে দেন।
এই পাত্রী এক বসাতেই ওয়াজিউল ইসলামকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যান। এর দুই সপ্তাহ পরে রীদিতা জামান তার কাছে ৩০ হাজার টাকা ধার চান এবং জানিয়ে দেন বিয়ের পরে সেটা তাকে ফেরত দেয়া হবে। ওয়াজিউল ইসলাম সরল বিশ্বাসে রীদিতাকে ৩০ হাজার টাকা দেন। এর একমাস পরে রীদিতা ও ম্যারেজ মিডিয়ার লোকজন বিয়ের খরচ হিসাবে তাকে দেড় লাখ টাকা দিতে বলেন। তখন ওয়াজিউল ইসলামের সন্দেহ হয় এবং তিনি ঘটনাটি গোয়েন্দা পুলিশকে জানান।
তথ্যসূত্রঃ প্রশ্নোত্তর | কোয়ান্টাম মেথড