প্রশ্নঃ সংসার জীবনে সবসময় শাশুড়ি, ননদ-দেবরদের জন্যে সবদিক থেকে ত্যাগ স্বীকার করে আসছি। বাসার সবচেয়ে ছোট রুমটাই আমাকে নিতে হবে, কারণ আমার ঘরে তেমন ফার্নিচার নেই। খাবার সময় মাছের ছোট টুকরোটাই তুলে দেবে আমাকে। তাছাড়া আর্থিক দিক তো আছেই। যখন যার প্রয়োজন, ‘বউ চাকরি করছ—ব্যবস্থা করো’। সবাই খুশি। কেবল আমিই মনে মনে কষ্ট পাই। তবুও একফোঁটা শান্তির জন্যে সবকিছু সহ্য করছি। কিন্তু মনের ব্যথা তো ধুয়েমুছে ফেলতে পারছি না। কী করব—দয়া করে বলবেন কি? শারীরিক মানসিকভাবে সবসময় বিপর্যস্ত থাকছি।
উত্তরঃ আপনার জন্যে দুঃখ হচ্ছে এ কারণে যে, এত সৌভাগ্যবান একজন হয়েও শুধু দৃষ্টিভঙ্গির কারণে আপনি কষ্ট পাচ্ছেন। আপনাকে ধরে কেউ পেটাচ্ছে না, মারছে না, শুধু আপনার ফার্নিচার কম বলে ছোট বেডরুমটা দিয়েছে। বোঝা যাচ্ছে, আপনারা স্বামী-স্ত্রী মাত্র দুজন। ব্যাপারটাকে এভাবে কেন দেখতে পারছেন না যে, ছোট রুমটাই আমার থাক। ঝাড়পোছের ঝামেলা কমল, আর ওরাও থাকুক না একটু আরাম করে!
ননদ-দেবর তো বিয়ের পর চলেই যাবে। থাকবেন তখন কেবল শাশুড়ি। আর এ যুগে শাশুড়ি থাকাটা তো আশীর্বাদ। কদিন বাদে যখন আপনার সন্তান হবে, তখন বাচ্চাটাকে রেখে কাজে যাওয়ার জন্যে শাশুড়ির মতো এমন নির্ভরযোগ্য আপন একজনকে পাওয়াটা আশীর্বাদ ছাড়া আর কিছু না।
কয়েক বছর পর বুয়া-আয়াদেরকে তো আর পাবেন না। পেলেও এদের চেয়ে দাদা-দাদি অনেক নির্ভরযোগ্য। কারণ আপনার বাচ্চা হচ্ছে তার বংশের চেরাগ। অতএব তার প্রতি তাদের যে-রকম দরদ মমতা, এটা অন্য কারো থাকবে না।
আর মাছের ছোট টুকরোটা আপনি নিজেই নিয়ে নিন না! মনে মনে ভাবুন, বড় পিস খেলে আমি মোটা হয়ে যাব। ছোটটাই আমার জন্যে ভালো, ডায়েটিং এর সুযোগ পাচ্ছি। আর বড় পিসটা নিজ হাতে তুলে দিন শাশুড়ির প্লেটে। দেখবেন, তিন দিন পর শাশুড়ি নিজে লজ্জা পাবে। বলবে, বউমা প্রতিদিন তো বড়টা আমাকে তুলে দাও, আজ তুমি এটা খাও।
পরিবারে বাকি যারা আছে, আগামী পাঁচ বছর বা ১০ বছর পরে তারা কেউ কিন্তু এখানে থাকবে না। থাকবেন শুধু আপনি আর আপনার স্বামী। অতএব এ সবকিছু আপনাকে আনন্দ দিতে পারে, আপনি সবচাইতে সুখী মানুষ হতে পারেন, যদি দৃষ্টিভঙ্গিটা একটু পাল্টে দেন।
সেবা দিয়ে পুণ্য অর্জনের সোনালি সুযোগ ছড়িয়ে রয়েছে যে পরিবেশে, সেখানে থেকেও শুধু ভুল দৃষ্টিভঙ্গির কারণে আপনি কষ্ট পাচ্ছেন। এই যে শাশুড়ি যখন বলছে, ‘বউ চাকরি করছ—ব্যবস্থা করো’, তার মানে তারা আপনার ওপর নির্ভরশীল। এরা সবাই আপনার অনুগত হয়ে যাবে, আপনার কর্তৃত্ব মেনে নেবে, যদি আপনি শুধু দৃষ্টিভঙ্গিটাকে ঠিক করে ফেলতে পারেন।
লিডার মানে সেবক, লিডার মানে নিজে কষ্ট করে সুখটা অন্যকে দেয়া। আপনি অন্তর থেকে দিয়ে যান। স্বামী-শাশুড়ি-ননদ-দেবর কেউ না দেখুক, স্রষ্টা দেখছেন। স্রষ্টা এর প্রতিদান দেবেন। আপনি এখন দিচ্ছেন। অথচ কষ্ট নিয়ে দিচ্ছেন। এই দেয়ার কোনো প্রতিদান নেই। কিন্তু আপনি যখন আনন্দিতচিত্তে দেবেন, তখন স্রষ্টা আপনাকে অনেক বেশি দেবেন।
তথ্যসূত্রঃ প্রশ্নোত্তর | কোয়ান্টাম মেথড