Business Care News

Business News That Matters

magic, witchcraft, hechizería

প্রশ্নোত্তর সিরিজ – পর্ব ৯৬: নজর লাগা বা কুদৃষ্টি থেকে রক্ষা কবচ

প্রশ্নঃ ইন্ডিয়ান টিভি চ্যানেলে দেখাচ্ছিল যে, এক ধরনের আর্মলেট, লকেট ও ব্রেসলেট বিক্রি করছে। তারা একে সুরক্ষা কবজ বলছে – অন্যের নজর লাগা বা কুদৃষ্টি থেকে রক্ষা করবে। একটি আর্মলেট বা ব্রেসলেটের দাম ২,৫০০ রুপি। টিভি চ্যানেলটি এটি তৈরির পদ্ধতিও দেখিয়েছে। এই জিনিস কি বিশ্বাস করা উচিত হবে – মেহেরবানি করে জানাবেন।


উত্তরঃ আসলে তাবিজ-কবচের দিকে নজর গেলে, বুঝতে হবে আপনার দৃষ্টিভঙ্গির গোড়ায়ই গলদ রয়ে গেছে। আসলে এসব তাবিজ-কবচ যে কী তা নিয়ে একটি বাস্তব ঘটনা বলি।

ঘটনাটা একজন তরুণ এস্ট্রলজার এবং তার এক পুরনো ক্লাসমেটের। তরুণ এস্ট্রলজারটি সবে সৌখিন এস্ট্রলজার হিসেবে খ্যাতি পেতে শুরু করেছেন। এমনি একদিন তার কাছে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো তার সেই পুরনো ক্লাসমেট। কোত্থেকে সে খবর পেয়েছে—সম্প্রতি এস্ট্রলজার হয়ে ওঠা তার সেই সহপাঠী এখন মানুষের ভূত-ভবিষ্যৎ সব বলতে পারে, পারে মুশকিল আসান করতে।

তার সমস্যাটা ছিল এরকম—সে তার বড় ভাইয়ের এক শ্যালিকাকে খুব পছন্দ করে। মেয়েটিও তাকে পছন্দ করে। যোগ্যতা, সামাজিক সমতা সবই ঠিক আছে। কিন্তু একই পরিবারে দুই বিয়ে করানোর ব্যাপারে রাজি হচ্ছিলেন না মুরুববীরা। শেষমেশ অন্য জায়গায় মেয়েটির বিয়েও ঠিক হয়ে গেল।

খবর শুনে তো ছেলেটির অবস্থা দিশেহারা। আর কোনো উপায়ান্তর না দেখে সে ছুটে এসেছে তার এস্ট্রলজার বন্ধুর কাছে। আশা-যদি অলৌকিক কোনো ক্ষমতাবলে সে কিছু করতে পারে। সব ঘটনা বর্ণনা করে সে বললো, আচ্ছা, এমন কি কোনো তাবিজ তুমি আমাকে দিতে পারো যা দিয়ে সব কিছুকে আমি আমার ইচ্ছেমতো করাতে পারবো?

শুনে এস্ট্রলজার বন্ধুটি বললো, দেখ, আমি তো তাবিজ-কবচ দিই না। আমি একজন এস্ট্রলজার। বৈজ্ঞানিক-গাণিতিক হিসেবনিকেশ করে আমি মানুষের সম্পর্কে বলি। তাদের পরামর্শ দিই।

সে বলল, ‘দোস্ত, আমি এসব বুঝি না। আমি শুনেছি তুমি অনেক কামেলিয়াত অর্জন করেছ। আমার জন্যে তোমাকে একটা কিছু করতে হবেই যাতে ঐ মেয়েকে আমি বিয়ে করতে পারি।’

সে একেবারে নাছোড়বান্দার মতো লেগে রইলো এস্ট্রলজারের পেছনে। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখতে হয় তাকে, রাতে বাসায় যাওয়ার সময়ও আছে সে। অগত্যা এস্ট্রলজার তার উৎসাহ কমানোর জন্যে তাকে বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে, যাও, এত বড় একটা কবচ নিয়ে আসো (বলে এমন একটা সাইজ দেখালেন, যে সাইজের কবচ বাজারে পাওয়া যায় না)।

কিন্তু তাতে বন্ধুর উৎসাহে ভাটা তো পড়লোই না, বরং আরো বেশি উৎসাহ নিয়ে সে ফরমাশ দিয়ে বানিয়ে আনলো বড় এক লোহার কবচ। দেখে এস্ট্রলজার কিছুক্ষণ আর কথা বললেন না। এত নাছোড়বান্দা মানুষকে তো আর কিছু বলার নেই। বন্ধুকে বললেন, একদিন পরে আসতে। বন্ধু চলে গেলে তিনি কবচটাতে ঠেসে ঠেসে মাটি ভরে ওপরে মোমের আস্তর লাগিয়ে দিলেন। এছাড়া তার আর কিছু জানাও ছিল না। উদ্দেশ্য—কোনোভাবে তার হাত থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া।

পরদিন সে এলে তাবিজটি তাকে দিয়ে বললেন, এটাকে ভালো করে কোমরে বাঁধতে হবে (কোমর ছাড়া এত বড় তাবিজ আর কোথাও বাঁধার জায়গাও ছিল না)। আর এক্ষুণি গ্রামের বাড়ি রওনা হয়ে যেতে। কারণ ঘটনাস্থলের কাছাকাছি না গেলে এই তাবিজ কাজ করবে না।

আসলে এস্ট্রলজারের মূল উদ্দেশ্য ছিল তাকে ঢাকা থেকে বিদায় করা। কারণ ঢাকায় থাকলে সে প্রতিদিন তাকে বিরক্ত করবে। সে মুহূর্ত দেরি না করে রওনা হয়ে গেল তার গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে।

এদিকে এস্ট্রলজার হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। যাক, এতদিনে মুক্তি পাওয়া গেল। পরের এক মাস সেই বন্ধুর আর কোনো খোঁজ-খবর নেই। এস্ট্রলজার ভাবলেন, নিশ্চয়ই মেয়েটির অন্য জায়গায় বিয়ে হয়ে গেছে। আর সেই শোকের ধাক্কা সামলাতে গিয়ে বন্ধুর এই নীরবতা।

কিন্তু এস্ট্রলজারকে চমকে দিয়ে একদিন সেই বন্ধুটি নতুন বৌয়ের সাজে এক মেয়েকে নিয়ে হাজির। মেয়েটিকে জোরে জোরে বলতে লাগল, ‘সালাম কর, সালাম কর। আমার বন্ধু হলে কী হবে? বহুত কামেল মানুষ। ওর জন্যেই তো তোমাকে পেলাম আমি’।

বিস্ময়ে বাকহারা এস্ট্রলজারকে এরপর যে ঘটনা সে শোনালো তা যেকোনো সিনেমার কাহিনীকেও হার মানায়। ঘটনা হলো, ঐ তাবিজ পরে তখনই তো সে চলে গিয়েছিল গ্রামের বাড়িতে। গিয়ে দেখল, ভাবীর বোনের বিয়ের সব জোগাড়যন্ত্র তৈরি। তখনকার দিনে গ্রামে বিয়ের এক সপ্তাহ আগে থেকেই লোকজন এসে বিয়ের কাজে নেমে পড়ত (ঘটনাটি ১৯৭৪/৭৫ সালের)। ছেলে ব্যাংক ম্যানেজার।

এদিকে সেসময় ১০০ টাকার নোট ডিমনিটাইজড করা হয়েছিল। ব্যাংকের ম্যানেজার হিসেবে এই ব্যাপারে কিছু বেআইনি লেনদেনের সাথে জড়িত হয়ে গিয়েছিল পাত্রটি। যার ফলে ঠিক বিয়ের আগের দিন পুলিশ এসে অ্যারেস্ট করে নিয়ে গেল তাকে।

সে সময় গ্রাম এলাকায় কোনো বিয়ে এভাবে ভেঙে গেলে মেয়ে এবং তার পরিবারের প্রতি লাঞ্ছনা-গঞ্জনার কোনো শেষ থাকত না। মেয়েটির পরিবার তাই দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলো যা হবার হয়েছে। কিন্তু এখন বিয়ে হবে এবং তা হবে নির্ধারিত দিনেই। তবে পাত্র এবার তাদের বড় মেয়ের দেবর যাকে নিয়ে এর আগেও কথা হয়েছে। ছেলের বাবা-মা অর্থাৎ তাদের বেয়াই-বেয়াইনেরও এখন আর কোনো আপত্তি নেই। অতএব হয়ে গেল বিয়ে।

সব ঘটনা বর্ণনা করে সে আবারও বলল, ‘দোস্ত, তোমার তাবিজের গুণেই এ সবকিছু হয়েছে’। এস্ট্রলজার যতই বলেন, তাবিজ কিছু না, যা হয়েছে আল্লাহর ইচ্ছায় হয়েছে। সে ততই বলে তা ঠিক আছে কিন্তু তাবিজ থাকাতেই তা হয়েছে। শেষে তিনি বললেন, ঠিক আছে, এখন তো বিয়ে হয়ে গেছে। এখন আর তাবিজ দিয়ে কী করবে? পানিতে ফেলে দাও।

অর্থাৎ এই তাবিজ-কবচ এগুলো সব অর্থহীন। যে-কোনো নজর থেকে বাঁচার জন্যে আপনার ইচ্ছাটাই যথেষ্ট। আল্লাহর কাছে প্রার্থনাই যথেষ্ট। আমাদের দেশের তথাকথিত পীর সাহেবরা তো এভাবেই বিখ্যাত হয়ে যান। অনেকটা ‘ঝড়ে বক মরে, ফকিরের কেরামতি বাড়ে’র মতো। হয়তো কাকতালীয়ভাবে একটা ঘটনা ঘটল। ব্যস! সে খবরটা চারপাশে এমনভাবে ছড়িয়ে পড়ল বা ছড়ানো হলো যে, তিনি কামেল পীর হয়ে গেলেন। শুরু হয়ে গেল তাবিজ-কবচের রমরমা ব্যবসা।

অবশ্য কিছু কিছু পাথর আছে স্বাস্থ্যের জন্যে উপকারী। সেটার কেমিকেল কম্পোজিশনের জন্যে, সেটার লাইট রিফ্লেকশন এবং রিফ্লেক্টিং এঙ্গেলের জন্যে। কিন্তু পাথর কারো ভাগ্য বদলায় না, পাথর কাউকে কোটিপতি-লাখপতি বানায় না। তাহলে সমস্ত এস্ট্রলজাররা কোটিপতি হয়ে যেত এবং তাদেরকে আপনি পরামর্শ গ্রহণ করার জন্যে পেতেন না। কারণ কোটিপতি হওয়ার এই সহজ রাস্তা ছেড়ে সে কেন বসে থাকবে আপনার ফি-র জন্যে।

তথ্যসূত্রঃ প্রশ্নোত্তর | কোয়ান্টাম মেথড

Skip to content