Business Care News

Business News That Matters

communication, listen, ear

Photo by Pixabay

প্রশ্নোত্তর সিরিজ – পর্ব ২৫৮: পারিবারিক জীবনে ভুল বোঝাবুঝি!

প্রশ্নঃ পারিবারিক জীবনে নিত্যদিন ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। আমার স্ত্রী আমাকে বোঝে না। এ-ক্ষেত্রে করণীয় কী?


উত্তরঃ আসলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্কে একটা সাধারণ অভিযোগ হলো, ও আমাকে বোঝে না। স্ত্রীর অভিযোগ, স্বামী তাকে বোঝে না। স্বামীর অভিযোগ, স্ত্রী তাকে বোঝে না। এবং এই ভুল বোঝাবুঝিগুলো কিন্তু খুব ছোটখাটো বিষয় নিয়ে হয়।

যেমন, হয়তো কোনো একদিন আপনি অফিস থেকে একটু তাড়াতাড়ি বাসায় চলে এলেন স্ত্রীকে সারপ্রাইজ দেবেন বলে। স্ত্রীর জন্যে একটা গিফটও হয়তো নিয়ে এলেন। কিন্তু বাসায় এসেই দেখেন স্ত্রীর মুখ থমথমে। বোঝা যাচ্ছে প্রচণ্ড রেগে আছে। যেই জিজ্ঞেস করলেন, কী হয়েছে? অমনি বারুদের মতো জ্বলে উঠল। উচ্চস্বরে যত খেদ, ক্ষোভের কথা বলতে লাগল।

আপনি কিছুই বুঝতে পারছেন না, এমন করছে কেন? সকালবেলাই তো ভালো মুডে দেখেছেন। এর মধ্যেই তার জন্যে আনা গিফটটা বাড়িয়ে দিতেই ছুড়ে মেরে হয়তো বলল, নিকুচি করি তোমার গিফটের। আর আপনিও রেগে গেলেন। কী, এত শখ করে কেনা গিফট এভাবে ছুড়ে মারল! কী নিষ্ঠুর এক স্ত্রীর স্বামীই না হতে হয়েছে আমাকে! ব্যস লেগে গেল ঝগড়া।

অথচ ঘটনা কিন্তু খুব ছোট। স্বামীটি যদি একটু মাথা ঠান্ডা করে ভাবতেন, সকালবেলা যে স্ত্রীর মুড এত ভালো ছিল, বিকেলবেলা সে কেন এমন করছে! নিশ্চয়ই এর পেছনে কোনো কারণ আছে। তাহলে কারণটাও তার সামনে চলে আসত। এবং আসলেও এখানে কারণ হয়তো যা ছিল তা হলো, আজ দুপুরে শাশুড়ির সাথে স্ত্রীর কথা কাটাকাটি হয়েছে, মনোমালিন্য হয়েছে। স্ত্রীর সেই রাগ গিয়ে পড়েছে স্বামীর ওপর। স্বামীটি পড়েছেন ক্রসফায়ারে। ফায়ারটা ছিল শাশুড়ির দিকে। কিন্তু মাঝখানে স্বামী এসে পড়ায় তিনি মিসফায়ারড হয়ে গেছেন।

অতএব পারিবারিক জটিলতায় বা সমস্যায় সবসময় আগে প্রেক্ষাপটটা বোঝার চেষ্টা করবেন। তাহলেই দেখবেন মুহূর্তের উত্তেজনায় ভুল না করে আপনি সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে পারছেন।

পারিবারিক জীবনে সমস্যার ক্ষেত্রে প্রথমত আমাদের দেখতে হবে, সহজ সত্যটি কী? অর্থাৎ যেটিকে আপনি ফেনিয়ে তুলছেন, তার পেছনের কারণটি কী বা মূল ঘটনাটি কী? পারিবারিক জীবনে আমরা যে ভুলটা করি তা হলো, অনেক রকম ধারণার ওপর ভিত্তি করে কথা বলি। অন্যপক্ষকে কথা বলতে না দিয়ে হয়তো বলতে থাকি, ‘তুমি নিশ্চয়ই এটা ভেবে এভাবে বলেছ’।

কিন্তু এভাবে না বলে সহজ সত্যটা শনাক্ত করতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় গেলে দেখা যাবে, ৯০ ভাগ দৈনন্দিন পারিবারিক সমস্যা এমনিতেই মিটে গেছে। সহজ সত্য শনাক্ত করলে দেখবেন, রাগ ক্ষোভ বা ঝগড়ার কারণই অনুপস্থিত। এর বদলে হাসিই পাবে আপনার। কারণ পারিবারিক ক্ষেত্রে ৯০ ভাগ রাগারাগি হয় তুচ্ছ সব কারণে, যা আমরা অনায়াসে এড়াতে পারি।

দ্বিতীয়ত, সহজ সত্য বোঝার পরে তা প্রকাশ করা। পারিবারিক জীবনে এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা মনে করি, সহজ সত্যটি একেবারে সরাসরি প্রকাশ করাই তো উত্তম। এখানে আবার কায়দাকৌশলের কী আছে? এখানেই আমরা ভুলটা করি। কারণ সহজ সত্যকে ‘সহজ সত্য’ হিসেবে গ্রহণ করতে পারে মাত্র শতকরা একভাগ লোক। আর শতকরা নিরানব্বই ভাগই সহজ সত্যকে মেনে নিতে পারে না।

পারিবারিক ঝগড়ায় হয়তো স্বামী স্ত্রীকে বা স্ত্রী স্বামীকে রাগের মাথায় বলে ফেলেন, ‘তুমি আমাকে কষ্ট দিয়েছ’ বা ‘তোমার জন্যে এ ক্ষতিটা হয়েছে’। এভাবে বলার মাধ্যমে সরাসরি তাকে অভিযুক্ত করা হলো, তৈরি হলো ‘তুমি-আমি’র দেয়াল। অথচ কথাটি এভাবেও বলা যেত যে, ‘আমি কষ্ট পেয়েছি’। কারণ এটাই ছিল সহজ সত্য।

এভাবে বললে একদিকে যেমন সরাসরি অভিযুক্ত করা হলো না, ‘তুমি-আমি’র দেয়াল হলো না; তেমনি অপরপক্ষের সমবেদনাও সৃষ্টি হলো আপনার জন্যে। কিন্তু সরাসরি অভিযুক্ত করলে সমবেদনার পরিবর্তে আসত ব্যাখ্যা। তিনি বোঝাতে চাইতেন, আমি ভুল করি নি, তুমিই করেছ। তখন কষ্টও পাবেন, আবার ভুলও স্বীকার করতে হবে। তাই সরাসরি অভিযুক্ত না করেও সহজ সত্য প্রকাশ করা যায়।

তৃতীয়ত, এই কষ্টকে দূর করা। এর দুটো উপায় রয়েছে। এক হলো, যে কষ্ট দিয়েছে তাকে জীবন থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া। কিন্তু পারিবারিক জীবনে এটি সবচেয়ে কঠিন কাজ। মা-বাবা, ভাইবোন, স্বামী-স্ত্রী, ছেলেমেয়ে—এদের মধ্যে যে-ই আপনাকে কষ্ট দিক না কেন, আপনি তাকে জীবন থেকে দূরে ঠেলে দিতে পারবেন না।

এ-ক্ষেত্রে দ্বিতীয় যে উপায় রয়েছে তা হলো, সম্পর্কের সেতু নির্মাণ করা। সম্পর্কের সেতুবন্ধন গড়তে হবে, দেয়াল নয়। এই সেতু নির্মাণ করার জন্যে প্রয়োজন হলো আপনার বিশ্বাস। আপনার যে জয় করার ক্ষমতা রয়েছে সে ক্ষমতায় বিশ্বাস যে, যে-কোনো পরিস্থিতিকে আমি জয় করতে পারি, যে-কোনো মানুষকে আমি আমার পক্ষে আনতে পারি। আমার মা-বাবা, স্বামী-স্ত্রী বা সন্তান যে-ই হোক না কেন, আমি তাকে জয় করতে পারি।

এই বিশ্বাস যত আপনার মধ্যে প্রবল হবে, তত আপনি সেতু নির্মাণ করতে পারবেন। কারণ এই বিশ্বাসের ওপরই সেতুর স্তম্ভ নির্মিত হয়। আর এই বিশ্বাস যদি প্রবল না হয়, তাহলে সেতুর ভিত্তি আর থাকে না। কাজেই পারিবারিক ক্ষেত্রে যে-কোনো ভুল বোঝাবুঝি বা দূরত্বকে দূর করার জন্যে বিশ্বাসই হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অতএব বিশ্বাস করুন, সমমর্মী হোন। তাহলে স্বামী বা স্ত্রীকে বোঝানো সহজ হয়ে যাবে।

মূল: প্রশ্নোত্তর | কোয়ান্টাম মেথড

Skip to content