Business Care News

Business News That Matters

joyful, adult, daughter, greeting, happy, mother-in-law

Photo by Andrea Piacquadio on Pexels.com

প্রশ্নোত্তর সিরিজ – পর্ব ১৭৭: শাশুড়ির সাথে বউয়ের সম্পর্ক

প্রশ্নঃ শাশুড়ির সাথে বউয়ের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত? অনেক সময় মতের মিল হয় না। অনেক সময় মনে হয়, নিজের মেয়ে হলে তিনি এমন বলতে পারতেন না।


উত্তরঃ পুত্রবধূর পক্ষে শাশুড়িকে প্রভাবিত করা খুব সহজ। শাশুড়ির সমস্যা একটিই—তিনি অনিশ্চয়তায় ভোগেন যে, বউ ছেলেকে তার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দেয় কিনা। আর শুধু বউ-ই পারে শাশুড়ির এ অনিশ্চয়তাকে দূর করতে। এ নিয়ে প্রাচীন গল্প আছে—

গ্রামের এক তরুণী। বিয়ের পর যখন স্বামীর বাড়িতে গেল, শাশুড়ির সাথে শুরু হলো তার সমস্যা। শাশুড়ির আচার-আচরণ কথাবার্তা সে সহ্য করতে পারত না। শাশুড়িও সারাক্ষণ শুধু বউয়ের সমালোচনা করত। অবস্থা আরো অসহনীয় হয়ে উঠল যখন পারিবারিক রীতি অনুযায়ী প্রতিদিন তার শাশুড়িকে পা ছুঁয়ে সালাম করতে হতো এবং সব কথা মেনে নিতে হতো। এ সবকিছুর অসহায় দর্শক হওয়া ছাড়া স্বামী বেচারার কিছুই করার ছিল না।

একপর্যায়ে মেয়েটি তার বাবার এক বন্ধুর কাছে গেল, পেশায় যিনি হেকিম। সব কথা খুলে বলে তার কাছে এমন এক বিষ চাইল, যা খাইয়ে বুড়িকে সে দুনিয়া থেকে চিরতরে সরিয়ে দিতে পারবে। এক মুহূর্ত ভেবে হেকিম বললেন, সমাধান আমি করে দেবো, যদি তুমি আমার কথামতো চলো। মেয়েটি রাজি। তিনি একটা পুঁটুলিতে কিছু ভেষজ লতাপাতা বেঁধে তাকে দিলেন। বললেন, একবারে কোনো বিষ দিয়ে যদি শাশুড়িকে মেরে ফেলো, তাহলে সবাই তোমাকে সন্দেহ করবে।

তাই আমি এমন কিছু লতাপাতা দিয়েছি, যা ধীরে ধীরে তার শরীরে বিষক্রিয়া ঘটাবে এবং সে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাবে। একদিন পর পর খুব ভালো কোনো খাবার রান্না করে তার মধ্যে এগুলো মিশিয়ে তোমার শাশুড়িকে খেতে দেবে। আর লোকে যেন তোমাকে কোনো সন্দেহ করতে না পারে, সেজন্যে এ সময়টায় শাশুড়ির সঙ্গে খুব ভালো ব্যবহার করবে। কোনো ঝগড়াঝাঁটি করবে না এবং তার সব কথা বিনা বাক্যব্যয়ে মেনে নেবে।

পুঁটুলিটা কাপড়ের মাঝে লুকিয়ে সে বাড়ি ফিরে এলো। বহুদিন পর তার মনটা খুব হালকা হয়ে গেল। এতদিনে সে মুক্তি পেতে যাচ্ছে। হেকিমের কথামতো সে একদিন পর পর ঐ বিষ-মেশানো খাবার রান্না করে শাশুড়িকে খাওয়াতে লাগল। সেইসাথে তার সব কথা মেনে চলল। এসময় শাশুড়ির ওপর যত রাগই হোক, আপ্রাণ চেষ্টায় তা দমন করল। শাশুড়িকে সে তার মায়ের মতোই দেখতে লাগল। এভাবে কেটে গেল ছয় মাস। ঘরের পরিবেশ এখন অনেক শান্তিময়।

এর মধ্যে সে আবিষ্কার করল, সে তার রাগকে এখন অনেক সহজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আগে মুহূর্তে রেগে গিয়ে যে তুলকালাম বাঁধাত, এখন আর তা করে না। গত ছ-মাসে একবারও শাশুড়ির সাথে তার কোনো ঝগড়া হয় নি। ছোটখাটো বিষয়গুলোকে এখন খুব অনায়াসেই সে ক্ষমা করতে পারে, ছাড় দিতে পারে।

শাশুড়ির পরিবর্তনও লক্ষণীয়। তিনি এখন বউকে নিজের মেয়ের মতোই ভালবাসেন। আত্মীয়, পাড়া-প্রতিবেশী সবাইকে বলে বেড়ান, আমার বউমার মতো ভালো মেয়ে আর হয় না। বউ-শাশুড়ি থেকে তারা এখন মা-মেয়ের মতো। মমতা-ভালবাসার সম্পর্কে আবদ্ধ দুজন নারী। দেখেশুনে মেয়েটির স্বামী হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। কিন্তু বিষের কথা যখনই মনে পড়ে, গভীর বিষণ্নতায় ডুবে যায় মেয়েটি।

একদিন সে আবারও গেল বাবার বন্ধু হেকিমের কাছে। হাত ধরে বলল, দয়া করে আমাকে সাহায্য করুন। আমি এখন আর আমার শাশুড়িকে মেরে ফেলতে চাই না। তিনি বদলে গেছেন। মায়ের মতোই তাকে এখন ভালবাসি আমি। তিনিও আমাকে অনেক আদর করেন। যে বিষ তার শরীরে ঢুকেছে, দয়া করে তা বের করে আনার ব্যবস্থা করুন। হেকিম হাসলেন। মাথা ঝাঁকিয়ে বললেন, চিন্তা কোরো না মা। তোমার শাশুড়ি মরবেন না। বিষের নামে আমি যে লতাপাতাগুলো দিয়েছিলাম, তা আসলে বিশেষ ধরনের এক ভেষজ ভিটামিন, যা তার স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাবে। বিষ আসলে ছিল তোমার মনে, তোমার দৃষ্টিভঙ্গিতে। এখন সে বিষ ভেসে গেছে তার প্রতি তোমার ভালবাসা আর শ্রদ্ধায়।

অতএব শাশুড়ির সাথে এমন আচরণ করুন, যেন তিনি ভাবতে পারেন আপনি তার মেয়ে। মমতাপূর্ণ কথা ও আচরণ এমনই, যা পারস্পরিক সম্পর্ককে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবেই।

তথ্যসূত্রঃ প্রশ্নোত্তর | কোয়ান্টাম মেথড

Skip to content