Business Care News

Business News That Matters

keys, hands

প্রশ্নোত্তর সিরিজ – পর্ব ৩৫ঃ এমএলএম ডিলারশিপ বিক্রি

প্রশ্নঃ যারা না জেনে এমএলএমে যুক্ত হয়েছে তারা এখন কী করতে পারে? তারা কি ডিলারশিপ বিক্রি করে দিয়ে বিচ্ছিন্ন হবে?


উত্তরঃ যদি না জেনে প্রতারণার সাথে যুক্ত হয়ে থাকেন সম্পর্ক ছেদ করাটাই উত্তম। যত তাড়াতাড়ি ছেদ করতে পারবেন, তত প্রতারক হওয়া থেকে বেঁচে যাবেন। মনে রাখবেন, প্রতারকের পরিণতি সবসময়ই অত্যন্ত করুণ। তাদের কারো জীবনেই শান্তি নেই।

আপনারা সবাই পত্রিকায় পড়েছেন মার্কিন ধনকুবের বার্নার্ড ম্যাডফ-এর কথা যে ২০০৮ সালের ১১ ডিসেম্বর আর্থিক প্রতারণার দায়ে গ্রেফতার হয়। দি ইকোনমিস্ট পত্রিকা তাদের ১৮ ডিসেম্বর ২০০৮-এর ইস্যুতে ম্যাডফ স্ক্যান্ডালকে অভিহিত করে শতাব্দীর সেরা প্রতারণা হিসেবে। একক পরিচালনায় সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ সংক্রান্ত প্রতারণার নায়ক ম্যাডফ হাজার হাজার বিনিয়োগকারীকে প্রতারিত করে। শেয়ার প্রতারণা, মেইল ও ই-মেইল প্রতারণা, মানি লন্ডারিং, পারজুয়ারি (বিচারাধীন কোনো বিষয়ে শপথ করে মিথ্যা বলা), পঞ্জি স্কিম চালানোসহ বিভিন্ন অর্থ সংক্রান্ত জালিয়াতি চালিয়ে যায় কয়েক দশক ধরে।

‘পঞ্জি স্কিম’ শব্দটি পরিচিত হয় চার্লস পঞ্জি নামে এক প্রতারকের বিনিয়োগ ব্যবসার মাধ্যমে। এ ব্যবসায় বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণীয় হারে মুনাফা দেয়া হয় তাদেরই বিনিয়োগ অথবা নতুন বিনিয়োগকৃত অর্থ থেকে, কোনো মুনাফা থেকে নয়। নতুন বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করার এটি একটি ফাঁদ। কারণ পঞ্জি স্কিমে যে মোটা অঙ্কের লভ্যাংশ দেয়া হয়, তা নিয়মিত চালিয়ে যেতে সবসময় অর্থের একটা প্রবাহ প্রয়োজন। তাই নতুন বিনিয়োগকারীরা যাতে বিনিয়োগের টাকা ফেরত না নেয়, সেজন্যে তাদেরকে দেয়া হয় দীর্ঘমেয়াদী নতুন নতুন সব বিনিয়োগ অফার।

ধনকুবের বার্নার্ড লরেন্স ম্যাডফ যুক্তরাষ্ট্রের একজন কোটিপতি ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত ছিল। বাবা ছিলো ইহুদি কাঠমিস্ত্রি; পরে স্টকব্রোকার হয়। ২২ বছর বয়সে ম্যাডফ মাত্র পাঁচ হাজার ডলার পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করে। ১৯৬০ সালে ওয়ালস্ট্রিট ভিত্তিক ফার্ম ‘বার্নার্ড এল ম্যাডফ ইনভেস্টমেন্টস সিকিউরিটিজ’ প্রতিষ্ঠা করে এবং ২০০৮ সালের ১১ ডিসেম্বর গ্রেফতার হওয়ার আগ পর্যন্ত সে এর চেয়ারম্যান ছিল। খুব কম সময়ে ম্যাডফ ওয়ালস্ট্রিটে সফল ব্যবসায়ী হিসেবে সুনাম অর্জন করে। এই সাফল্যের সূত্র ধরেই একদিন সে আমেরিকার সবচেয়ে বড় স্টক এক্সচেঞ্জ নাজদাক্-এর চেয়ারম্যান হয়।

ম্যাডফের বিশেষ একটি গুণ হলো—সে খুব কুশলী ছিল, সহজেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক থেকে তার মক্কেলদের অর্থ হাতিয়ে নিতো। প্রতারিত এ ভুক্তভোগীদের দীর্ঘ তালিকায় রয়েছেন খ্যাতিমান ও বিলিওনিয়ার অনেক ব্যক্তি। যেমন, নিউইয়র্ক মেটস বাস্কেটবল টিমের মালিক, স্টিভেন স্পিলবার্গ, ৯৬ বছর বয়সী ক্লদিং ম্যাগনেট কার্ল শ্যাপিরো, যার ৫৪৫ মিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নিয়েছিল ম্যাডফ। নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া এলি উইজেল লগ্নি করেন তার পুরস্কারের এক কোটি ৫২ লাখ ডলার। শুধু বিশিষ্ট ব্যক্তিরাই নন, বড় বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকেও ম্যাডফ তার প্রতারণার ফাঁদে ফেলে। স্প্যানিশ ব্যাংক ব্যাঙ্কো সানতান্দার তাদের সুইস কোম্পানিগুলোর ৩০০ মিলিয়ন ডলার হারিয়েছে। বিকল্প বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ফেয়ারফিল্ড গ্রিনউইচ-এর বিনিয়োগ কমপক্ষে সাড়ে সাত বিলিয়ন ডলার। বেশকিছু ইহুদি দাতব্য সংগঠন এখন বন্ধ হওয়ার পথে। এ তালিকায় আছেন হাজারেরও বেশি অবসরপ্রাপ্ত ধনবান ব্যক্তি। এমনকি তার একান্ত শুভাকাঙ্ক্ষী বন্ধুদেরও সে বাদ দেয় নি প্রতারণা থেকে।

এই ম্যাডফের এখন কী অবস্থা? বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, প্রমোদতরী রেখে ৭৪ বছর বয়সে এখন কারাজীবন ভোগ করছে। ১১টি মামলা ছিল তার বিরুদ্ধে—যার প্রতিটি জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ আর অর্থ পাচারের। যুক্তরাষ্ট্রের আদালত তাকে ১৫০ বছরের কারাদন্ড দিয়েছে। শতাব্দী সেরা এ প্রতারণায় বিনিয়োগকারীদের ৬৫ বিলিয়ন ডলার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে যা আমাদের টাকায় ৫৩ হাজার কোটি টাকা। আদালতের ভাষায়—‘সে চরম বিশ্বাসভঙ্গের অপরাধ করেছে’।

প্রতারণার ফলাফল কেমন শোচনীয় হয়—তা ম্যাডফের পরিবার থেকেই বোঝা যায়। হাজার হাজার মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেললেও সে নিজে ফাঁদে পড়ে তারই সন্তানদের হাতে। বাবার এসব অপকীর্তির কথা নিজেরা জানার পরই তা প্রকাশ করে দেয় ফেডারেল কর্তৃপক্ষকে। এর পর পরই সে গ্রেফতার হয়। ম্যাডফের ভাতিজা রজার ম্যাডফ ২০০৬ সালের এপ্রিলে মাত্র ৩২ বছর বয়সে ব্লাড ক্যান্সারে মারা যায়। মারা যাওয়ার আগে বলে গেছে, ম্যাডফের রক্তকে অভিশাপ দেয়া উচিত। ব্লাড ক্যান্সার নিয়ে টিকে আছে ম্যাডফের ভাই পিটার। ম্যাডফের ছেলে এন্ড্রু-র ক্যান্সারের চিকিৎসা চলছে। বার্নার্ডের আরেক ভাতিজা ব্যস্ত তার মেয়ের ব্লাড ক্যান্সারের চিকিৎসা নিয়ে। পুরো পরিবারে ক্যান্সার ঢুকে গেছে। শতাব্দী সেরা এ প্রতারণার খবর ফাঁস হওয়ার পর ম্যাডফের স্ত্রীও বিস্মিত, সে-ও নিজেকে প্রতারিত মনে করছে।

আসলে শৈশবে শোনা সেই ছোট্ট কথাটি সবসময় মনে রাখবেন—লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু। প্রতারণার আশ্রয় না নিয়ে আপনি মানুষের কল্যাণে পরিশ্রম করুন। আপনার জীবনে প্রাচুর্য ও সাফল্য আসবে সহজ স্বতঃস্ফূর্তভাবে।

এ বিষয়ক আরো
আজকাল ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিংয়ের ব্যাপারে অনেককেই আগ্রহী দেখা যায়। কিন্তু সাম্প্রতিককালে এ নিয়ে প্রতারণার বেশ কিছু অভিযোগও দেখেছি পত্রিকায়। আমার প্রশ্ন হলো, কী করে বুঝবো আমি ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিংয়ের নামে কোনো প্রতারণার শিকার হচ্ছি কি না?

আসলে প্রথমেই আপনাকে বুঝতে হবে ফ্রিল্যান্সিং মানে কী। এ প্রসঙ্গে দৈনিক সমকালের ১৫ মে, ২০১২ সংখ্যায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিভাগের …

বাংলাদেশে এমএলএম ব্যবসায়ে ডেসটিনি বেশ সফল হিসেবে দেখা যাচ্ছে। কেউ ইনভাইট করলে কি এই ব্যবসায় হাত দেয়া যাবে? জানালে উপকৃত হবো। [প্রশ্নটি ডেসটিনি নিয়ে সাম্প্রতিক অভিযোগের আগে করা, উত্তরটাও সে সময়েরই। অর্থাৎ যে সতর্কতার কথা কোয়ান্টাম আগেই বলেছে, সময়ের ব্যবধানে তা-ই সঠিক বলে প্রমাণিত হয়েছে]
আপনার প্রশ্ন শুনে মনে হচ্ছে আপনি যেন একেবারে টাকাপয়সা গুছিয়ে নিয়ে বসে আছেন , কেউ ইনভাইট করামাত্র ঝাঁপিয়ে পড়বেন। আসলে পরিশ্রম না করে ফোকটে লাভ করার…

আমি জিজিএন জাতীয় একটি প্রতিষ্ঠানের মেম্বার হওয়ার জন্যে বেশ মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েছি, বিনিময়ে তারা অনেক সুবিধা দেবে এই শর্তে। পরবর্তীতে গিয়ে দেখি অফিস উধাও। আসিম কাজমী নামে এক পাকিস্তানি এই প্রতিষ্ঠানের ডিরেক্টর। তার সাথে আমার যে চুক্তিপত্রটি হয়েছে, তা-ও আছে আমার কাছে। এসব নিয়ে আমার বাবা ও পরিবারের সদস্যরা আমার ওপর ক্ষুব্ধ। আপনার দোয়া ও উপদেশ কামনা করছি।

আপনি চুক্তি করে টাকাপয়সা দিয়ে এখন আমার উপদেশ কামনা করছেন। এখন আমি আপনাকে কী উপদেশ দেবো? আর দিয়ে লাভটাই বা কী হবে? সবসময় টাকাপয়সা দেয়ার আগে ভাববেন…স

এমএলএম বা নেটওয়ার্কিং আমাদের দেশে আকর্ষণীয় বিনিয়োগ ও যুব কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করে অনেক শিক্ষিত যুবক মোটা অঙ্কের কমিশনও পাচ্ছে; কিন্তু আপনি এখানে জড়িত থাকতে নিষেধ করছেন-এর কারণ ব্যাখ্যা করবেন কি?

সুত্রঃ প্রশ্নোত্তর | কোয়ান্টাম মেথড

Skip to content