Business Care News

Business News That Matters

big bang, explosion, space

প্রশ্নোত্তর সিরিজ – পর্ব ২৪৪: অটোসাজেশন বা প্রত্যয়ন কী এবং কীভাবে কাজ করে?

প্রশ্নঃ অটোসাজেশন বা প্রত্যয়ন কী? কীভাবে এটি কাজ করে?


উত্তরঃ অটোসাজেশন হচ্ছে ইতিবাচক শব্দের সম্মিলনে গঠিত বাক্যমালা। শব্দ বা কথা এক প্রচন্ড শক্তি। ধর্মীয় মতে সৃষ্টির শুরু হচ্ছে শব্দ। ইসলাম ধর্ম অনুসারে, আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করতে চাইলেন। তিনি বললেন, কুন্-‘হও’, হয়ে গেল। সনাতন ধর্ম অনুসারে—ব্রহ্মা সৃষ্টি করতে ইচ্ছুক হলেন। তিনি ওংকার ধ্বনি দিলেন, এই বিশ্বব্রহ্মান্ড সৃষ্টি হয়ে গেল। সৃষ্টি সম্পর্কে বিজ্ঞানের সর্বশেষ মতবাদ হচ্ছে সৃষ্টির শুরুতে একটি বিগব্যাং বা মহাবিস্ফোরণ ঘটেছিল। এই বিস্ফোরণও কিন্তু শব্দ। তাহলে আমরা দেখছি ধর্ম ও বিজ্ঞান—দুই অনুসারেই সৃষ্টির শুরুতে রয়েছে শব্দ।

আবার, সৃষ্টির গভীরে কী? বস্ত্তর গভীরে কী? প্রাণের গভীরে কী? বস্ত্তকে ভাঙতে শুরু করলে শেষ পর্যন্ত আপনি পাবেন বিভিন্ন পরমাণু। আপনার দেহ যে কোষগুলি দিয়ে গঠিত সে কোষের কেন্দ্রে আছে ডিএনএ অণু। এই ডিএনএ অণুকে ভাঙলেও আপনি পাবেন কার্বন, নাইট্রোজেন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেনের পরমাণু। পরমাণুর ভেতরে ঢুকলে আপনি পাবেন বিভিন্ন সাব-এটমিক পার্টিকেল। কোয়ান্টাম মেকানিক্স বলে এই পার্টিকেলগুলো এনার্জি অর্থাৎ শক্তিরূপে থাকতে পারে, আবার পার্টিকেলরূপেও থাকতে পারে। যে-কোনো মুহুর্তে পার্টিকেল থেকে এনার্জি আবার এনার্জি থেকে পার্টিকেলে পরিণত হতে পারে। এই পার্টিকেল এবং এনার্জির যে মধ্যবর্তী অবস্থা তাকে বলা হয় কোয়ান্টা। Quantitative bundle of energy—একটা তরঙ্গগুচ্ছ বা স্পন্দনগুচ্ছ। যেমন, আমরা শব্দ শুনি কীভাবে? একটা তরঙ্গ সৃষ্টি হয়, সেই তরঙ্গটা কানে এসে আঘাত করে, ফলে আমরা শব্দ শুনি। অর্থাৎ আমরা দেখছি—বস্ত্তর গভীরে শব্দ, প্রাণের গভীরে শব্দ।

আবার সৃষ্টির শেষে কী? ধর্ম বলে সৃষ্টির শেষে রয়েছে ইসরাফিলের শিঙার হুংকার। কিরকম শব্দ হবে বোঝাই যাচ্ছে। বিজ্ঞান বলে একটা বিগ ক্রাঞ্চ হবে, সবকিছু ধসে যাবে। ধসে গেলে কী হবে? শব্দ। তাহলে আমরা দেখছি, সৃষ্টির শুরুতে শব্দ, বস্ত্তর গভীরে শব্দ, প্রাণের গভীরে শব্দ, সৃষ্টির শেষেও শব্দ। এই জন্যে শব্দ এত শক্তিশালী।

আসলে শব্দ শুধু বাস্তবতার বিবরণ দেয় না বাস্তবতা সৃষ্টিও করে। শব্দ কীভাবে বাস্তবতা সৃষ্টি করে? ছোট্ট উদাহরণ দেই। আপনি কয়েকবার তেঁতুল, তেঁতুল, তেঁতুল শব্দ উচ্চারণ করুন। কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখবেন মুখে লালা চলে এসেছে। আপনি তেঁতুল দেখেনও নি। মুখেও দেন নি। শুধু তেঁতুল শব্দ উচ্চারণ করেছেন মাত্র। মুখের লালা কিন্তু বস্ত্ত। অর্থাৎ শব্দ শুধু বস্ত্তর বিবরণ দেয় না বস্ত্ত সৃষ্টি করার ক্ষমতাও রাখে।

অটোসাজেশন ও প্রত্যয়নে আমরা শব্দের এই ইতিবাচক ক্ষমতাকে নিজেদের কল্যাণে ব্যবহার করি। প্রত্যয়নকে বিজ্ঞানীরা বলেছেন ‘ব্যক্তি ইমেজ পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ ও নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতি’। মনোবিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণায় দেখেছেন, সাফল্যের অনুভূতি নিয়ে আমরা সফলভাবে কাজ করতে শিখি। আমাদের অতীত সাফল্যের স্মৃতি বর্তমান প্রেক্ষাপটে আত্মবিশ্বাস যোগায়, ফলে আমরা সফলভাবে কাজ করতে পারি।

কথা উঠতে পারে, যে মানুষটি অতীতে শুধু ব্যর্থতার অভিজ্ঞতাই সঞ্চয় করেছে সে সাফল্যের অনুভূতি আনবে কীভাবে? উপায় অবশ্যই আছে। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টরা গবেষণা করে প্রমাণ করে দেখিয়েছেন যে, আমাদের নার্ভাস সিস্টেম কল্পনা এবং বাস্তবতার মধ্যে তফাত করতে পারে না। বাস্তব ঘটনায় যে ব্রেন ওয়েভ সৃষ্টি হয়, কাল্পনিক ঘটনার ক্ষেত্রেও সেই একই ব্রেন ওয়েভ সৃষ্টি হয়।

চিন্তা করুন- আপনি যখন সিনেমা দেখতে যান তখন কী করেন? হয়তো দেড়শ টাকা দিয়ে টিকেট কেটে সিনেমা হলে ঢুকেছেন। ওখানে গিয়ে নায়িকার দুঃখ দেখে কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন। নায়িকা কিন্তু এই দুঃখের অভিনয় করে লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন করেছে। ঐ কান্নার অভিনয় করতে গিয়ে যে তার কত গ্লিসারিন খরচ হয়েছে, সে খবরও আপনার জানা নেই। সে গ্লিসারিন চোখে দিয়ে কেঁদে পয়সা উপার্জন করল আর আপনি গ্লিসারিন ছাড়া পয়সা দিয়ে কেঁদে এলেন। আপনি তো জানেন যে, আপনি অভিনয় দেখতে গিয়েছেন। তারপরও আপনি কাঁদছেন কেন? কারণ আপনার নার্ভাস সিস্টেম এটাকে অভিনয় মনে করছে না, সে এটাকেই বাস্তব মনে করছে।

আমাদের নার্ভাস সিস্টেমের এই বৈশিষ্ট্য হচ্ছে নিজেকে সাফল্যের পথে পরিচালিত করার বড় অস্ত্র। বাস্তবে সাফল্যের অভিজ্ঞতা না থাকলেও কল্পনায় গভীর প্রত্যয় নিয়ে নিজেকে সফল বলে ভাবলে, মুখে বার বার সাফল্যের কথা বললে, ধীরে ধীরে আপনার মধ্যে সাফল্যের অনুভূতি তৈরি হবে। এই সাফল্যের অনুভূতি বাস্তব সাফল্যকে আকর্ষণ করবে। ইতিবাচক কথার অন্তর্নিহিত শক্তি এখানেই।

মূল: প্রশ্নোত্তর | কোয়ান্টাম মেথড

Skip to content