বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি তীব্র আকার ধারণ করছে। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য থেকে শুরু করে খাদ্যদ্রব্যের দামও নাগালের বাইরে। জনসাধারণের কষ্ট লাঘবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। এর অংশ হিসেবে এবার ইউনিলিভারসহ ৭৫টির বেশি খাদ্যসামগ্রী বাজারজাতকারী কোম্পানি ফ্রান্সে মূল্য কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ফলে আগামী মাস থেকে খাদ্যপণ্য ক্রয়ে দেশটির অধিবাসীদের ব্যয় কমবে।
ফ্রান্সের অর্থমন্ত্রী ব্রুনো লে মায়ার এ উদ্যোগ নিয়েছিলেন। প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে ১০০টির বেশি খাদ্যপণের দাম কমানো হবে বলে জানানো হয়েছে। মন্ত্রী জানান, এসব কোম্পানির বাজারজাতকৃত খাদ্যদ্রব্যের ৮০ শতাংশই ফ্রান্সের অধিবাসীরা গ্রহণ করে। কোম্পানিগুলো যদি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ না করে, তাহলে আর্থিক জরিমানাও হতে পারে।
খাদ্যদ্রব্য তৈরিতে যে কাঁচামাল ব্যবহার করা হয়, সেগুলোর দাম কমতে থাকলেও খুচরা বাজার বা ভোক্তা পর্যায়ে এর প্রভাব পড়েনি। ফলে সাম্প্রতিক মাসগুলোয় সুপারমার্কেটে পণ্যের দাম নাগালের বাইরে চলে গেছে। এ বিষয়ে ফ্রান্স সরকার ক্ষুব্ধ। এছাড়া ফসল উৎপাদন বাড়ার পূর্বাভাস জাতিসংঘের খাদ্য মূল্যসূচককে দুই বছরের সর্বনিম্নে নিয়ে গেছে। ফ্রান্সের অর্থমন্ত্রী এর আগেও ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে হুমকি দিয়েছিলেন। কেননা খাদ্যদ্রব্য বাজারজাতকারী কোম্পানিগুলো বিশেষ কর সুবিধা ভোগ করলেও বেশি মুনাফা করছিল, যা দেশটির অধিবাসীদের ওপর চাপ তৈরি করছে।
বিএফএম টেলিভিশনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে লে মায়ার বলেন, ‘জুলাইয়ের শুরুর দিকে বিভিন্ন পণ্যের দাম অনেকাংশেই কমবে।’ এর একদিন আগে তিনি খাদ্যদ্রব্য বাজারসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিশ্রুতি দেয়ার পর কারা রক্ষা করছে তা পর্যবেক্ষণ করা হবে এবং নিয়ম না মানলে নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়বে।’
লে মায়ার জানান, যেসব খাদ্যদ্রব্যের দাম কমবে, সেগুলোর মধ্যে পাস্তা, পোলট্রি পণ্য ও ভেজিটেবল অয়েল রয়েছে। তবে এ উদ্যোগের ফলে গরুর মাংস ও দুধের দামে প্রভাব পড়বে না। ইউরো অঞ্চলে খাদ্যদ্রব্যের দাম সেভাবে না বাড়লেও মূল্যস্ফীতির জন্য অন্যতম প্রভাবক এটি। প্রবৃদ্ধি খুব দুর্বল হলেও আগামী সপ্তাহে আবারো সুদহার বাড়াবে ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংক (ইসিবি)। ব্যাংক জানায়, করপোরেট খাতের উচ্চ মুনাফাও মূল্যস্ফীতি তৈরির অন্যতম কারণ। মে মাসে ইউরোজোনের মূল্যস্ফীতি প্রত্যাশার চেয়ে কম থাকলেও তা ইসিবির ২ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে তিন গুণ বেশি ছিল।
খাদ্যদ্রব্যের উচ্চমূল্যের বিষয়ে ব্রিটেন, ইতালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। তবে দাম কমানোর বিষয়ে সবচেয়ে আক্রমণাত্মক ছিল ফ্রান্স। অন্যদিকে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু খাদ্যদ্রব্যের দাম কমানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
ইউরোমনিটরের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, চলতি বছর ২২ শতাংশ ইউরোপীয় প্রাইভেট লেভেল পণ্য বেশি কেনার কথা জানিয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ৫ শতাংশীয় পয়েন্ট বেশি। লে মায়ার জানান, যেসব কোম্পানি দাম কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা নিয়ম ভঙ্গ করলে প্রকাশ্যে ভর্ৎসনা করা হবে।
ফ্রান্সের সুপারমার্কেট ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন এফসিডি সরকারের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে অধিকাংশ কোম্পানিই এখন পর্যন্ত দাম কমানোর পক্ষে নেই বলেও জানিয়েছে।
তথ্যসুত্রঃ রয়টার্স
Related Posts
বিদেশীদের করস্বর্গ – দুবাই কর নীতি সংস্কার
মালদ্বীপের চীনপন্থী প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভিশংসনের উদ্যোগ
দক্ষিণ কোরিয়া বিদেশীদের জন্য নতুন ভিসা চালু করছে