ব্যাংক আমানতের সুদহারের সর্বনিম্ন সীমা তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে ব্যাংকগুলো নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী আমানতের সুদহার নির্ধারণ করতে পারবে। গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি’ বিভাগ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে এ নির্দেশনা দেয়া হয়।
২০২০ সালে কভিড-১৯ সৃষ্ট আর্থিক দুর্যোগের সময় দেশের ব্যাংক খাতে বিপুল পরিমাণ অলস তারল্যের সৃষ্টি হয়। তখন দেশের বেশির ভাগ ব্যাংকই আমানতের সুদহার কমিয়ে ইতিহাসের সর্বনিম্নে নামিয়ে আনে। কোনো কোনো ব্যাংকে মেয়াদি আমানতের সুদহার নেমে আসে ২-৩ শতাংশে। এ অবস্থায় গ্রাহকরা যাতে সঞ্চয়ে নিরুৎসাহিত না হয়, সেজন্য আমানতের সর্বনিম্ন সুদহার বেঁধে দেয়া হয়। ২০২১ সালের ৮ আগস্ট কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে জারীকৃত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, ব্যাংকের মেয়াদি আমানতের সুদহার কোনো ক্রমেই মূল্যস্ফীতির হারের তুলনায় কম হবে না।
দুই বছর আগে জারি করা সে প্রজ্ঞাপন রহিত করে গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ব্যাংকগুলো এখন থেকে স্বীয় বিবেচনায় আমানতের সুদহার নির্ধারণ করতে পারবে। এর আগে গত ২৯ নভেম্বর আমানত ও ঋণের সুদহারের ব্যবধানের (স্প্রেড) সীমা তুলে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। দেশের ব্যাংকগুলোর সংগৃহীত আমানত ও বিতরণকৃত ঋণের সুদহারের ব্যবধান সর্বোচ্চ ৪ শতাংশে সীমাবদ্ধ রাখার নির্দেশনা ছিল। কিন্তু সে সীমাও তুলে নেয়ায় চলতি মাস থেকে ব্যাংকগুলো নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী স্প্রেডে ঋণ বিতরণ করতে পারছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ব্যাংকের ঋণ ও আমানতের সুদহারকে বাজারভিত্তিক করার শর্ত রয়েছে। এ কারণে আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পাসের আগেই স্প্রেড ও আমানতের সর্বনিম্ন সুদসীমা তুলে নেয়া হয়। তারল্য সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো এখন নিজেদের প্রয়োজনেই উচ্চসুদে আমানত সংগ্রহ করছে। স্প্রেড তুলে নেয়া হলেও হুট করে ঋণের সুদহার বেড়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। কারণ ঋণের সুদহার বাজারভিত্তিক করা হলেও সেটি এখনো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে।
ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে ২০২০ সালের ১ এপ্রিল থেকে ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ সুদ ৯ শতাংশ নির্ধারণ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে আইএমএফ থেকে ঋণ প্রাপ্তির শর্ত পূরণ করতে গিয়ে চলতি অর্থবছরের শুরুতে ৯ শতাংশের ঊর্ধ্বসীমা তুলে নেয়া হয়। এখন প্রতি মাসের শুরুতে সিক্স মান্থস মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল বা স্মার্ট রেট ঘোষণা করা হচ্ছে। চলতি ডিসেম্বরের জন্য ঘোষিত স্মার্ট রেট ৭ দশমিক ৭২ শতাংশ। ব্যাংকগুলো এর সঙ্গে অতিরিক্ত ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদ যুক্ত করতে পারে। ফলে চলতি ডিসেম্বরে ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার দাঁড়ায় ১১ দশমিক ৪৭ শতাংশে। গাড়ি-বাড়ি কেনা বা ভোক্তা ঋণের ক্ষেত্রে সুদহার ১২ দশমিক ৪৭ শতাংশ। কারণ সিএমএসএমইসহ ভোক্তা ঋণের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ১ শতাংশ তদারকি বা সুপারভিশন চার্জ নেয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে প্রি-শিপমেন্ট রফতানি ও কৃষি ঋণের সুদহার এখন ১০ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
প্রসঙ্গত, দেশে বিরাজমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমানোর কথা বলে নীতি সুদহার বা রেপো রেট কয়েক দফায় বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সর্বশেষ গত ২৬ নভেম্বরও রেপো রেট আরো ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়ানো হয়। কয়েক দফায় বেড়ে বর্তমানে রেপো রেট ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। রেপো রেটের পাশাপাশি ব্যাংক ঋণের সুদহার ৯ থেকে বেড়ে সাড়ে ১১ শতাংশে গিয়ে ঠেকলেও মূল্যস্ফীতি কমেনি।
২০২১ সালের মাঝামাঝি থেকেই দেশের মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী। বাজারে প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে (নভেম্বরে) দেশের গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এর আগে অক্টোবরে মূল্যস্ফীতির হার ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছিল। আর আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে ছিল যথাক্রমে ৯ দশমিক ৯৮ ও ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
Related Posts
The Journey of Political Rights and Civil Liberties in Bangladesh
Bangladesh’s Deadliest Natural Disasters: A Grim Chronicle of Nature’s Fury
Bangladesh’s Rising Military Power: A 2024 Snapshot