বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে করদাতাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্যে সরাসরি অ্যাক্সেস বা প্রবেশাধিকার চায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। কর ফাঁকি রোধ করার লক্ষ্যে এই সুবিধা চায় এনবিআর।
এতে এনবিআর করদাতা ও ব্যবসায়ীদের ব্যাংকিং লেনদেনের তথ্য খুব সহজেই জানতে পারবে, যা তাদের অর্থের গতিপথ নজরদারিতে সহায়তা করবে।
এনবিআরের একটি সূত্র জানিয়েছে, ভ্যাট অনলাইন প্রজেক্ট অফিস এই লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কাজ করছে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকও এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এটি বাস্তবায়ন হলে ব্যাংকের কাছে চিঠি দিয়ে ব্যবসায়ীর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত তথ্য চাইতে হবে না, তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি সাপেক্ষে রাজস্ব বোর্ড সরাসরি তথ্যে প্রবেশাধিকার পাবে।
সেক্ষেত্রে ভ্যাট কমিশনারদের বিশেষ অনুমোদন দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, এবং শুধুমাত্র তাদের জন্য একটি কঠোর লগইন ব্যবস্থা থাকবে। সিকিউরড পাসওয়ার্ড এবং ওটিপি ব্যবহার করে এই এক্সেস পাবেন তারা।
ভ্যাট অনলাইন প্রজেক্টের পরিচালক কাজী মোস্তাফিজুর রহমান এই বিষয়ে বলেন, ‘এই কার্যক্রম শুরু আগে কিছু প্রস্তুতিমূলক কাজ করতে হচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংক সেটা ডেভেলপ করছে। আশা করছি, ডিসেম্বর থেকেই এটা চালু করা যাবে।’
এনবিআর বর্তমানে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি রাজস্ব কৌশল প্রণয়ন করছে, যার মধ্যে ব্যাংকের কাছে রক্ষিত করদাতাদের তথ্যে রাজস্ব প্রশাসনের প্রবেশাধিকারের বিষয়টিও রয়েছে।
এদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ব্যাংক হিসাবের তথ্যে এনবিআরকে সরাসরি অ্যাক্সেস দেওয়া হলে তাতে ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতি তৈরি হবে, ফলে ব্যাংকে লেনদেন কমে যেতে পারে। এই বিষয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব তাদের তাদের কেউ কেউ।
রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মো. আব্দুল মজিদ-ও এনবিআরের এমন ভাবনার সঙ্গে একমত নন। তিনি বলেন, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের গোপনীয় তথ্য, যা ব্যাংক আইনেও স্বীকৃত। এনবিআর বা কর কর্মকর্তারা যদি সবার অ্যাকাউন্টে প্রবেশাধিকার পায়– তা গোপনীয়তার নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে।
কোম্পানি আইনের বিশিষ্ট আইনজীবী তানজীব-উল আলম বলেন, বর্তমানে কাস্টমস ও ভ্যাট আইনে কর আদায়ের লক্ষ্যে এনবিআরকে এই ধরনের ক্ষমতা দেওয়া আছে। এখনকার আইনে রাজস্ব বোর্ডকে সর্বোচ্চ ক্ষমতা দেওয়া আছে। তাই একসময় ব্যাংকের যে গোপনীয়তা ছিল, তা আর নেই।’
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান এই উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন। তবে তা স্বচ্ছতার সঙ্গে করতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
ব্যাংক হিসাবে এনবিআরের সরাসরি অ্যাক্সেসের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে একটি ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার টিবিএসকে জানান, গত বছর তার অফিস থেকে প্রায় ১০০ জনের ব্যাংক হিসাব সংক্রান্ত তথ্য জানতে চাওয়া হলেও — ওই ব্যাংকটি দিতে পেরেছে মাত্র ৩০ জনের। বাকীদের হিসাব সংক্রান্ত তথ্য তাদের কাছে নেই বলে দাবি করে ব্যাংকটি।
এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে কারো হয়তো চারটি ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট আছে, বা সেগুলো দিয়ে লেনদেন করছে। কিন্তু ভ্যাট বিভাগের কাছে তথ্য দেয়া হয়েছে হয়তো দুটির। ফলে সঠিক ট্রানজেকশন জানা যাচ্ছে না। আবার কোন প্রতিষ্ঠান হয়তো ব্যাংক থেকে বিশাল অংকের লোন নিল। ওই টাকা কি বিনিয়োগ হয়েছে কি-না তাও সঠিকভাবে জানা সম্ভব হচ্ছে না।’ ব্যবসায়ী পর্যায়ে সঠিক ভ্যাট আদায়ের তথ্যও পাওয়া যাচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পুরান ঢাকায় বিভিন্ন মার্কেটে শত শত কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে। এসব লেনদেনের ওপর ট্রেড ভ্যাট হিসেবে ৫ শতাংশ ভ্যাট আদায় হওয়ার কথা। কিন্তু, এগুলোর সঠিক তথ্য জানা যাচ্ছে না।”
ব্যাংকের সাথে সংহতি হলে তা কীভাবে কাজ করবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোটি কোটি ব্যাংক হিসাবের তথ্য জানা সম্ভব নয়, কিংবা তার দরকারও নেই। ‘রিস্ক ম্যানেজমেন্ট এর মাধ্যমে ব্যাংক হিসাব শনাক্ত করা হবে- যাতে যেকোন সময় চাইলেই সেগুলোর তথ্য সংগ্রহ করা যায়।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, দেশে গত ডিসেম্বর নাগাদ ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা ছিলো ১৩ কোটি ৬২ লাখ, যেখানে মোট জমার পরিমাণ ছিল প্রায় ১৬ লাখ কোটি টাকা। এরমধ্যে ১ কোটি টাকার উপরে লেনদেন হয়েছে, এমন একাউন্টের পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার।
এনবিআরের ভ্যাট অনলাইন প্রজেক্ট অফিসের হিসাব অনুযায়ী, দেশে বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন (বিআইএন) নম্বরধারীর সংখ্যা ৪ লাখ ৫৭ হাজার, যার মধ্যে গত মাসে কর রিটার্ন জমা হয়েছে ৩ লাখের বেশি। অর্থাৎ, বিআইএন হোল্ডারদের এক-তৃতীয়াংশও রিটার্ন জমা দিচ্ছে না।
Related Posts
Bangladesh’s Economic Resilience: A Statistical Snapshot (2024)
Bangladesh’s Economic Ascent: A Journey from 1971 to 2024
Top Foreign Companies Investing in Bangladesh