Business Care News

Business News That Matters

picket fences, fence, fencing

প্রশ্নোত্তর সিরিজ – পর্ব ২১৮: হিংসুক প্রতিবেশীর ক্ষেত্রে করণীয়

প্রশ্নঃ আপনি বলেছেন হিংসুক লোকের কাজই তার শাস্তির জন্যে যথেষ্ট। আমার কিছু প্রতিবেশী অনেক বছর ধরে আমার পরিবারকে হয়রানি করছে। আমার বাসায় ভাড়াটিয়া এলে কি এক জাদুর বলে তাদেরকে আমার শত্রু বানিয়ে দেয়। আমি আমার ভাড়াটিয়াদের সাথে অত্যন্ত প্রো-একটিভ আচরণ করি, তারা বাইরের ঐ গ্রুপের দ্বারা প্রভাবিত। এক্ষেত্রে আমার কী করণীয়?


উত্তরঃ আসলে নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রা ভঙ্গ করার মতো মানুষ সব জায়গায়ই ছিল। এ নিয়ে দুই প্রতিবেশীর গল্প আছে। এক প্রতিবেশী অন্য প্রতিবেশীকে দেখতে পারে না। ‘ক’ ‘খ’-কে দেখতে পারে না। ‘ক’ শুনল ‘খ’ একটা শুভ কাজে যাত্রা করছে।

তখনকার দিনে সংস্কার ছিল যে, যাত্রার সময় নাক কাটা লোক দেখলে তার যাত্রা নষ্ট হয়ে যাবে, যাত্রা অশুভ হবে। তো ‘ক’ দেখল ‘খ’ যাবেই এবং গেলে সেখানে তার অনেক মঙ্গল হবে। কীভাবে তার যাত্রা নষ্ট করা যায়? যখন আর কোনো উপায় খুঁজে পেল না, তখন নাপিতকে বলল, আমার নাকটা কেটে দে। কাটা নাক নিয়ে ওর সামনে গিয়ে দাঁড়াব, তাহলে সে আর যাত্রার শুভ ফল পাবে না।

আসলে মনে রাখবেন, ঈর্ষা যারা করে তাদের কাজই তাদের পরিণতি ডেকে আনে। ঈর্ষার মাধ্যমে একজন মানুষ যে কীভাবে নিজের সর্বনাশ  নিজে ডেকে আনে সুফিদের অনেক গল্প আছে। ইমাম বাকেরের এই গল্পটি তার একটি।

এক রাজার দরবারে এক জ্ঞানী লোক ছিল। রাজা তাকে খুব পছন্দ করতেন। দরবারে তাকে নিজের পাশে বসাতেন। রাখতেন সবসময় সাথে সাথে।

এসব আবার দরবারের আরেক সভাসদ-তার  কাছে খুব খারাপ লাগত। হিংসায় তার মনটা জ্বলে-পুড়ে যেত। সারাক্ষণ খালি ভাবত, কীভাবে এই ব্যাটাকে একটা আচ্ছা শাস্তি দেয়া যায়। ভাবতে ভাবতে বুদ্ধি পেয়েও গেল। এমন এক ফন্দি আঁটল যে, তার শত্রু চিরতরে তার পথ থেকে সরে যাবে।

পরিকল্পনামতো ঐ সভাসদ পর দিন এসে রাজাকে বলল, জাঁহাপনা, আপনার এত পছন্দের সভাসদ অমুক তো সবাইকে বলে বেড়াচ্ছে যে, আপনার মুখে ভীষণ দুর্গন্ধ। গন্ধের চোটে কেউ আপনার কাছে আসতে পারে না। আর এলেও তাকে নাকে রুমাল চাপা দিয়ে আসতে হয়।

রাজা তো শুনেই খেপে গেলেন-কী বললে? বিশ্বাস করি না। অমুক এরকম কথা বলতেই পারে না।

হিংসুটে লোকটি বলল, জাঁহাপনা, তাকে একটু ডাকুন। তাহলেই আপনি সব বুঝতে পারবেন।

রাজা বললেন, আচ্ছা, তুমি যাও। এটা নিয়ে তোমার সাথে পরে কথা বলব।

এদিকে হিংসুটে লোকটি বাড়িতে গিয়ে সেই রাতেই দাওয়াত দিলো রাজার সেই প্রিয় সভাসদকে। আর বাবুর্চিকে ডেকে বলল, শোনো, আজ রাতে মেহমানকে যে খাবারগুলো দেবে তাতে প্রচুর রসুন দিয়ে রান্না করবে।

রাতে রাজার প্রিয় সভাসদ দাওয়াত খেতে এল। অনেক রাত পর্যন্ত গল্পটল্প করল। হিংসুটে লোকটি মনে মনে বলতে লাগল, ব্যাটা আজই তোর জীবনের শেষ দিন।

খাওয়া-দাওয়া শেষে অনেক রাতে বাড়ি ফিরে সভাসদটি শুনল যে, আগামীকাল সকালে জরুরি ভিত্তিতে রাজা তাকে ডেকেছেন।

সকালে উঠে সে তৈরি হয়ে বেরোতে যাবে। হঠাৎ খেয়াল করলো তার মুখে প্রচন্ড দুর্গন্ধ। বুঝল, গতরাতে যে খাবারগুলো খেয়েছে তাতে প্রচুর রসুন ছিল। তাই এই অবস্থা।

যা-ই হোক, এখন আর কী করবে? কিছুক্ষণ দাঁত মাজামাজি করল, গরম পানি দিয়ে কুলি করল। কিন্তু তারপরও গন্ধ যায় না। এদিকে রাজার কাছে যাওয়ার জন্যে তার দেরি হয়ে যাচ্ছে।

শেষমেশ বাধ্য হয়ে ঐ অবস্থাতেই বের হয়ে গেল। দরবারে রাজা তাকে খুব ভালো করে খেয়াল করতে লাগলেন। বললেন, কেমন আছো? আজ এত দূরে কেন? তুমি তো সবসময় আমার কাছে কাছেই থাকতে।

বলল, জাঁহাপনা, সবসময় তো আমিই থাকি। আজ একটু অন্যদের সুযোগ করে দিতে চাই।

এই-তো রাজার মনে সন্দেহ ঢুকে গেল। ‘তাহলে তো ঠিকই বলেছে।’ তিনি গম্ভীর মুখে বললেন, ‘না, তুমি আসো আমার কাছে। আমার পাশের এই চেয়ারটায় বস।’

অন্যসময় হলে এরকম সুযোগ পেলে সভাসদটি যারপরনাই খুশি হতো। কিন্তু আজ তার আত্মাটা যেন কেঁপে উঠল। ভয়ে ভয়ে সে রাজার কাছে গেল। আর মাথার পাগড়িটা দিয়ে ভালো করে মুখটা বেঁধে নিলো।

রাজা এবার নিঃসন্দেহ হলেন, তাহলে তো ঠিকই আছে। মুখে কাপড় বেঁধে এসেছে। তার মানে আমার মুখে গন্ধ আছে মনে করেই সে এটা করেছে। কাজেই ও যে বলল, সে নাকি বলে বেড়াচ্ছে আমার মুখে গন্ধ আছে একথা ঠিক।

রাজা ভীষণ রেগে গেলেন। তবে রাগটা প্রকাশ করলেন না। শুধু একটা চিরকুটে কিছু লিখে তাকে দিয়ে বললেন, এই চিরকুটটা নিয়ে অমুকের কাছে যাবে। সে তোমাকে তখন যা করতে বলবে, তুমি তা-ই করবে।

এদিকে এই রাজার একটা অভ্যাস ছিল যে, তিনি যখন কাউকে কোনো উপহার, কোনো ক্ষমতা, জায়গীরদার ইত্যাদি দান করতেন, তখন তা চিরকুটে লিখে দিতেন। উপস্থিত সবাই এবারও তা-ই মনে করল।

চিরকুট হাতে নিয়ে প্রিয় সভাসদটি যখন বেরোতে যাবে তখন হিংসুটে লোকটি তাকে পাকড়াও করল। সেতো ভাবছে, কোথায় আমি এতকিছু করলাম তাকে রাজার কাছে মৃত্যুদন্ড পাওয়ার ব্যবস্থা করতে, আর এখন কি না সে উপহারের চিরকুট নিয়ে যাচ্ছে!

সে বলল, দেখ, এই চিরকুটটা আমাকে দিয়ে দাও। আমি যাবো চিরকুট নিয়ে। প্রিয় সভাসদ বলল, ঠিক আছে বন্ধু, তুমিই যাবে। এটা তোমাকেই দিয়ে দিচ্ছি।

চিরকুটটা নিয়ে সে যখন রাজার লোকের কাছে গেল, তখন রাজার লোকটি চিরকুট পড়ে বলল, তুমি কি জানো এই চিরকুটে কী লেখা আছে? এই চিরকুটে লেখা আছে, পত্রবাহকটি পৌঁছামাত্র তার মাথা কেটে ফেলবে এবং তার চামড়া ছিলে তাতে খড় ভরে আমার কাছে পাঠাবে।

শুনে তো হিংসুটে লোকটির মাথা খারাপ হওয়ার যোগাড়। সে চিৎকার করে বলতে লাগল, শোনো, শোনো এই মানুষটি আমি নই। এটা অন্য একজনের কথা বলা হয়েছে। দয়া করে আমাকে কতল করো না। আমার কথা রাজা বলেন নি।

রাজার লোক এটা শুনে বলল, দেখ, এখানে তুমি না অন্য কে সেটা তো আমার দেখার বিষয় না। রাজা লিখেছেন পত্রবাহকের কথা। এখন এই পত্রবাহক তো তুমি ছাড়া আর কেউ নও। তুমিই তো পত্রটা নিয়ে এখান পর্যন্ত এসেছো। কাজেই তোমাকেই আমার কতল করতে হবে—এই বলে সে তার মাথাটা কেটে চামড়া ছিলে রাজার কাছে পাঠিয়ে দিলো।

এদিকে প্রিয় সভাসদটি যখন দরবারে ফিরে এলো, রাজা তো অবাক।  কি হলো, তুমি যাও নি চিরকুট নিয়ে? সে বলল, জাঁহাপনা, আপনি আমাকে উপহার দিয়েছেন শুনে আমার এক বন্ধু সেটা চাইল। আর আমিও দিয়ে দিলাম।

রাজা জিজ্ঞেস করলেন, কে সে বন্ধু? নাম শুনে রাজা তো বুঝলেন এ-ই তো সে, যে তার কাছে এর নামে অভিযোগ করেছিল। ব্যাপারটা তার কাছে একটু অন্যরকম মনে হলো। সব খুলে বলতে বললেন রাজা তাকে।

সব শুনে তিনি বুঝলেন, সবকিছু আসলে হিংসুটে লোকটির কারণেই হয়েছে। আর তার হিংসার পরিণাম তাকেই ভোগ করতে হলো। অন্যের জন্যে যে গর্ত সে খুঁড়েছিল সেই গর্তে সে নিজেই পড়ল।

তথ্যসূত্রঃ প্রশ্নোত্তর | কোয়ান্টাম মেথড

Skip to content