Business Care News

Business News That Matters

meditation, breath, yoga, Visualization

প্রশ্নোত্তর সিরিজ – পর্ব ৬১ঃ মনছবি কীভাবে সফলতা লাভ করবে?

প্রশ্নঃ মনছবি কীভাবে সফলতা লাভ করবে?


উত্তরঃ সাফল্য ও আত্ম-উন্নয়নের মূল সূত্র হচ্ছে আমি বাস্তবে যা হতে চাই প্রথমে কল্পনায় তা হওয়া। কেন? ঔপন্যাসিক কূট ভনেগার্টের ভাষায়, ‘আমরা নিজেদের সম্পর্কে যা কল্পনা করি আমরা আসলে তাই।’ ব্রেনের ভাষা হচ্ছে ছবি বা ইমেজ। আমাদের চিন্তা প্রধানত আমাদের মনের পর্দায় প্রতিফলিত ছবিগুলোর বিশ্লেষণ মাত্র। আমরা আমাদের নিজেদের ও পারিপার্শ্বিকতা সম্পর্কে যে ছবি মনে মনে আঁকি তা আমাদের অনুভূতি, আচরণ ও কর্মতৎপরতাকে প্রভাবিত করে। ফলে মনে মনে নিজের যে ছবি আঁকি, ধীরে ধীরে আমরা তাতেই পরিণত হই।

আমরা যখন একাগ্র কল্পনায় আমাদের লক্ষ্যের ছবি মনের মুকুরে গেঁথে দেই তখন তা ব্রেন ও নার্ভাস সিস্টেমকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে লক্ষ্য অর্জনের পথে পরিচালিত করে। অনেকটা স্ব-নিয়ন্ত্রিত মিজাইলের (self guided missile)- এর মতো। এই মিসাইলের টার্গেট আগে থেকে নির্ধারিত থাকে। এর কোনো দিক-নির্দেশনার প্রয়োজন হয় না। এটি নিজের পথে এগিয়ে চলে এবং ইতিবাচক ফিডব্যাক দ্বারা (অর্থাৎ যে ফিডব্যাক বলছে সে সঠিক পথে আছে সেই ফিডব্যাক দ্বারা) প্রভাবিত হয় না।

কিন্তু যখনই সে তার লক্ষ্যপথ থেকে বিচ্যুত হতে শুরু করে তখনই সে প্রাপ্ত নতুন তথ্য দ্বারা প্রভাবিত হয়। অর্থাৎ মিসাইলের গাইডেন্স সিস্টেম যখন খবর পেলো যে, সে নির্দিষ্ট গতিপথ থেকে বামদিকে সরে গেছে, তখন এর পথ-সংশোধনী যন্ত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে একে ডানদিকে পরিচালিত করে। ডানদিকে যেতে গিয়ে যদি আবার বেশি ডানে চলে যায়, তাহলে আবার তা বামদিকে গতি পরিবর্তন করে। এভাবে প্রতিনিয়ত ভুল সংশোধন করতে করতে মিসাইলটি সামনে অগ্রসর হয় এবং একসময় লক্ষ্যবস্ত্ততে আঘাত হানে।

মনছবিও কাজ করে একই প্রক্রিয়ায়। মনছবির মাধ্যমে লক্ষ্যের ছবি অবচেতন মনে বসিয়ে দিলে অবচেতন মন স্বয়ংক্রিয়ভাবে সে লক্ষ্যে পৌঁছার জন্যে তার অসীম শক্তিকে নিয়োগ করবে। দিবানিশি কাজ করে যাবে। প্রয়োজনে পথ সংশোধন করবে। প্রয়োজনে আপনার দৃষ্টিভঙ্গিকে পাল্টে দেবে। আরও চিন্তা গবেষণায় আপনাকে নিয়োজিত করবে। দুর্দমনীয় আগ্রহ ও উদ্যম সৃষ্টি করবে। নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছার জন্যে যা যা করা দরকার তা করার জন্য ভেতরে একটা তাড়না সৃষ্টি করবে। আপনাকে নিয়ে যাবে লক্ষ্যপানে। একটি প্রাচীন গল্পের মধ্য দিয়ে এ বিষয়টি আরো ভালোভাবে বোঝা যাবে।

তুরস্কের তাঁতীকন্যা ফাতিমা- ছোটবেলা থেকেই তার স্বপ্ন ছিলো সে রাজরানী হবে, তার ঐশ্বর্যকে সে ব্যয় করবে দুস্থ-বঞ্চিতদের কল্যাণে। এক গরিব তাঁতী কন্যার তুলনায় স্বপ্নটা অনেক বড় বৈকি। কিন্তু সারাদিন কাপড় বুনতে বুনতে সে এ স্বপ্নই দেখে। অবশেষে তার পীড়াপীড়িতে বাধ্য হয়ে বাবা তাকে নিয়ে যাত্রা করলেন বসরার পথে। পথিমধ্যে ঝড়ের কবলে পড়ে নৌকাডুবি হলো। ফাতিমা হারিয়ে গেল। তার বাবার কাছ থেকে। সমুদ্রতীরে এক বৃদ্ধ জেলে তাকে পেয়ে নিয়ে গেল নিজের বাড়িতে। সেখানে ফাতিমা শিখলো জাল বুনতে।

কিছুদিন পর আবার তার জীবনে নেমে এলো দুর্বিপাক। জলদস্যুরা তাকে অপহরণ করে বিক্রি করলো বাগদাদের এক সওদাগরের কাছে ক্রীতদাসী হিসেবে। সওদাগরের ছিলো জাভা থেকে কাঠ আমদানি করে নৌকা বানানোর ব্যবসা। ইতোমধ্যে কয়েকবার জাহাজডুবিতে সওদাগরের যখন বেশ ক্ষয়ক্ষতি হলো, লোকজন তাকে ছেড়ে চলে গেল। তখন বুদ্ধিমতী ও বিশ্বস্ত ফাতিমা মনিবের পাশে দাঁড়ালো। মনিব তাকে ব্যবসায়ে অংশীদার করলেন। ফাতিমা কাঠ আনতে সমুদ্র পথে জাভার উদ্দেশ্যে রওনা করলো। কিন্তু আবার ঝড়, আবারও নিরুদ্দেশে ভেসে যাওয়া। এবার ফাতিমা গিয়ে পড়লো চীন দেশে। জ্ঞান ফিরে সে দেখলো মহাসমারোহে তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে রাজপ্রাসাদে।

ঘটনা ছিলো এরকম- চীনদেশের রাজপুত্রের বিয়ে সম্পর্কে রাজ-জ্যোতিষী ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, হবু কনে পূর্ণিমার রাতে সমুদ্র থেকে আসবে, যার ভাষা, চেহারা হবে আলাদা এবং সে তাঁবু বানাতে পারবে। ফাতিমার ক্ষেত্রে এর প্রতিটিই মিলে গেল। পূরণ হলো ফাতিমার আজন্ম লালিত স্বপ্ন।

আসলে এটাই মনছবি। এগিয়ে চলে এরকম জীবনব্যাপী। জীবনের নানা ঘটনা, বাঁকগুলোতে প্রো-একটিভ থেকে নীরবে কাজ করে গেলেই আসে চূড়ান্ত সাফল্য।

তথ্যসূত্রঃ প্রশ্নোত্তর | কোয়ান্টাম মেথড

Skip to content