Business Care News

Business News That Matters

success, victory, finish line

Photo by Pixabay

প্রশ্নোত্তর সিরিজ – পর্ব ২৫৭: সমান প্রস্তুতি নেয়ার পরেও যখন ফলাফল ভিন্ন!

প্রশ্নঃ সবরকম প্রস্তুতি নেয়ার পর ফলাফল খারাপ হলে কী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করব? আল্লাহ ভালোর জন্যে করেছেন—এ দৃষ্টিভঙ্গি অনেক সময় নিজেকে আশ্বস্ত করতে পারে না। বিশেষ করে যখন দেখি সরাসরি দৃশ্যমান বা বেশ কজন একসাথে সমান প্রস্তুতি নেয়ার পরে ফলাফল বিভিন্ন হয়।


উত্তরঃ বেশ কজন যদি একসাথে প্রস্ত্ততি নেয় তাহলে ফলাফল এক কীভাবে হবে? ধরুন, একটা দৌড় প্রতিযোগিতায় ১৬ জন দৌড়াচ্ছে। প্রস্তুতি তো সবার একটি লক্ষ্যেই—ফার্স্ট হওয়া। কিন্তু ১৬ জন তো আর ফার্স্ট হতে পারবে না। কেউ ফার্স্ট হবে, কেউ সেকেন্ড হবে, কেউ থার্ড হবে, কেউ ফোর্থ হবে। কেউ আবার এত পেছনে থাকবে যে, মনে হবে সে অন্যদেরকে তাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। অন্যরা তার ভয়ে দৌড়াচ্ছে। অতএব এটা তো হবেই এবং এ অবস্থাতেও বলতে হবে—শোকর আলহামদুলিল্লাহ, বেশ ভালো আছি!

অনেক সময় প্রস্ত্ততি নিয়েও কিন্তু না হলে ভালোই হয়। কীভাবে? ছোট ঘটনা বলি, কোয়ান্টামের ইতিহাস থেকে বলি—১৯৯৩ সালের পহেলা জানুয়ারি আমরা কোয়ান্টামের প্রথম প্রোগ্রাম করার সিদ্ধান্ত নিলাম। উপলক্ষ হলো কোয়ান্টাম মেথড বইয়ের প্রকাশনা উৎসব। ছয় মাস আগে প্রোগ্রাম সেট করা। এদিকে বই আর শেষ হচ্ছে না।

রাতের পর রাত জাগছি, আপ্রাণ চেষ্টা করছি। কিন্তু তারপরও পারলাম না। যখন ১৫ ডিসেম্বরও পার হয়ে গেল, বুঝলাম—এ সময়ের মধ্যে এ বই আর প্রকাশ করা সম্ভব না। এদিকে প্রধান অতিথি হিসেবে জাতীয় অধ্যাপক প্রফেসর ডা. নুরুল ইসলামকে আমন্ত্রণ করা হয়ে গেছে। তিনি  সম্মতিও জ্ঞাপন করেছেন। ভাবতে লাগলাম কী করা যায়। সমাধান বেরিয়ে এলো। শিথিলায়ন মেডিটেশনের ক্যাসেট করা।

মেডিটেশনের স্ক্রিপ্ট তো তৈরিই ছিল। স্টুডিওতে গিয়ে রেকর্ডিং করে প্রচ্ছদসহ এটাকে এক তারিখের আগেই করে ফেলা গেল। বই প্রকাশনা অনুষ্ঠান বদলে হয়ে গেল ক্যাসেটের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান। পাবলিক লাইব্রেরিতে ক্যাসেট প্রকাশনা হলো। আলোচনা হলো শিথিলায়নের ওপরে।  আলোচনার পর সাংবাদিকরা বললেন—ক্যাসেটে আসলেই মেডিটেশন হয় কি না এটা তো দেখতে হবে। ব্যস, ক্যাসেট বাজিয়ে দেয়া হলো।

বিকেলবেলা দুই ঘণ্টা আলোচনার পর যখন এ মেডিটেশন ক্যাসেট চালিয়ে দেয়া হলো তখন হলের অধিকাংশ দর্শকই নাক ডাকিয়ে ঘুম। সবাই মনে করলেন এতো মহা মেডিটেশন হয়ে গেছে! কেউ মনে করলেন এতো এক অদ্ভুত ব্যাপার। একজন ক্যাসেট শুনিয়ে হলভর্তি মানুষকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে। এমন দৃশ্যে সাংবাদিকরাও খুব আপ্লুত হয়ে গেলেন। পরদিন তখনকার সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক ইত্তেফাকে প্রথম পৃষ্ঠায় বক্স আইটেম নিউজ হলো ‘আচ্ছন্ন তন্দ্রায় নাক ডাকা প্রশান্তি’। আমাদের অফিসে একের পর এক ফোন আসতে লাগল। সবাই জানতে চাইল—কী নাকি একটা মেডিটেশনের ক্যাসেট বেরিয়েছে। এটি আমাদের চাই। আলোচনা গুঞ্জন সবমিলিয়ে এক এলাহি কান্ড। যদি এটা বইয়ের প্রকাশনা হতো তাহলে এরকম ব্যতিক্রম ঘটনাও ঘটতো না, খবরটা প্রথম পাতায় আসতো না। বড়জোর ভেতর পাতায় ছোট করে একটা নিউজ হতো।

তার মানে যখন সবরকম প্রস্তুতি নেয়ার পরও ব্যর্থ হবেন, মনে করবেন— এটা না হওয়ার মধ্যেই আপনার কল্যাণ আছে। আপনি সচেতনভাবে চাইলেও আপনার অতিচেতন মন চাইছে না এবং হয়তো কোনো অসুবিধা আছে বা নতুন ভালো সম্ভাবনা আছে, তাই বিঘ্ন সৃষ্টি করছে।

দ্বিতীয়ত, তখন বইটি বেরোলে এতে বড় রকমের একটা ভুল থেকে যেত। কারণ ঐ বইয়ে আমরা মনের বাড়ির দরবার কক্ষ বা ড্রয়িংরুমকে লিখেছিলাম ‘রেস্টরুম’। পরে আমাদের প্রথম কোর্সটি যখন হোটেল সোনারগাঁয়ে হচ্ছিল তখন একদিন ওখানকার টয়লেটে গিয়ে দেখি লেখা ‘রেস্টরুম’! কী হাস্যকর ভুল করতে যাচ্ছিলাম বোঝার সাথে সাথে শুকরিয়া আদায় করলাম। কারণ যে বইটি বের করার এত চেষ্টা করেও করতে পারছিলাম না তা যদি তখন বেরোতো তাহলে তাতে এই হাস্যকর ভুলটি থেকে যেত। আর তখন কী অবস্থা হতো তা সহজেই অনুমেয়। ছাপা হয়ে যাওয়া বইগুলো তুলে আনার আর্থিক ক্ষতি ছাড়াও ভাবমূর্তির যে ক্ষতি হতো তা তো অপূরণীয়।

কাজেই সবরকম প্রস্ত্ততি নেয়ার পর ফলাফল খারাপ হলে আল্লাহ ভালোর জন্যে করেছেন—এ দৃষ্টিভঙ্গির চেয়ে সঠিক আর কিছু নেই। কারণ আপনি কাজ করতে পারেন। ফলাফল দেয়ার মালিক তো আল্লাহ। কিসে আপনার মঙ্গল সেটা তো আপনার চেয়ে আল্লাহ ভালো জানেন। আর সবসময় মনে রাখবেন, আপনি যে কাজ করছেন এই কাজের তাৎক্ষণিক ফল আপনি না-ও পেতে পারেন। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, আপনার কাজ বৃথা গেছে।

কর্মজীবনে এটা সবসময় অনুসরণ করবেন। আপনি আপনার কাজ করে যান, আপনার এখনকার প্রতিষ্ঠান যদি আপনাকে মূল্যায়ন করতে না পারে বা না করে, আপনি এমন জায়গায় যাবেন যেখানে আপনি মূল্যায়ন পাবেন। আপনার কাজ কখনো বৃথা যাবে না, চেষ্টা কখনো বৃথা যাবে না, পরিশ্রম কখনো বৃথা যাবে না এবং আল্লাহ তায়ালা ফল নিয়ে চিন্তা করতে বলেন নি। বলেছেন, তুমি কাজ নিয়ে চিন্তা কর। আপনি কাজ করুন। ফল যিনি দেয়ার তিনি দেবেন এবং তিনি ফল দেবেনই। কারণ তিনি ফল দেয়ার ব্যাপারে ওয়াদাবদ্ধ। কখনো আগে, কখনো পরে।

মূল: প্রশ্নোত্তর | কোয়ান্টাম মেথড

Skip to content