প্রশ্নঃ শেয়ার ব্যবসা করা কি হারাম? আমার বড় ভাই শেয়ার ব্যবসা করেন। কিছু লোক বলে, এটি নাকি লটারির মতো। আবার কেউ বলে, শেয়ার ব্যবসা করা আর সুদ খাওয়া সমান। দয়া করে বলবেন আসলে এটা কী?
উত্তরঃ আসলে শেয়ারের দুটি ক্ষেত্র আছে। একটি হচ্ছে প্রাইমারি শেয়ার। প্রাইমারি শেয়ার সাধারণত কম ঝুঁকির। যেমন, আপনি কোনো কোম্পানির একটি শেয়ার কিনলেন। কোম্পানি লাভ করলে আপনি লাভ পাবেন, লাভ না করলে আপনি লাভ পাবেন না। এটি অর্থ বিনিয়োগের একটি মাধ্যম। তাই প্রাইমারি শেয়ারের বিষয়টি অন্যরকম। আর সাধারণভাবে শেয়ার ব্যবসা বলতে বোঝায় শেয়ার মার্কেট যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এটি লটারি না, এটি স্রেফ জুয়া। যে-কোনো মুহূর্তে জুয়ার মতো আপনার টাকা ‘নাই’ হয়ে যেতে পারে।
দ্বিতীয়ত, সারা পৃথিবীতে শেয়ার মার্কেট হচ্ছে মাফিয়া চক্রের নিয়ন্ত্রণে। এটি শোষকদের শোষণের একটি ফাঁদ। মানুষকে কর্মবিমুখ করে তোলার ফাঁদ। আমাদের দেশে শেয়ার মার্কেটে প্রতিদিন প্রায় হাজার কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে। অর্থনীতিতে এর অবদানটা কী? হাজার কোটি টাকার তো কোনো শিল্প গড়ে উঠছে না।
একসময় মতিঝিলের রাস্তায় দাঁড়িয়ে এ শেয়ার বেচাকেনা করা হতো। এখন লোকজন এসি রুমে বসে কম্পিউটারেই শেয়ার কেনাবেচা করছে। একশ্রেণীর শ্রমবিমুখ লোক সারাদিন মনিটরের দিকে তাকিয়ে থাকছে, চা-কফি খাচ্ছে আর গল্পগুজব করছে। সারাদিনে তাদের আর কোনো কাজ নেই। ২০১০ সাল নাগাদ প্রায় ৩৪ লক্ষ লোক নাকি এই শেয়ার মার্কেটের সাথে জড়িত হয়েছে, যারা উৎপাদনমুখী কোনো কাজ করছে না।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগকৃত এ টাকার উৎস হচ্ছে বিদেশ থেকে আত্মীয়স্বজনদের পাঠানো অর্থ। শরীরের রক্ত ঘাম করে যারা দেশে টাকা পাঠাচ্ছেন, তাদের স্বজনরা এ টাকাগুলো আগে জায়গাজমি কিনতে বিনিয়োগ করত, যা এখন শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করছে। হঠাৎ একদিন তারা দেখছে যে, পুরো টাকাটা শেষ হয়ে গেছে। অতএব, শেয়ার ব্যবসা হারাম না হালাল—এ বিষয়ে মওলানা সাহেব যারা আছেন, তারা ফতোয়া দেবেন। বাস্তবতা হলো, এর চেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ আর নেই। শেয়ার বাজারকে এক কথায় জুয়া বাজারই বলা যায়।
আপনার কষ্টার্জিত সম্পদ নষ্ট করার সবচেয়ে সহজ উপায় এটি। আপনার টাকা চলে যাবে ঐ মাফিয়া চক্রের হাতে। কারণ তাদের টেকনিকটা খুব সহজ। তারা একটি শেয়ারের দাম বাড়াতে থাকে, যার আসলে কোনো মূল্যই নেই। সেটা নিজেরা কিনতে থাকে। এভাবে সেই শেয়ারের দাম বাড়তে থাকে। সাধারণ মানুষ তখন ঐ শেয়ারের প্রতি আগ্রহী হয়। এরপর যারা পরিকল্পনা করে দাম বাড়িয়েছিল তারা সেই শেয়ারটা বিক্রি করতে থাকে আর মানুষ কিনতে থাকে। যখন তাদের কাছে থাকা শেয়ারগুলো সব মানুষের হাতে চলে যায় তখন হঠাৎ করে এর দাম পড়ে যায়। ফলে যারা বেশি দাম দিয়ে কিনেছিল তাদের টাকাগুলো তখন কাগজে পরিণত হয়ে যায়।
তাই সবসময় মনে রাখতে হবে যে, টাকা ও শ্রম—এ দুটো যখন একত্রিত হয় তখন তা হয় পুঁজি, তখন তা ফসল দেয়। আর শ্রম ছাড়া যে টাকা সেটা কখনো পুঁজিতে রূপান্তরিত হয় না। তাই তাদের টাকা নষ্ট হবেই। কারণ এ টাকার পেছনে কোনো শ্রম নেই। অতএব শেয়ার বাজার থেকে নিজে দূরে থাকবেন। বিরত রাখার চেষ্টা করবেন আপনার পরিচিতদেরও।
১৯৯৪ সাল থেকে আমরা সাধারণ মানুষকে সচেতন করে যে কথাগুলো বলে আসছি, সম্প্রতি শেয়ার মার্কেটে এই ঘটনাগুলোরই বাস্তবচিত্র প্রতিফলিত হচ্ছে। অর্থনীতির ভাষায় শেয়ারবাজার এখন মহামন্দার কবলে পড়েছে। বছরের প্রথম থেকে টানা পাঁচ মাস ধরে এ অবস্থা চলছে। পুঁজি হারিয়ে সম্পূর্ণ নিঃস্ব হয়েছেন লাখ লাখ বিনিয়োগকারী। পুঁজি হারিয়ে অনেকেই করেছেন আত্মহত্যা। রাজপথে ভাঙচুর, লাঠিপেটা, পুলিশের ধরপাকড়ও কম হয় নি। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা পুঁজি বিনিয়োগের নামে যদি এ জুয়ায় না জড়াতেন তাহলে এ করুণ পরিণতিতে পড়তে হতো না।