প্রশ্নঃ আমি জীবনে যতই কষ্ট করি, একসময় নিজেকে শূন্যের মধ্যে আবিষ্কার করি, আবার শূন্য থেকে আমাকে শুরু করতে হয়। সারাজীবন এ ব্যাপারটির পুনরাবৃত্তি হচ্ছে, কী করে এ বলয় থেকে মুক্তি পাব? যতই সুখের মনছবি দেখি পরিস্থিতি আমাকে চরম দুর্দশায় ফেলে দেয়। আমি কুম্ভরাশির জাতিকা। নীলা ও পান্না ব্যবহার করছি। অনুগ্রহ করে যদি পরামর্শ দেন।
উত্তরঃ এই নীলা ও পান্না পরে যে পয়সা খরচ করেছেন তা অর্থহীন। যদি পারেন এটা বিক্রি করে দিন। নইলে ফেলে দিন। পাথর যদি দুর্দশার বৃত্ত ভাঙতে পারতো তাহলে এস্ট্রলজাররা হতেন পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি।
আমি যখন এস্ট্রলজি পেশায় ছিলাম তখন এক ক্লায়েন্ট এসে বললেন, ‘আমাকে এমন একটা পাথর দিন, যাতে ছয় মাসের মধ্যে আমি কোটিপতি হয়ে যাই’। শুনে আমি হেসে বললাম, ওরকম পাথরের খোঁজ যদি আমি পেতাম তাহলে তো ঐ পাথর আগে নিজে পরতাম। আসলে পাথর কারো ভাগ্য বদলায় না। পাথর ব্যবহার করা হয় শারীরিক কারণে। রোগ-ব্যাধি নিরাময়ে কোনো কোনো পাথর উপকারী।
ভাগ্যসংক্রান্ত আমাদের এই যে বিভ্রান্তি, ‘এটা আমার ভাগ্য! আমার কপাল’! এগুলো আসলে কুসংস্কার—হাজার বছর ধরে আমাদের সামাজিক বঞ্চনা ও বর্ণবাদী চিন্তারই ফসল। যেমন, আগে নিম্নবর্ণের লোকদের দাস বানিয়ে রাখা হতো। বলা হতো, তুমি আগের জন্মে পাপ করেছিলে, তাই নিম্নবর্ণে জন্মগ্রহণ করেছো। এখন যদি উচ্চবর্ণের লোকদের ঠিকভাবে সেবা না কর তো পরের জন্মে পায়খানার কীট হয়ে জন্মগ্রহণ করবে।
এখন কে পায়খানার কীট হয়ে জন্মগ্রহণ করতে চায়? তখন সে ভয় পেয়ে ভাবে যে, যা-ই হোক, মানুষ আছি তো ঠিক আছি, কীট হতে চাই না। অতএব এই জন্মে যদি উচ্চবর্ণের লোকদের সেবাযত্ন করি তাহলে পরের জন্মে আমিও উচ্চবর্ণে জন্মগ্রহণ করব।
এই ভাগ্য বিশ্বাসটা হচ্ছে একটা ভ্রান্ত বিশ্বাস। কোরআন শরীফে সূরা রাদ-এর ১১ নং আয়াতে রয়েছে, ‘নিজেদের ভেতর থেকে পরিবর্তনের সূচনা না করলে (অর্থাৎ দৃষ্টিভঙ্গি না বদলালে) আল্লাহ কোনো জাতির অবস্থার পরিবর্তন করেন না’। ‘আনফুসিকুম’ অর্থাৎ নিজের ভেতরের যে দৃষ্টিভঙ্গি, এই দৃষ্টিভঙ্গিকে পরিবর্তন না করলে ভাগ্য পরিবর্তিত হবে না। ভাগ্য পরিবর্তন সবসময় নির্ভর করে দৃষ্টিভঙ্গির ওপর। যে কারণে আমরা বলি, ‘দৃষ্টিভঙ্গি বদলান জীবন বদলে যাবে’।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হওয়াটা ভাগ্য হতে পারে কিন্তু খ্যাতিমান হওয়া নির্ভর করে নিজের ওপর। যেভাবে মহাকবি হোমার খ্যাতিমান হয়েছেন। হেলের কেলার মহীয়ান হয়েছেন। আসলে যা কিছুকে আমরা সুখ মনে করি, তা নির্ভর করে নিজের ওপরে, আপনার দৃষ্টিভঙ্গির ওপর, আপনার মুক্ত বিশ্বাসের ওপর।
সাফল্যও নির্ভর করে আপনার মুক্ত বিশ্বাসের ওপর, আপনার কর্মের ওপর। যিনি যত পরিশ্রম করবেন তিনি তত সফল হবেন। পরিশ্রম করতে হবে সঠিক পদ্ধতিতে। কেউ কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সঠিক পথ পেয়ে যান, তাদেরকে আমরা বলি ভাগ্যবান। আর যদি কেউ ভুল পথে ঘোরাঘুরি করেন, তাদেরকে আমরা সান্ত্বনা দেয়ার জন্যে বলি, এর ভাগ্য খারাপ।
কিন্তু আসল কথা হচ্ছে, সে ভুল পথে চলছে। আর যিনি সফল, তিনি সঠিক পথটা বেছে নিতে পেরেছেন, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছেন। অতএব এই ব্যাপারটি আমাদের কাছে খুব পরিষ্কার থাকতে হবে যে, আপনার প্রজ্ঞাপূর্ণ কর্ম, মস্তিষ্কের উদ্ভাবনী ক্ষমতার প্রয়োগ, আপনার পরিশ্রমই আপনার সৌভাগ্য সৃষ্টি করবে।
তথ্যসূত্রঃ প্রশ্নোত্তর | কোয়ান্টাম মেথড
Related Posts
Q&A Series – Episode 292: Failure is the pillar of success!
Q&A Series – Episode 291: What exactly is visualization?
Q&A Series – Episode 290: How does visualization work?