প্রশ্নঃ আমাদের সমাজে বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকরি করাটাকে যোগ্যতার পরিচয় মনে করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের টিচারদের কথাতেও সেটাই বোঝা যেত। আমি ব্যক্তিগতভাবে এখন এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে বা আবেদন করতে দ্বিধান্বিত থাকি। কিছুদিনের মধ্যেই ক্যারিয়ার শুরু করতে যাচ্ছি। এখন আমার কী করা উচিত?
উত্তরঃ বহুজাতিক কোম্পানিগুলো আসলে অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদের প্রতিভূ হিসেবে কাজ করছে। ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো বিশ্বজুড়ে উপনিবেশ স্থাপনের মাধ্যমে সাম্রাজ্য বিস্তারের যে কাজ করেছে, বিংশ বা একবিংশ শতকে তা-ই নব্যরূপ নিয়েছে মাল্টিন্যাশনালের নামে। আর তাদের এ শোষণেরই হাতিয়ার হয়ে যাচ্ছেন নেটিভদের মধ্য থেকে যারা তাদের ওখানে কাজ করছেন তারা। এবং তারাও যে খুব ভালো আছেন তা নয়। কারণ এরকম একজন কর্মীকে বহুজাতিক কোম্পানিটি হয়তো বেতন দিচ্ছে ৪০ হাজার টাকা, কিন্তু সে তো তাকে দিয়ে চার লাখ টাকা উপার্জন করতে চাইবে। নইলে তারা এত বেতন কেন দেবে? কারণ মাল্টিন্যাশনাল তো আর সেবামূলক প্রতিষ্ঠান না। তারা তো নেট প্রফিট ছাড়া কোনোকিছু চিন্তা করে না। সেটার জন্যে যে পরিমাণ পরিশ্রম, তা করতে গিয়ে ঐ মানুষটিকে তার জীবনের অনেক মূল্যবান দিককে অবহেলা করতে হবে।
উপরন্তু কাজের কোনো তৃপ্তি এই কাজগুলোর মধ্য দিয়ে পাওয়া সম্ভব নয়। কারণ স্রেফ উপার্জনের জন্যে বা শোষণ করে টাকা কামানোর মধ্যে কোনো আনন্দ নেই, তৃপ্তি নেই যা আসে সেবা বা মিশন হিসেবে যে কাজ করা হয় তার মধ্য দিয়ে। ফলে স্ট্রেস, হতাশা, মানসিক অবসাদ, শারীরিক রোগ-ব্যাধি অবশ্যম্ভাবী। আপনি এর প্রমাণ দেখুন বড় বড় মাল্টিন্যাশনালের সিইওদের জীবনে। সাইকোলজি টুডে পত্রিকার রিপোর্ট হচ্ছে, আমেরিকায় প্রতি পাঁচজনে একজন সিইও ডিপ্রেশনে ভোগেন। কারণ কাজটা তার ভালবাসা নয়, এটা তার কাছে বিরক্তিকর একটা ব্যাপার।
বহুজাতিক কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে হৃদরোগ, বিষণ্ণতাসহ অন্যান্য রোগের যে প্রাদুর্ভাব এর অন্যতম প্রধান কারণ বিরক্তি সহকারে কাজ। বিরক্তি নিয়ে কোনো কাজ করলে তার বরকত কমে যায় এবং সেই কাজ করে সুস্থ থাকা যায় না। শরীরে টক্সিন সৃষ্টির অন্যতম কারণ বিরক্তি সহকারে কাজ করা।
আর মাল্টিন্যাশনালে কাজ করাটা একটা বৃত্তের মতো। একবার যখন আপনি মাল্টিন্যাশনালে ঢুকবেন, তখন বেশি বেতন, অফিস স্ট্যাটাস—সবকিছু মিলে আপনি একটা লাইফস্টাইলে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন। বেশি অর্থ দিয়ে থাকা খাওয়া চলা কেনা সবই হয়ে যাবে আপনার স্ট্যাটাস সিম্বল। ফলে এর চেয়ে নিচের অবস্থানে নামা আপনার পক্ষে সম্ভব হবে না। গাড়িতে চড়ে অভ্যস্ত হলে তখন চাইলেও আপনি রিকশায় চড়তে পারবেন না। দামি ফ্যাশন হাউস থেকে ব্র্যান্ড পোশাক কিনতে কিনতে ভিড়ের মার্কেট থেকে দরদস্ত্তর করে কেনাটা আপনার কাছে বিরক্তিকর মনে হবে। কাজেই তখন এই লাইফ স্ট্যাটাস বজায় রাখার জন্যে উচ্চবেতনের মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি ছেড়ে যাওয়ার কথা আর আপনি ভাবতে পারবেন না।
আসলে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি দুর্দশার এক ভিন্ন ধরনের বৃত্ত। আপাত লোভনীয় বেতন খরচ আর ক্রেডিট কার্ডের বৃত্তে আপনাকে জড়িয়ে ফেলবে। ক্রমাগত টিকে থাকার প্রতিযোগিতায় এদের অধিকাংশই স্ট্রেস, ডিপ্রেশন বা হৃদরোগে আক্রান্ত হন। তাই উদ্যমী ও পরিশ্রমী হলে স্বাধীন পেশা বা ব্যবসা করাই উত্তম।
তথ্যসূত্রঃ প্রশ্নোত্তর | কোয়ান্টাম মেথড
Related Posts
Q&A Series – Episode 292: Failure is the pillar of success!
Q&A Series – Episode 291: What exactly is visualization?
Q&A Series – Episode 290: How does visualization work?