প্রশ্নঃ আমি আইন বিষয়ে পিএইচডি করছি। ব্যবসায়ী বাবার একমাত্র আদুরে সন্তান। আমাকে দীর্ঘ ১৪ বছর যাবৎ একটি ছেলে পছন্দ করে। আমি তাকে বলি ফ্যামিলি যদি রাজি হয় আমার আপত্তি নাই। এই ১৪ বছরের মধ্যে ৩০ বারেরও বেশি আমাদের ব্রেক-আপ হয়েছে। আবার কীভাবে যেন ঠিকও হয়েছে। এর মধ্যে আমি একটা বিদেশি ফার্মে জব করি এবং ফেসবুকের মাধ্যমে একটি ছেলের সাথে আমার বন্ধুত্ব হয়, সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি। ছেলেটি শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী এবং সারাবছর অসুস্থ থাকে জেনেও আমি তার দায়িত্ব নিয়েই তাকে গ্রহণ করতে চাই। তার ব্যক্তিত্ব, সততা, আমাকে বোঝা, সবকিছু মিলিয়ে তার প্রতি আমার শ্রদ্ধাসহ ভালবাসা কাজ করে। কিন্তু এখন ফ্যামিলি থেকে সেই ছেলেটার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে, যাকে ১৪ বছর ধরে অপেক্ষা করতে বলেছি। আমি কী করব এখন বুঝতে পারছি না। পরিবারে আমি একটা দৃষ্টান্ত। ছোটদেরকে আমার মতো হতে বলা হয়। ছোট বড় আত্মীয় অনাত্মীয় সবাই জানে। এখন দ্বিতীয় ছেলেটার কথা বললে আমার ভাবমূর্তি নষ্ট তো হবেই আর আব্বু প্রচণ্ড কষ্ট পাবে। এদিকে এই অসুস্থ ছেলেটাকে যতটা ভালবাসি এই ৫০/ ৬০ বছরের আয়ুতে একসাথে থেকে সেই ভালবাসার প্রকাশ হবে না। তাই তাকে আমি মৃত্যুর পরে চাই। গুরুজী, তাকে তার অক্ষমতার জন্যে বিয়ে না করলে প্রকৃতির প্রতিদান হিসেবে আল্লাহ আমাকে, আমার সন্তানকে কি প্রতিবন্ধী করে দেবেন? খুব মানসিক কষ্ট হচ্ছে। আমাকে সঠিক পথ দেখান।
উত্তরঃ ১৪ বছর ধরে জানছেন, মিশছেন এমন একজনের চেয়ে ফেসবুকের দৌলতে পরিচয় হয়েছে এমন একজনকে মাত্র ক’দিনের পরিচয়েই চিনে ফেললেন! প্রতিষ্ঠিত ক্যারিয়ার, সচ্ছল পরিবার, মমতাময় প্রিয়জন- সবাইকে উপেক্ষা করে চলে যেতে চাচ্ছেন একজন প্রতিবন্ধীর দায়িত্ব (?) নেবেন বলে! ‘দায়িত্ব’ সম্পর্কে সত্যিই কি কোনো ধারণা আছে আপনার? ব্যবসায়ী বাবার একমাত্র আদুরে সন্তান হিসেবে বেড়ে উঠেছেন যে আপনি, তার পক্ষে এটা কতটা বাস্তব, সেটা কি ভেবে দেখেছেন?
আসলে ভার্চুয়াল ভাইরাসের সংক্রমণ আমাদেরকে যে কতটা বোধ-বুদ্ধিহীন করে তুলছে এটা তারই প্রমাণ! নইলে মাত্রই পরিচয় হয়েছে এমন একজনের ব্যাপারে কেউ কখনো এরকম হাস্যকর কথা বলতে পারে না যে, ‘ছেলেটাকে যতটা ভালবাসি এই ৫০/ ৬০ বছরের আয়ুতে একসাথে থেকে সেই ভালবাসার প্রকাশ হবে না। তাই তাকে আমি মৃত্যুর পরেও চাই।’ আরে মৃত্যু তো পরের কথা একসাথে ৫/৬ মাস থেকে দেখেন না, কত ধানে কত চাল! ফেসবুকের বায়বীয় পাতায় গোটাকয় মেসেজ চালাচালি করেই যদি মনে করেন ব্যক্তিত্ব, সততা, আপনাকে বোঝা – এসব গুণের (!) ভারে সে নুয়ে পড়ছে, আর তা দেখেই যদি বর্তে যান তো, আপনার চেয়ে আহাম্মক আর কেউ নেই।
এদিকে আবার তাকে প্রত্যাখ্যান করলে প্রকৃতি শাস্তি দেয় কি না সেই ভয়ে আপনি ভীত। কিন্তু আপনি তো তার চেয়ে বড় পাপ করছেন পরকীয়া করে। ১৪ বছর ধরে একজনকে পাণিপ্রার্থী করে রেখে কেউ যখন আরেকজনের প্রতি আকৃষ্ট হয়, আসক্ত হয়- সেটা পরকীয়া ছাড়া আর কী! তাকে যদি আপনার পছন্দ না হয় তো ‘না’ করে দিতেন। ঝুলিয়ে রাখলেন কেন? কেন বললেন, ফ্যামিলি দিলে আপনার কোনো আপত্তি নাই। আবার এখন আরেকজনের দিকে ঝুঁকেছেন! আপনি তো নৈতিক অপরাধ করেছেন! দুজনকে আশা দিয়ে রেখেছেন। একজন মেয়ে তো দুজনকে আশা দিতে পারে না। এটা অন্যায়। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান। আল্লাহ ক্ষমাশীল এবং তিনি চাইলে যে-কাউকে ক্ষমা করতে পারেন।
তথ্যসূত্রঃ প্রশ্নোত্তর | কোয়ান্টাম মেথড
Related Posts
Q&A Series – Episode 292: Failure is the pillar of success!
Q&A Series – Episode 291: What exactly is visualization?
Q&A Series – Episode 290: How does visualization work?