Business Care News

Business News That Matters

meditation, enlightenment, consciousness

প্রশ্নোত্তর সিরিজ – পর্ব ৭২ঃ মস্তিষ্কের ব্যবহার

প্রশ্নঃ মস্তিষ্ককে বেশি পরিমাণে ব্যবহার করার জন্যে কী করা উচিত?


উত্তরঃ মস্তিষ্করূপী বিস্ময়কর জৈব কম্পিউটার যথাযথভাবে ব্যবহার করার জন্যে প্রয়োজন সুসংহত মানসিক প্রস্তুতি। আর মানসিক প্রস্তুতির ভিত্তি হচ্ছে দৃষ্টিভঙ্গি, নিয়ত বা অভিপ্রায়। কারণ মন পরিচালিত হয় দৃষ্টিভঙ্গি বা নিয়ত দ্বারা। আর মস্তিষ্ককে চালায় মন। বিজ্ঞানীরা দীর্ঘ গবেষণা করেছেন মন ও মস্তিষ্কের সম্পর্ক নিয়ে। ড. এলেন গোল্ডস্টেইন, ড. জন মটিল, ড. ওয়াইল্ডার পেনফিল্ড ও ড. ই রয় জন দীর্ঘ গবেষণার পর বলেছেন, একজন প্রোগ্রামার যেভাবে কম্পিউটারকে পরিচালিত করে, তেমনি মন মস্তিষ্ককে পরিচালিত করে।

মস্তিষ্ক হচ্ছে হার্ডওয়্যার আর মন হচ্ছে সফটওয়্যার। নতুন তথ্য ও নতুন বিশ্বাস মস্তিষ্কের নিউরোনে নতুন ডেনড্রাইট সৃষ্টি করে। নতুন সিন্যাপসের মাধ্যমে তৈরি হয় সংযোগের নতুন রাস্তা। বদলে যায় মস্তিষ্কের কর্মপ্রবাহের প্যাটার্ন। মস্তিষ্ক তখন নতুন দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে নতুন বাস্তবতা উপহার দেয়। নতুন বাস্তবতা ভালো হবে না খারাপ হবে, কল্যাণকর হবে না ক্ষতিকর তা নির্ভর করে মস্তিষ্কে দেয়া তথ্য বা প্রোগ্রামের ভালো-মন্দের ওপর। কল্যাণকর তথ্য ও বিশ্বাস কল্যাণকর বাস্তবতা সৃষ্টি করে আর ক্ষতিকর তথ্য বা বিশ্বাস ক্ষতিকর বাস্তবতা উপহার দেয়।

ধরুন, ব্রেনে যদি প্রোগ্রাম দিতে থাকেন—পোড়া কপাল, পোড়া কপাল, পোড়া কপাল—ব্রেনের জন্যে এটা কমান্ড হয়ে যায় যে, কপালটাকে পোড়াতে হবে। অতএব যেখানে গেলে আপনি অপমানিত হবেন, কষ্ট পাবেন, যন্ত্রণা পাবেন ব্রেন ঘুরে ফিরে আপনাকে সেখানে নিয়ে যাবে যাতে অপমানিত হয়ে, লাঞ্ছিত হয়ে আপনি বলতে পারেন যে, ‘বলেছিলাম না, আমার পোড়া কপাল’। আবার ব্রেনে যদি প্রোগ্রাম দিতে থাকেন সাফল্য সাফল্য সাফল্য—তাহলে আপনি সাফল্যের সূত্র খুঁজে পাবেন। যেখানে গেলে সহযোগিতা পাবেন, ব্রেন আপনাকে ঘুরে ফিরে ওখানে নিয়ে যাবে। তাই মনের শক্তিকে সুনিয়ন্ত্রিত করতে পারলেই ব্রেনকে বেশি পরিমাণে ব্যবহার করতে পারবেন।

আর মনের শক্তিকে সুনিয়ন্ত্রণের জন্যে প্রয়োজন মেডিটেশন। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, মেডিটেশনের ফলে খোদ মস্তিষ্কেই ঘটেছে এমন কিছু পরিবর্তন যা একজন মানুষের বুদ্ধিমত্তাসহ তার বোঝার ক্ষমতা, স্মৃতিশক্তি, বিশ্লেষণী ক্ষমতা ও সৃজনশীলতাকে বাড়িয়ে দিতে পারে। এ নিয়ে নিউজউইক ম্যাগাজিনের ১০ জানুয়ারি ২০১১ সংখ্যায় একটি প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

বিজ্ঞানীরা বলেন, একজন মানুষের মস্তিষ্কের নিউরোন ও সিন্যাপসের (দুটি নিউরোনের মধ্যবর্তী সংযোগ পথ) সংখ্যাধিক্যের ভিত্তিতেই সৃষ্টি হয় উচ্চস্তরের বুদ্ধিমত্তা। আর গবেষণায় দেখা গেছে, ক্রমাগত মনোযোগ দিয়ে বিস্তৃত করা যায় এ সিন্যাপসকে। আরো দেখা গেছে, মস্তিষ্কের যে অংশটি আমাদের মনোযোগ নিয়ন্ত্রণ করে নিয়মিত মেডিটেশনে তার পুরুত্ব বেড়েছে। আর মেডিটেশনের মাধ্যমে মস্তিষ্ককে বেশি পরিমাণে ব্যবহার করার চূড়ান্ত যোগসূত্রটা হচ্ছে স্ট্রেস সারাতে মেডিটেশনের অব্যর্থ ফল। বিজ্ঞানীরা বলেন, স্ট্রেস নিউরোনের শত্রু। স্ট্রেসের ফলে নিঃসৃত কর্টিসোল হরমোন নিউরোনের মায়েলিন শিথ নামক আবরণকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, বাধাগ্রস্ত করে নিউরোনগুলোর আন্তঃপারস্পরিক যোগাযোগকে। মেডিটেশনের প্রথম লাভই যেহেতু প্রশান্তি, তাই একজন নিয়মিত ধ্যানী সবসময়ই সাধারণদের তুলনায় বুদ্ধিমান, প্রজ্ঞাবান এবং সফল বেশি।

তথ্যসূত্রঃ প্রশ্নোত্তর | কোয়ান্টাম মেথড

Skip to content