ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুদের প্রশিক্ষণ দিয়ে ঝুঁকিমুক্ত কাজে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগটি ভালো হলেও যেভাবে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে এবং কিছু অসাধু এনজিওকে যুক্ত করা হয়েছে, তাতে পুরো টাকাই অপচয় হতে চলেছে। আগামী মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা।
ঝুঁকিপূর্ণ কাজে জড়িত শিশুদের সরিয়ে ঝুঁকিমুক্ত কাজে ফিরিয়ে আনতে ২০১৮ সালে একটি প্রকল্প হাতে নেয় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। প্রকল্পের নাম বাংলাদেশ শিশুশ্রম নিরসন। এর আওতায় জরিপের মাধ্যমে ১০ থেকে ১৬ বছর বয়সী এক লাখ শিশুকে নির্বাচন করা হয়। এসব শিশুকে নয়টি বিষয়ের ওপর ছয় মাসের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ও চার মাসের দক্ষতা উন্নয়নের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
প্রকল্পের নথি অনুযায়ী প্রকল্পের কাজ পরিচালনায় ১১২টি এনজিও বা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাকে নিয়োগ দেয় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। কিন্তু এসব এনজিও শিশুদের যে তালিকা তৈরি করেছে, তাতে শ্রমজীবী শিশুর চেয়ে বিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিশুরাই অগ্রাধিকার পেয়েছে। সঙ্গে কথা বলে জেনেছে, তাদের কেউ ঝুঁকিপূর্ণ কাজে জড়িত ছিল না।
গত বছর ২৬ জানুয়ারি প্রকল্পের স্টিয়ারিং কমিটির সভায় শিশু জরিপ প্রতিবেদন নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছিল। এতে বলা হয়, অ্যাকশন-৫ নামের এটি এনজিও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের শিশুশ্রমিকের ওপর জরিপ করে। তাদের তালিকায় হাজারের বেশি নাম ছিল, যাদের মধ্যে ৩৬৬টি শিশুর তথ্য যাচাই–বাছাই করে দেখা যায়, মাত্র ২৫ শিশুটি প্রশিক্ষণ পাওয়ার যোগ্য।
প্রকল্পের সুবিধাভোগী যেসব শিশুর ওপর জরিপ করেছে, তাদের পরিবার থেকে জানানো হয়েছে, ওই শিশুরা কেউ ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। সাধারণ বিদ্যালয়ে পড়ুয়া বেশির ভাগ শিশুকে সেলাই মেশিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যা তাদের কোনো কাজে লাগেনি। ২০১৩ সালে শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজের যে ২৮টি তালিকা করা হয়, তার মধ্যে আছে টেম্পোর হেলপার ও ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ। অথচ রাজধানীর ফার্মগেট, নিউমার্কেট, মোহাম্মদপুর, জিগাতলা ও মিরপুর এলাকায় কর্মরত হেলপারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা এই কর্মসূচি সম্পর্কে কিছু জানে না।
এসব তথ্য-উপাত্ত থেকে এ সিদ্ধান্তে আসা ভুল হবে না যে পুরো প্রকল্পই অর্থ অপচয়ের উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। প্রকল্পের পরিচালক মনোয়ার হোসেন বলেছেন, যেভাবে প্রকল্পটি নেওয়া, একটি শ্রমজীবী শিশুও এখানে পড়াশোনা ও প্রশিক্ষণের জন্য আসবে না। প্রকল্পের সুবিধাভোগী শিশুদের এক হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হয়। অথচ এই শিশুরা বাইরে কাজ করলে অনেক বেশি আয় করে।
এসব পরিবারের শিশুদের ঝুঁকিমুক্ত পেশায় ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজন টেকসই পরিকল্পনা। শিশুশ্রমের ওপর যেসব পরিবার নির্ভরশীল, প্রয়োজনে তাদেরও আর্থিক সুবিধা দিতে হবে। কোন শিশু কী প্রশিক্ষণ নিয়ে কী কাজ পাবে, সেটাও বলতে হবে।
সরকারি কাজে অনিয়ম-দুর্নীতি হলে বেসরকারি সংস্থাগুলোর কাছ থেকে সরকারি প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায়। কিন্তু এখানে সরকারি প্রকল্প ব্যবহার করে বেসরকারি সংস্থা লুটপাট করেছে বলে প্রমাণ মিলেছে। যেসব এনজিও মনগড়া তালিকা নিয়ে শিশুদের প্রশিক্ষণ না দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক। প্রকল্পের নামে জনগণের করের অর্থের অপচয় চলতে দেওয়া যায় না
Related Posts
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে আন্তর্জাতিক আস্থা তৈরি করতে হবে
ব্যাংক খাতে অর্থ লোপাট দ্রুত সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে
পাটপণ্যের রপ্তানিমূল্য মিলের ব্যাংক হিসাবে পাঠানোর নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের