
প্রশ্নঃ আমি যে পরিমন্ডলে থাকি সেখানে ব্র্যান্ড পোশাক, ব্র্যান্ড খাবার বা ব্র্যান্ড টেকনোলজি ব্যবহার করাকেই মনে করা হয় স্ট্যাটাস সিম্বল বা আধুনিকতার প্রতীক। পাশ্চাত্যের স্টাইলে খোলামেলা নারী-পুরুষ সম্পর্ক কিংবা হাল ফ্যাশনের নামে উদ্ভট সাজপোশাকে চলতে না পারলে তাকে মনে করা হয় ‘খ্যাত’। কিন্তু এসব আমার ভালো লাগে না। আমি জানি এই মানুষগুলোর কেউ শান্তিতে নেই। বুকভরা অশান্তি আর অস্থিরতা নিয়ে সারাক্ষণ শুধু সুখী মানুষের ভান করে বেড়ায়।
উত্তরঃ আপনার পর্যবেক্ষণ সঠিক। আসলে অশান্তির একটা মৌলিক কারণ হচ্ছে সঠিক চাওয়া কী হবে তা যখন আমরা বুঝতে না পারি। আমরা আপাত চাকচিক্যময় জীবনের মোহে আসক্ত হই এবং বাঁদরের মতো অনুকরণ করতে চাই। একদিকে আমরা তো অশান্তিতে ভুগিই, সেইসাথে নিজের অজান্তেই এ অনুকরণ প্রবণতার সুযোগ নিতে দেই স্বার্থান্বেষীদের।
এ নিয়ে মজার এক গল্প আছে। এক লোক নারকেল গাছে চড়তে পারত না। নারকেল পেড়েও খেতে পারত না। একবার এক বাঁদরকে নারকেল গাছে চড়তে দেখে সে বুদ্ধি ঠিক করে ফেলল। নিচ থেকে একের পর এক ঢিল ছুঁড়তে লাগল। কারণ সে জানত—বাঁদর হচ্ছে অনুকরণপ্রবণ প্রাণী। তাকে ঢিল ছুঁড়তে দেখলে বাঁদরও ঢিল ছুঁড়বে। আর ওপর থেকে ছুঁড়বার জন্যে বাঁদরের একটা জিনিসই আছে। তা হলো নারকেল। আর লোকটি তো তা-ই চায়। কারণ তাতে গাছে চড়ে নারকেল পাড়ার কষ্টসাধ্য কাজটা আর তাকে করতে হচ্ছে না।
সত্যি সত্যি তা-ই হলো। লোকটির মাটির ঢেলার একেকটি ঢিলের জবাবে বাঁদর প্রাণপণে নারকেল ছিঁড়ে ছিঁড়ে ছুঁড়তে লাগল। বাঁদর বুঝলোও না যে, তার অনুকরণ প্রবণতাকে আরেকজন কত সুকৌশলে তার স্বার্থ আদায়ে ব্যবহার করল।
আপনি যাদের কথা বলছেন তারা এই বাঁদরেরই মতো। এখন যারা ডিজুস জেনারেশন তারা তো এ কাজটিই করছে। এর মধ্যে একটা ম্যাগাজিনে তাদের নিয়ে প্রচ্ছদ প্রতিবেদনও বেরিয়েছে। তাদের পোশাক, ভাষা, আচরণ ইত্যাদি নিয়ে। এদের আবার গাড়ি চালানোর স্টাইল দেখেও না কি বোঝা যায়। গাড়ির বডি চেঞ্জ করে এটাকে তারা স্পোর্টস্ কারের মতো বানিয়ে ফেলে। গাড়ি বেশি জোরে স্পিড দিলে মাঝে মাঝে বিভিন্ন পার্টস খুলে পড়ে যায়—আলগা লাগানো কি না!
এরা কারা? এদের অধিকাংশই অবৈধ উপার্জনের মাধ্যমে হঠাৎ আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে ওঠা শ্রেণীর সন্তান-সন্ততি। এটাও অবশ্য নতুন কোনো প্রবণতা নয়। নববইয়ের দশকে এদের বলা হতো পাংকু জেনারেশন, তার আগে ছিলো হিপ্পি জেনারেশন। ’৭০-এ জিপসি জেনারেশন। এই জিপসি, হিপ্পি, পাংকু বা ডিজুস এরা তো বাঁদরের কাজটিই করছে। এদের চেহারা দেখলে বোঝা যায় যে, এদের কোনো শান্তি নেই। বাঁদর হয়েও এদের শান্তি নেই। আর তাদের দেখাদেখি যারা ডিজুস হতে পারছে না বাবার অত অর্থের জোর নেই বলে, তাদেরও শান্তি নেই, কারণ তারা বাঁদর হতে পারছে না।
তথ্যসূত্রঃ প্রশ্নোত্তর | কোয়ান্টাম মেথড