Business Care News

Business News That Matters

ai generated, key, road

প্রশ্নোত্তর সিরিজ – পর্ব ১৩৭: সাফল্যের রহস্য?

প্রশ্নঃ একজন মানুষের সাফল্যের রহস্য কী? কেন সে বিশ্বাস করবে যে, সফল হবার সামর্থ্য তারও রয়েছে?


উত্তরঃ সফল হওয়ার জন্যে একজন মানুষের অর্থ-বিত্ত, বংশমর্যাদা, শান-শওকত, ডিগ্রি-পদবি না থাকলেও কোনো সমস্যা নেই। কারণ সফল হবার জন্যে তার যা প্রয়োজন তা স্রষ্টা জন্মগতভাবেই প্রতিটি মানুষকে দিয়ে দিয়েছেন এবং প্রতিটি সফল মানুষ এ সম্পদ বা পুঁজিকে ব্যবহার করেই সফল হয়। আর যারা ব্যবহার করে না তারাই হয় ব্যর্থ, হতাশ আর অকর্মণ্য। আর এই সম্পদ বা পুঁজির নাম হচ্ছে মস্তিষ্ক।

এই মস্তিষ্ক যে কত বড় পুঁজি, কত বড় সম্পদ তা আমরা কিছুটা বুঝতে পারব যদি আমরা হিসেব করে দেখি মস্তিষ্ককে বাজারে কিনতে হলে কি রকম দাম দিতে হতো। আমরা জানি, মস্তিষ্কের কাছাকাছি যে যন্ত্র বাজারে পাওয়া যায় তা হচ্ছে কম্পিউটার।

ক্রে-১ হচ্ছে আশির দশকের একটা সুপার কম্পিউটার। এর ওজন সাত টন। আর মস্তিষ্কের ওজন হচ্ছে দেড় কিলো। ক্রে-১ কম্পিউটারের এই সাত টনের দেহে ৬০ হাজার মাইল তার ব্যবহার করা হয়েছে। আর মস্তিষ্কের এই দেড় কেজি ওজনের মধ্যে যে তার ব্যবহার করা হয়েছে এর দৈর্ঘ্য দুই লক্ষ মাইল। ক্রে-১ কম্পিউটার প্রতি সেকেন্ডে ৪০০ মিলিয়ন ক্যালকুলেশন বা হিসেব করতে পারে, মস্তিষ্ক পারে ২০ হাজার বিলিয়ন। অর্থাৎ মস্তিষ্ক এক মিনিটে যে কাজ করতে পারবে ক্রে-১ সুপার কম্পিউটারের সেটি করতে লাগবে ১০০ বছর।

যে কারণে নিউরোসায়েন্টিস্টরা বলেন, যে-কোনো সুপার কম্পিউটারের চেয়ে মস্তিষ্ক হচ্ছে কমপক্ষে ১০ লক্ষ গুণ শক্তিশালী। এখন দাম হিসাব করুন। একটা কম্পিউটারের দাম ৫০ হাজার টাকা। মস্তিষ্ক ১০ লক্ষ গুণ শক্তিশালী। ১০ লক্ষ দিয়ে ৫০ হাজারকে পূরণ করুন। কত হয়? পাঁচ হাজার কোটি টাকা। পাঁচ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক আপনি।

ক্রে-১ এর পর গত তিন দশকে আরো অনেক শক্তিশালী সুপার কম্পিউটার তৈরি হয়েছে বটে, কিন্তু বর্তমান বিশ্বের দ্রুততম কম্পিউটার আই বি এম রোড-রানার পর্যন্ত মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতাকে স্পর্শমাত্র করতে পারে নি। বরং মস্তিষ্ক নিয়ে বিজ্ঞানীরা যতই গবেষণা করছেন ততই তারা বুঝতে পারছেন বিশাল সমুদ্রের পাড়ে দাঁড়িয়ে তীরে ধেয়ে আসা ঢেউই কেবলমাত্র তারা গুণছেন।

মস্তিষ্কের মাত্র একটি বিষয়ও যদি আমরা দেখি, তাহলেও এর বিশাল কর্মক্ষমতা ও প্রতিটি মানুষের অফুরন্ত কর্মক্ষমতা সম্পর্কে আরেকটু ধারণা করতে পারব।

মস্তিষ্কে ১০০ বিলিয়ন নিউরোন সেল রয়েছে। প্রতিটি নিউরোন এক হাজার থেকে পাঁচ লক্ষ নিউরোনের সাথে সংযুক্ত। কতগুলো যোগাযোগ সম্ভব? যুক্তরাষ্ট্রে মেডিটেশন সংক্রান্ত গবেষণার অগ্রপথিক হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের প্রফেসর ড. হার্বার্ট বেনসন খুব চমৎকারভাবে বলেছেন, ‘সংখ্যাটি হবে: ২৫,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০।’

এটাকে আপনি অন্যভাবেও দেখতে পারেন। আপনি আপনার টেবিলে একটার ওপর একটা সাধারণ সাইজের টাইপ করার কাগজ রাখুন। রাখতে থাকুন। এটা উঁচু হতে থাকবে। আপনি যদি আপনার মস্তিষ্কের সম্ভাব্য নিউরোন সংযোগ সংখ্যার সমসংখ্যক কাগজ রাখতে চান, তাহলে কাগজের ঢিবি উঁচু হতে হতে চাঁদ পার হয়ে, সৌরজগৎ পার হয়ে গ্যালাক্সি পার হয়ে যাবে। এমনকি আমাদের জানা মহাবিশ্বের সীমানা (১৬ বিলিয়ন আলোকবর্ষ) পার হয়ে যাবে। তারপরও কাগজ রয়ে যাবে।

অর্থাৎ সাফল্যের জন্যে প্রয়োজনীয় সকল উপকরণ দিয়েই স্রষ্টা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। প্রয়োজন শুধু এই অফুরন্ত সম্ভাবনাময় জৈব কম্পিউটারকে পরিকল্পিতভাবে বেশি পরিমাণে ব্যবহার করতে শেখা।

তথ্যসূত্রঃ প্রশ্নোত্তর | কোয়ান্টাম মেথড

Skip to content