প্রশ্নঃ অনেকদিন থেকে বর্তমান চাকরিটি করতে আর ভালো লাগছে না। কেবলই মনে হচ্ছে, এই চাকরি আমার জন্যে না। আমি জন্মেছি আরো বড় কিছু, আরো ভালো চাকরি করার জন্যে। আর সেই জন্যে নিজেকে যোগ্য হতে হবে। তাই আমি হায়ার স্টাডি করতে লন্ডন যেতে চাচ্ছি। এর জন্যে আমার বর্তমান চাকরি ছাড়তে হবে। সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না সেটা ঠিক হবে কি না। গুরুজী আমাকে সঠিক দিক-নির্দেশনা দিন।
উত্তরঃ আপনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন লন্ডনে যাবেন পড়াশোনা করার জন্যে। কিন্তু এর জন্যে যে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন, সেটা যদি আপনার কাছে থাকতোই তাহলে তো আপনার চাকরি করারই প্রয়োজন হতো না। আসলে এটা একটা ভুল ধারণা যে, দেশের বাইরে চাকরি করে পড়াশোনা করা যায়। বরং বাস্তবতা হচ্ছে, ওখানে চাকরির সুযোগ খুব সীমিত। তারাই এখন জর্জরিত বেকারত্ব, কর্মী ছাঁটাই ইত্যাদি নানা সমস্যায়। ১০ বছর পরে হয়তো তারাই আমাদের দেশে আসবে চাকরি করে পড়াশোনা করার জন্যে। অতএব আহাম্মকের স্বর্গে থাকবেন না। আর বড় চাকরির জন্যে হায়ার স্টাডির প্রয়োজন নেই। হায়ার স্টাডি করে কেউ কখনো চাকরি করতে পারে না। চাকরি করতে হয় নিজ যোগ্যতা দিয়ে, দায়িত্বশীলতা দিয়ে। আর পদোন্নতি কখনো ডিগ্রি দেখে হয় না।
সরকারি চাকরিতে পদোন্নতি নির্ভর করবে আপনার যোগাযোগের দক্ষতার ওপর। প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে এটা নির্ভর করবে আপনার দক্ষতা, দায়িত্ব নিতে পারার যোগ্যতা আর ব্যবস্থাপনার কুশলতার ওপর। ডিগ্রি বা উচ্চশিক্ষার ওপর নয়। মনে রাখবেন, যত বড় চাকরিই হোক, চাকরি মানে-চাকর। চাকরি মানে-‘বস ইজ অলওয়েজ রাইট’। তখন আপনি বসের আগে অফিসে ঢুকবেন, বসের পরে বেরোবেন, বসের নজরের মধ্যে থাকবেন, তাহলে আপনার উন্নতি হবে। চাকরি করতে আপনার ভালো লাগছে না মানে আপনি আসলে কাজটাকে ভালবাসতে পারছেন না। আমাদের সমস্যা হলো, কাজ হয়তো আমরা করি, কিন্তু অনিচ্ছাসত্ত্বেও করি। বিরক্তি সহকারে করি। ফলে বিষণ্ণ থাকি, অনেকসময় যার শারীরিক প্রভাবও পড়ে।
মাল্টিন্যাশনালে বা অন্যান্য চাকরিতে যত সিইও আছে, দুই বছরের মাথায় তারা অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। ঘাড়ে ব্যথা, পিঠে ব্যথা, মাইগ্রেন, উচ্চ রক্তচাপ, অনিদ্রা, হজমে সমস্যা ইত্যাদিতে ভুগছেন। কারণ-বিরক্তির সাথে কাজ করা। অধিকাংশই কাজটাকে ভালবাসেন না। যেমন, মহিলাদের এত অসুখবিসুখ, এত অস্থিরতার অন্যতম কারণ হলো-প্রতিদিন ঘরের যে কাজগুলো তারা করেন, অধিকাংশই তা করেন খুব বিরক্তির সাথে। করতে হবে তাই করেন।
অথচ আনন্দ নিয়ে কাজ করলে তারা অনেক সুস্থ থাকতেন। আবার আমাদের সময় মা-চাচী-খালাদের অসুখ-বিসুখ খুব একটা দেখি নি। কারণ তাদের কাছে ঘরের কাজটাই ছিলো আনন্দের। ছেলে বিরক্ত করছে, মেয়ে বিরক্ত করছে-এটাই তার আনন্দ। এটাই তার জগৎ। এর বাইরে তার কোনো জগৎ ছিলো না। কিন্তু সাধারণভাবে এখনকার শহুরে মহিলাদের একটা বড় অংশের জগৎ হচ্ছে শপিং টিভি ফেসবুক ই-মেইল এসএমএস মোবাইল। যার ফলে ঘরের কাজের মধ্যে তিনি আর কোনো আনন্দ খুঁজে পান না।
অতএব কাজটাকে ভালবাসবেন। যদি চাকরি করেন এবং কাজকে ভালবাসেন তাহলে আপনি প্রতিদান পাবেনই। বস আপনাকে প্রতিদান না দিলেও আপনার কাজ আপনাকে প্রতিদান দেবে। এটাই প্রকৃতির নিয়ম।
তথ্যসূত্রঃ প্রশ্নোত্তর | কোয়ান্টাম মেথড
Related Posts
Q&A Series – Episode 292: Failure is the pillar of success!
Q&A Series – Episode 291: What exactly is visualization?
Q&A Series – Episode 290: How does visualization work?