প্রশ্নঃ আমি হোমিও ডাক্তার। আমার স্বামী তার জীবনের বেশিরভাগ উপার্জন, এমনকি আমার উপার্জনও তার ভাইবোনদের পেছনে ব্যয় করেছেন। কিন্তু এখন ওরা তার সাথে চরম বেঈমানি করছে। বলছে পৈত্রিক সম্পত্তিও তাকে দেয়া যাবে না। তিনি ২১ লক্ষ টাকার মতো ঋণ করেছেন ওদের জন্যে। ওরা আমার স্বামীকে হুমকি দিচ্ছে। এমতাবস্থায় ওকে কী পরামর্শ দেয়া উচিত দয়া করে জানাবেন। দোয়া করবেন।
উত্তরঃ এক হচ্ছে আপনার স্বামী যা করেছেন এটা অতীত। উনি যদি সৎ নিয়তে ভাইবোনদের কাছ থেকে প্রতিদানের প্রত্যাশা ছাড়া এটা করে থাকেন, আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই এটার প্রতিদান দেবেন।
দুই হচ্ছে—কারো উপকার করে, কল্যাণ করে কখনো আফসোস করবেন না। আপনার মধ্যে আফসোস রয়ে গেছে যে, এত করলাম, এখন তারা আমার বিপক্ষে চলে গেছে! এভাবে আফসোস করবেন না। এবং এগুলো নিয়ে মনে কোনো ক্ষোভ রাখবেন না। বরং মন থেকে তাদেরকে ক্ষমা করে দিন। কারণ আপনি উপকার করেছেন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে এবং আল্লাহ আপনাকে দেখবেন।
তিন নম্বর হচ্ছে, আমরা সবসময় ঋণ করার বিপক্ষে। ঋণ করা যে ক্ষতিকর এটা হয়তো আপনার স্বামী জানতেন না। ২১ লক্ষ টাকা ঋণী হওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। রসুলুল্লাহ (স) যে জিনিসগুলো থেকে পানাহ চেয়েছেন তার মধ্যে এই ঋণ হচ্ছে একটা।
ঋণ কখনো কখনো প্রয়োজন হতে পারে, কিন্তু আমরা অধিকাংশই যে ঋণ করি এটা হচ্ছে ফুটানির জন্যে। আমরা ঋণ করে আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়িয়ে ফেলি। ঋণ করে ইলেক্ট্রনিক জিনিস কিনি, স্মার্টফোন কিনি। জীবন বাঁচানোর জন্যে ঋণ হতে পারে। কিন্তু বর্তমানে ফুটানির জন্যে ঋণ করার প্রবণতা বেড়েছে।
গরিবদের ক্ষেত্রে ঋণ করাটা একধরনের ফ্যাশন হয়ে গেছে। একজন ‘ব্র্যাক’ থেকে ঋণ করে। সেই ঋণ যখন ফেরত দেয়ার সময় হয়, দিতে পারে না। তারপরে সে ‘আশা’ থেকে ঋণ করে আগের ঋণশোধ করে। আবার ‘গ্রামীণ’ থেকে ঋণ করে ‘আশা’-র ঋণশোধ করে।
এভাবে সে ঋণ শুধু রিশিডিউলিং করতে থাকে। এই ঋণ পারিবারিক অর্থনৈতিক ভিত্তি নষ্ট করে দিচ্ছে ক্যান্সারের মতো। আমাদের সমাজ-জীবনে সবচেয়ে বড় অভিশাপের একটি হচ্ছে এই পণ্যঋণ।
আমরা আপনাদের জন্যে দোয়া করি। যদি আপনারা আপনাদের উপার্জন ভাইবোনদের কল্যাণে ব্যয় করে থাকেন, তাহলে সেটা ভুলে যান। ক্ষমা করে দিন। কারণ যা দিয়েছেন এটা ফেরত আসবে না কখনো। যেটা ফেরত আসবে না সেটা নিয়ে আফসোস করে কোনো লাভ নাই।
ভবিষ্যতের চিন্তা করুন। আল্লাহর ওপর ভরসা রাখুন। অর্থাৎ দৃষ্টিভঙ্গি সবসময় এরকম হওয়া উচিত। যার জন্যেই করেন, উপকার করে কখনো তার কাছ থেকে কোনোকিছু প্রত্যাশা করবেন না। প্রত্যাশা করা কিন্তু দান নয়। প্রত্যাশা করা হচ্ছে একটা বিনিয়োগ।
আর বিনিয়োগে লাভ-ক্ষতি দুটোই হতে পারে। অন্যদিকে দানে কোনো ক্ষতি নেই। বরং লাভ আছে। কারণ দেয়ার মালিক আল্লাহ। আল্লাহর কাছে চান যে, রিজিকদাতা তুমি, তুমি আমাদের রিজিকের উত্তম ব্যবস্থা করো। দেখবেন, আল্লাহ তায়ালা পথ বের করে দিয়েছেন।
তথ্যসূত্রঃ প্রশ্নোত্তর | কোয়ান্টাম মেথড