প্রশ্নঃ অবসর সময়ে টিভি দেখা বা বিনোদনমূলক কাজও কি আলস্যের মধ্যে পড়ে?
উত্তরঃ আসলে বিনোদন কার দরকার?—যার জীবনে কোনো লক্ষ্য নেই। কারণ সামনে যখন লক্ষ্য থাকবে তখন তথাকথিত বিনোদনের সময়ই পাওয়া যাবে না। একটির পর একটি—একটি কাজ থেকে আরেকটি কাজ; কাজই হবে তখন সত্যিকারের বিনোদন। নিজের পড়া শেষ করে আরেকজনকে পড়াচ্ছি—এটাই তো বিনোদন। যত পরিশ্রম করবেন তত আপনি লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হবেন, মস্তিষ্কে খুচরা শয়তান ঢোকার পথ বন্ধ হবে। অলস থাকলেই শয়তান আমাদের বেশি পেয়ে বসে। এজন্যে যখনই পরীক্ষা শেষ হয়ে যায় তখন কী করছি? হয় আড্ডা দিচ্ছি, না হয় ‘আহাম্মকের বাক্স’—টিভির সামনে বসে আছি। হিন্দি সিরিয়াল দেখছি!
মস্তিষ্ক এবং সময়ের—এর চেয়ে বড় অপচয় আর কোনো কিছু দিয়ে হয় না। কারণ ওখানে শিক্ষণীয় কিছু নেই। গীবত-ঈর্ষা-চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র দেখে কী শেখার আছে? শাশুড়ি বউয়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, বৌ শাশুড়ির বিরুদ্ধে, দেবর ননদের বিরুদ্ধে-ননদ দেবরের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। আবার পরকীয়া করার জন্যে একজন আরেকজনের স্ত্রীকে মেরে ফেলছে—এটা দেখে কী শেখার আছে? এটা থেকে কেবল মনের অশান্তিই বাড়বে। আর এটা যে আমরা বুঝি না, তা-ও না। কিন্তু বুঝেও এর থেকে বেরিয়ে আসতে পারি না।
যেমন একজন ড্রাগ-এডিক্ট কিন্তু জানে যে, এ ড্রাগটা তার জন্যে খারাপ। তেমন হিন্দি সিরিয়াল বা টিভির ব্যাপারটাও হচ্ছে এক ধরনের এডিকশন। ড্রাগ বা সিগারেটের এডিকশন যেরকম খারাপ, টিভির এডিকশনও একই রকম খারাপ। এ বৃত্তকে ভাঙতে হবে।
আসলে তরুণদের কাছ থেকে যখন এরকম প্রশ্ন পাই, আমার মনে পড়ে যায় বহু বছর আগে সাইকোলজি টুডে পত্রিকায় দেখা একটা ছবির কথা। এক তরুণ এবং এক বৃদ্ধ পরস্পরের দিকে তাকিয়ে আছে। তরুণটির পিঠে ব্যাগ। বোঝা যাচ্ছে সে দীর্ঘ ভ্রমণের জন্যে বেরোচ্ছে। আর বৃদ্ধের হাতে লাঠি। ঘর থেকে উঠান পর্যন্ত বেরোনোই তার জন্যে অনেক। তরুণ বৃদ্ধের দিকে তাকিয়ে ভাবছে, কবে এই বৃদ্ধের মতো হবে। বয়স, অভিজ্ঞতা, জ্ঞান সবকিছুতে সমৃদ্ধ হবে। আর বৃদ্ধ তরুণের দিকে তাকিয়ে ভাবছে, সে যদি আবার এই তরুণের মতো কর্মোদ্দীপনাময় হতে পারত, তাহলে তার সব অপূর্ণ স্বপ্নগুলোর বাস্তবায়ন সে করতে পারত। তরুণের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হলেও বৃদ্ধের স্বপ্ন কখনো বাস্তবায়িত হওয়ার নয়। কারণ যে সময় চলে গেছে তা আর কখনো ফিরে আসবে না। কাজেই অমূল্য এ সময়ের যথাযথ ব্যবহার করতে হবে।
তথ্যসূত্রঃ প্রশ্নোত্তর | কোয়ান্টাম মেথড