প্রশ্নঃ আজকাল টিভিতে নিমেষেই সতেজ হওয়ার জন্যে যে এনার্জি ড্রিংকস-এর বিজ্ঞাপন দিচ্ছে, এটা কতটুকু স্বাস্থ্যসম্মত?
উত্তরঃ আমরা সফট ড্রিংকসের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরেছি কোয়ান্টাম মেথড কোর্সে সেই ১০ বছর আগে। এখন এ ব্যাপারে মানুষ সচেতন হতে শুরু করেছে। এর জনপ্রিয়তা হারাতে শুরু করায় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে অন্য নামে হাজির করা হচ্ছে। এনার্জি ড্রিংকস এক ধরনের উত্তেজক পানীয় যেটা মানুষের স্নায়ুকে দুর্বল করে দেয়। হঠাৎ নার্ভকে উত্তেজিত করে এবং পরবর্তী সময়ে দূরপ্রসারী দুর্বলতার কারণ হয়। এনার্জি ড্রিংকস স্বাস্থ্যসম্মত তো নয়ই, বরং স্বাস্থ্যের জন্যে অত্যন্ত ক্ষতিকর। টেলিভিশনে এসব ড্রিংকসের আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন যখন দর্শক দেখে তখন ছেলে-বুড়ো নির্বিশেষে সবারই হয়তো মনে হয়, এটা খেলে এক্ষুণি বোধহয় অসুরিক ক্ষমতার অধিকারী হওয়া যাবে। ‘একটু বুঝে শুনে খাও, কখন যে কী হয় কিচ্ছু বলা যায় না’ কিংবা ‘এই ড্রিংকস খেলে ধরাকে সরা জ্ঞান করতে পারবেন’ ইত্যাদি রীতিমতো আপত্তিকর ভাষা ব্যবহার করে নির্মিত এসব বিজ্ঞাপনগুলো কিছু মানুষকে আকৃষ্ট করছে তাতে সন্দেহ নেই। তারা দেদারসে খাচ্ছেন এসব এনার্জি ড্রিংকস নামের তথাকথিত শক্তি ড্রিংকস যা মাদকাসক্তির কালো দরজাকেই উন্মুক্ত করে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো এনার্জি ড্রিংকস নিয়ে মাতামাতি করলেও উন্নত বিশ্ব ইতোমধ্যেই এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন হয়ে একের পর এক ব্র্যান্ডকে নিষিদ্ধ করছে। ১৯৯৭ সালে আমেরিকার বাজারে আসে ‘রেড বুল’ নামের একটি এনার্জি ড্রিংক যা বাজারের ৪৭% ভাগই দখল করে ফেলে। কিন্তু সম্প্রতি ফ্রান্সে ১৮ বছর বয়সী এক কিশোর বাস্কেটবল খেলার পর ৪ ক্যান রেড বুল খেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লে ফ্রান্স সরকার রেড বুলকে সে দেশে নিষিদ্ধ করে। ময়না তদন্ত রিপোর্টে কিশোরটির মৃত্যুর কারণ হিসেবে বলা হয় উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে এনার্জি ড্রিংকসের উচ্চমাত্রার ক্যাফেইন মিশে ‘সাডেন এডাল্ট ডেড সিনড্রোম’ থেকেই এ মৃত্যু হয়েছে। আসলে কী আছে এনার্জি ড্রিংকসে?
এনার্জি ড্রিংকসে ক্ষতিকর অন্যান্য উপাদানের পাশাপাশি আছে উচ্চমাত্রার ক্যাফেইন যা মৃগীরোগ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। একজন পূর্ণবয়স্ক পুরুষের দেহে ৪০০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইনই যথেষ্ট। একজন নারীর জন্যে এ মাত্রা ৩০০ মিলিগ্রাম। অথচ একটা এনার্জি ড্রিংকের ক্যানেই থাকে ৩৬০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন। তাহলেই বুঝতে পারছেন একের পর এক এনার্জি ড্রিংক যখন আপনি গিলতে থাকেন তখন কী অবস্থা হয়! ক্রমাগতই উচ্চমাত্রার ক্যাফেইন নিতে থাকলে নার্ভাসনেস, বদমেজাজ, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, পেশির টান, অনিদ্রা, মাথাব্যথা এবং শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে। এছাড়া এনার্জি ড্রিংকসের আরেকটা ক্ষতিকারক দিক হলো সন্তানধারণে জটিলতা। যেসব নারী বা পুরুষ এনার্জি ড্রিংকসে অভ্যস্ত তাদের সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ে। তাছাড়া দুর্বল শিশু বা সময়ের আগেই বাচ্চা হয়ে যাওয়ার প্রবণতাও দেখা দিতে পারে। এছাড়া কোমল পানীয়ের অন্যান্য ক্ষতিকর সবদিক তো এর মধ্যে রয়েছেই। তাই যদি সুস্থ থাকতে চান তবে কোমল পানীয়ের মতো এগুলোও বর্জন করবেন।
তথ্যসূত্রঃ প্রশ্নোত্তর | কোয়ান্টাম মেথড