প্রশ্নঃ প্রকৃতির সাথে একাকার হলে প্রকৃতি আমাকে কীভাবে মানব কল্যাণে সাহায্য করবে?
উত্তরঃ একজন সাধকের একটি ঘটনাকে এ প্রসঙ্গে বলা যেতে পারে। তার সাথে আমার একদিনই দেখা হয়েছিল। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমরা কথা বলেছি। তারও কথা বলায় কোনো ক্লান্তি ছিল না, আমারও প্রশ্ন করায় কোনো ক্লান্তি ছিল না। পৃথিবীর এমন কোনো মেথড নেই যা তিনি করেন নি। তার শখই হচ্ছে—নতুন কোনো কিছুর কথা শুনলে তাকে তা জানতে হবে। তিনি যে আলফা লেভেল-এর মানুষ, তা দেখলেই বোঝা যায়।
তিনি তার জীবনের একটি ঘটনা বলছিলেন। ফিজিক্স নিয়ে পিএইচডি করার এক পর্যায়ে কিছুটা বিক্ষিপ্ত সময় কাটছিল তার। ম্যাথমেটিক্সের কিছু জটিল সমাধান যেন কিছুতেই হচ্ছিল না। গবেষণা-পড়াশোনা-কিছুতেই মন বসছে না। কখনো মেডিটেশন করছেন, কখনো সাধুদের কাছে ধর্না দিচ্ছেন, কখনো বা দিনের পর দিন উদভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
এর মধ্যেই একদিন পার্কে বসেছিলেন তিনি। অনেকক্ষণ বসে থাকার পর খেয়াল হলো—একটু দূরেই পড়ে আছে একখন্ড কাগজ। কাগজটাতে কিছু অংক কষার চিহ্ন দেখে কৌতূহলী হয়ে হাতে তুলে নিলেন। ভাঁজ খুলে খানিকটা দেখেই তো তার চোখ ছানাবড়া! এ তো দেখি তার সেই বহু আরাধ্য জটিল অংকটির সমাধান যা নিয়ে তিনি গলদঘর্ম হচ্ছিলেন এতদিন। এটা ছিল আসলে কোনো একটা রিসার্চ পেপারের ছেঁড়া পাতা এবং ঘটনাচক্রে সে পাতাটাতেই ছিল তার রিসার্চের সমাধান। এটাকে অনুসরণ করেই তিনি আবার শুরু করলেন তার রিসার্চের কাজ। শেষ করে সাবমিটও করলেন।
অর্থাৎ মনের অতিচেতন স্তরে এই সল্যুশনটা কিন্তু ছিল। কিন্তু সচেতন স্তরকে বোঝাতে পারছিল না, মেসেজটা দিতে পারছিল না। কিন্তু বাস্তব যে ঘটনা—ঐ কাগজটা দেখার সাথে সাথে ক্লিক করে গেল যে, দিস ইজ দি সল্যুশন।
নিউটন যখন আপেল গাছের নিচে বসেছিলেন, ল’জ অফ গ্রাভিটেশন তার অতিচেতন স্তরে ছিল, কিন্তু অতিচেতন তা কমিউনিকেট করতে পারছিল না সচেতন স্তরকে। যেই আপেলটা পড়ল, ক্লিক করে গেল, কমিউনিকেশন হয়ে গেল যে, আপেলটা নিচে পড়ল কেন? সাথে সাথে অতিচেতন স্তরের যে ব্যাখ্যা, অতিচেতন স্তরের সূত্র, তা বেরিয়ে গেল।
বস্তুর আয়তন পরিমাপে বিজ্ঞানী আর্কিমিডিসের পদ্ধতি আবিষ্কারের কথাও আমরা জানি। রাজার জন্যে একটা সোনার মুকুট তৈরি করা হয়েছিল। রাজা চাচ্ছিলেন এর মধ্যে কোনো খাদ আছে কি না তা পরীক্ষা করা হোক।
কিন্তু শর্ত হলো মুকুটটাকে গলানো যাবে না বা এর আকৃতিতে কোনো পরিবর্তন আনা যাবে না। আর্কিমিডিসকে এ দায়িত্ব দেয়া হলো। তিনি গভীর ভাবনায় ডুবে গেলেন। রাতদিন শুধু এটা নিয়েই ভাবছেন। এর মধ্যে একদিন গোসল করার জন্যে তিনি বাথটাবে নামলেন। সবসময় যা হয় এবারও তা হলো। বাথটাবে ডোবার সাথে সাথে পানি কিছুটা উপচে পড়ল।
মুহূর্তে আর্কিমিডিস সমাধানের সূত্র খুঁজে পেলেন। তিনি বুঝলেন, পানির এই ধর্মকে ঘনত্ব পরিমাপে ব্যবহার করা সম্ভব। মুকুটটিকে পানিতে ডোবালে যে পরিমাণ পানি উপচে পড়বে তা থেকেই মুকুটের ঘনত্ব বের করা সম্ভব। আর এর মধ্যে কম ঘনত্বের কোনো সস্তা ধাতু মেশানো আছে কি না তা-ও বোঝা সম্ভব।
বলা হয়, এই আবিষ্কার আর্কিমিডিসকে এতটাই উত্তেজিত করে তুলেছিল যে, তিনি বাথটাব থেকে বেরিয়ে নগ্ন অবস্থায় শহরের রাস্তায় ইউরেকা! ইউরেকা! (গ্রিক ভাষায়—আমি পেয়েছি!) বলতে বলতে রাজ দরবারে ছুটে এসেছিলেন।
Related Posts
Q&A Series – Episode 292: Failure is the pillar of success!
Q&A Series – Episode 291: What exactly is visualization?
Q&A Series – Episode 290: How does visualization work?