প্রশ্নঃ আমাদের অলি-বুজুর্গরা কি এই টেলিপ্যাথি প্রয়োগ করেছেন?
উত্তরঃ অবশ্যই। আমাদের অলি-বুজুর্গরা, মুনি-ঋষিরা হাজার হাজার বছর ধরে এ পদ্ধতিকে ব্যবহার করে আসছেন। প্রয়োগ করে আসছেন। হযরত ওমরের সময়কার একটা ঘটনা।
আবু ওবায়দা জেরুজালেমে রোমানদের সাথে যুদ্ধ করছেন। রোমানদের সৈন্য সংখ্যা ছিল ওবায়দার সৈন্য সংখ্যার পাঁচ গুণ। দিনটি ছিল শুক্রবার। ঘোরতর যুদ্ধ হচ্ছে। হযরত ওমর মদীনায় মসজিদে নববীতে খোতবা দিচ্ছেন। যুদ্ধ হচ্ছে জেরুজালেম—মদীনা থেকে কয়েকশ মাইল দূরে। হঠাৎ খোতবা বন্ধ করে তিনি বসে পড়লেন। বসে বলছেন, ‘আবু ওবায়দা, পাহাড়ের পেছনে দেখ’।
আবু ওবায়দা সেই যুদ্ধ ক্ষেত্রে যুদ্ধ করতে করতে শুনছেন যে, খলিফা তাকে পাহাড়ের পেছনে দেখতে বলছেন। তিনি কয়েকজন অশ্বারোহীকে পাঠিয়ে দিলেন—দেখ তো পাহাড়ের পেছনে কী হচ্ছে? তারা পাহাড়ের পেছনে গিয়ে দেখে যে, মারাত্মক অবস্থা। ৫০ হাজার রোমান সৈন্য পাহাড়ের পেছন দিক থেকে আসছে আবু ওবায়দার বাহিনীকে ঘেরাও করে ফেলার জন্যে। আবু ওবায়দা সাথে সাথে তার বাহিনীকে দুই ভাগ করে ফেললেন। একভাগ পাঠিয়ে দিলেন পাহাড়ের পেছনে মোকাবেলা করার জন্যে। সেই যুদ্ধে আবু ওবায়দা জয়ী হয়েছিলেন।
যদি কমান্ড করতে পারেন তো আপনার কমান্ড মানুষ শুনতে পারে, পশুপাখি শুনতে পারে, গাছপালা, পাহাড়-পর্বত, নদ-নদী শুনতে পারে।
হযরত ওমরের সময়কার আরেকটি ঘটনা। আমর ইবনুল আস মিশর জয় করেছেন। মিশরীয়দের মধ্যে তখন একটা প্রথা ছিল। এখন যে রকম সুন্দরী প্রতিযোগিতা হয় তখন সেখানেও সুন্দরী প্রতিযোগিতা হতো। একদম গ্রাম থেকে শুরু হতো। বাছাই হতে হতে সেরা মিশর সুন্দরী যে নির্বাচিত হতো তাকে সবচেয়ে মূল্যবান পোশাকে সজ্জিত করে একেবারে মাথা থেকে পা পর্যন্ত সোনা দিয়ে মুড়িয়ে অলংকার পরিয়ে নীলনদে নিয়ে বলি দেয়া হতো। কারণ মিশরীয়রা বিশ্বাস করতো, সবচেয়ে সুন্দরী কুমারীকে বলি দিলে নদী খুশি হবে, ফসল ভালো হবে। আমর ইবনুল আস ঘোষণা করলেন যে, না, নরবলি মহাপাপ, নরবলি দেয়া যাবে না।
নরবলি বন্ধ, প্লাবনও বন্ধ হয়ে গেল। সময় পার হয়ে যাচ্ছে, প্লাবন হচ্ছে না। প্লাবন না হলে ফসল হবে না। কৃষকরা বিদ্রোহ করবে। বিদ্রোহের রব উঠল চারদিকে। পাপ-পুণ্য পরে, আগে আমাদের তো খেয়ে বাঁচতে হবে।
আমর দেখলেন যে, কৃষকরা যদি বিদ্রোহ করে, এই বিদ্রোহ দমন করার জন্যে যে সৈন্যদল দরকার সে লোকবল তার নেই। অতএব তিনি খলিফাকে লিখে পাঠালেন। খলিফা দূতের কাছে চিঠি পাঠিয়ে দিলেন, লম্বা চিঠি। তাকে বললেন যে, আমরকে বলবে নীল নদে গিয়ে চিঠি পড়ে শুনিয়ে নীল নদে চিঠিটা ছেড়ে দিতে।
আমর চিঠি নিয়ে গেলেন, নীল নদের সামনে দাঁড়ালেন। দাঁড়িয়ে খলিফার ফরমান পড়ে শোনালেন। অনেক লম্বা চিঠি। শেষ লাইনটি ছিল ‘হে নদী! তুমি যদি আল্লাহর হুকুমে প্রবাহিত হয়ে থাকো, আমি আল্লাহর খলিফা ওমর বলছি, আল্লাহর হুকুমে প্লাবিত হও’।
ছেড়ে দেয়া হলো চিঠি পানিতে। পাঁচ মিনিট, দশ মিনিট, এক ঘণ্টা, দুই ঘণ্টা, পাঁচ ঘণ্টা, সাত ঘণ্টা—আস্তে আস্তে পানি ফুলতে শুরু করল, প্লাবন হলো, ফসল হলো। এবং সেই যে মিশরে নরবলি বন্ধ হলো তারপরে আর কোনো কুমারী নারীকে নীলনদে আত্মাহুতি দিতে হয় নি। কমান্ড করতে পারলে মানুষ শুনবে, নদ-নদী শুনবে, পাহাড়-পর্বত শুনবে যদি আপনি কমান্ড করতে জানেন।
মূল: প্রশ্নোত্তর | কোয়ান্টাম মেথড
Related Posts
Q&A Series – Episode 292: Failure is the pillar of success!
Q&A Series – Episode 291: What exactly is visualization?
Q&A Series – Episode 290: How does visualization work?