প্রশ্নঃ সঙ্ঘবদ্ধভাবে যাকাত আদায়ের গুরুত্ব সম্পর্কে আমি সচেতন হয়েছি। কিন্তু আমার কিছু গরীব আত্মীয় স্বজন রয়েছে, যাদেরকে আমার সাহায্য করতে হয়। এক্ষেত্রে কী করণীয়?
উত্তরঃ প্রথমত—পিতামাতা, দাদা-দাদী, নানা-নানী স্থানীয় ঊর্ধ্বতন সকল পরিজন এবং পুত্র-কন্যা, নাতি-নাতনী স্থানীয় অধস্তন পরিজনদের যাকাত দেয়া যাবে না। আর অন্যান্য পরিজনদের ক্ষেত্রে কোরআন এবং হাদিসে যাকাত নয়, সদকা দিতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। নবীজী (স) বলেন, উত্তম সদকা হচ্ছে নিজ পরিবারের ও আত্মীয়দের জন্যে ব্যয়। তাই আপন আত্মীয়কে আপনি অন্য উৎস থেকে নিয়মিত দান করতে পারেন।
এখন প্রশ্ন হলো, যদি আপনার সে-রকম কোনো দুস্থ আত্মীয় থাকে যাকে যাকাতের অর্থ দিয়ে আপনি স্বনির্ভর করতে চান, সেক্ষেত্রে কী করণীয়?
সেক্ষেত্রে আপনি আপনার পুরো যাকাতের অর্থটা যাকাত ফান্ডে জমা দিয়ে তারপর সেখান থেকে ৫০% আপনি সরাসরি তুলে নিতে পারেন। মনে করুন, আপনি ৪০ হাজার টাকা যাকাত জমা দিলেন। আপনি আপনার আত্মীয়দের জন্যে ফান্ড থেকে ২০ হাজার টাকা তুলে নিয়ে যেতে পারেন, যে অমুক আত্মীয়কে স্বাবলম্বী করার জন্যে আমি ব্যয় করব।
অথবা আপনি আমাদের যাকাত ফান্ড পরিচালনার দায়িত্বে যারা আছেন, তাদের কাছে আবেদন করতে পারেন। তারা যদি মনে করেন, উনি সাহায্য গ্রহণের যোগ্য, তাহলে এ ফান্ড থেকে তিনি সাহায্য পাবেন।
আসলে কোনো বাঙালী যদি বলেন যে, আমার গরীব আত্মীয় নাই। তাহলে এটা যেমন মিথ্যা কথা। তেমনি কোনো গরীব যদি বলে যে, তার ধনী আত্মীয় নাই। তবে সেটাও একটা মিথ্যা কথা। প্রত্যেকেরই ধনী আত্মীয় আছে। প্রত্যেকেরই গরীব আত্মীয় আছে। যে তার মস্তিষ্ককে যতটা ব্যবহার করেছে সে উপরে উঠেছে। যে করে নাই সে নিচে পড়ে আছে। যে নিচে পড়ে আছে তাকে ওপরে তোলার সামগ্রিক দায়িত্ব হচ্ছে সমাজের। আর আমরা ফাউন্ডেশন থেকে তাকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করব। তাকে স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করব। কারণ আপনার গরীব আত্মীয়ের দায়িত্ব শুধু আপনার না। এই দায়িত্ব সমাজের। আর সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে আমরা এই দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করছি।
তবে স্বাবলম্বী হওয়ার দৃষ্টিভঙ্গিটাও গুরুত্বপূর্ণ। কেউ যদি নিজে স্বাবলম্বী হতে না চায় তবে তাকে কোটি টাকা দিলেও লাভ নেই। কয়েকদিন পরে সে সব টাকা খরচ করে এসে বলবে যে, সব টাকা নষ্ট হয়ে গেছে। অর্থাৎ কর্মী মানুষ পরিশ্রমী মানুষ খোঁজে যাকাত দিতে হবে, যিনি আগামী দুই বছরের মধ্যে যাকাত দাতা হতে পারে। যাকাত আসলে ভিক্ষাবৃত্তি নয়।
আমরা আসলে যাকাতকে এক ধরণের ভিক্ষায় রূপান্তরিত করেছি। যে কারণে যাকাত থেকে যে উপকার হওয়া সম্ভব, যাকাত থেকে একজন মানুষ যেভাবে স্বাবলম্বী হতে পারে, সেটা সে হতে পারছে না। আসলে যাকাতের যে অর্থ আমরা খয়রাত হিসেবে দিই, সেটা যদি পরিকল্পিতভাবে ব্যয় করা হতো, তাহলে আগামী ১৫ বছরে আমাদের দেশে কেউ যাকাত গ্রহণ করার মতো থাকবে না। যাকাত দেয়ার জন্যে তখন বিদেশে যেতে হবে।
তাই আমরা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি যে, কোয়ান্টাম যাকাত ফান্ড থেকে আমরা শত শত মানুষকে স্বাবলম্বী হতে সহযোগিতা করছি। আপনাদের সকলের সহযোগিতায় এই কাজগুলো সামনে আরো সহজ হবে।
আমাদের যাদের যাকাতযোগ্য অর্থ হয়েছে, তাদের জন্যে যাকাত আদায় করা ফরজ। যাকাত আদায় না করলে আপনার সম্পদ হারাম হিসেবে থাকবে। হালাল হবে না। আর এটা দিতে হবে সঙ্ঘবদ্ধভাবে। যখনই সঙ্ঘবদ্ধভাবে আপনি যাকাত আদায় করবেন, যাকাত আদায়ের বরকত আপনি নিজে অনুভব করবেন। যেভাবে আমাদের যাকাতদাতারা অনুভব করছেন।
যাকাত ফান্ডের কাজগুলো নিয়ে আমাদের ভিডিওচিত্র রয়েছে। সেটা সংগ্রহ করে অথবা ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করে দেখে নিতে পারেন। যাকাত ফান্ডের কাজের সাথে সম্পৃক্ত হলে আপনি কীভাবে মানুষের আরো মঙ্গল করতে পারেন সেটা আপনি ভিডিওচিত্র দেখে বুঝতে পারবেন।