Business Care News

Business News That Matters

Lincoln Memorial, Abraham Lincoln Statue

প্রশ্নোত্তর সিরিজ – পর্ব ৪৮ঃ বয়স এবং কাজ

প্রশ্নঃ জীবনের যে-কোনো অবস্থা থেকেই কি জীবনের কার্যক্রম শুরু করা যায়? বয়স হয়ে গেছে এখন আমার দ্বারা হবে না। এটা কি সঠিক?


উত্তরঃ এটা মোটেই ঠিক নয়। আমরা যদি ইতিহাসের প্রখ্যাত মানুষদের জীবনী দেখি, আমরা দেখবো তাদের অনেকেরই জীবনের প্রথম অংশটা অনেক সাদামাটা। জীবনের অনেক পরে এসে বা অনেকে শেষ পর্যায়ে এসে খ্যাতি, প্রতিপত্তি, ক্ষমতা বা যে কাজের জন্যে তারা অমরত্ব লাভ করেছেন সে কাজের সুযোগ পেয়েছিলেন।

যেমন, সাড়া জাগানো উপন্যাস রুটসের লেখক এলেক্স হ্যালি। ৪০ বছর মার্কিন কোস্ট গার্ডে খুব সাধারণ চাকরি শেষে অবসর গ্রহণের পর তিনি ভাবলেন, তার পূর্ব-পুরুষ-আফ্রিকা থেকে যাদের দাস হিসেবে জোর করে আমেরিকায় নিয়ে আসা হয়েছে সেই কালো মানুষদের ইতিহাস নিয়ে এখন একটি উপন্যাস লিখবেন। শুরু করলেন গবেষণা, ভ্রমণের কাজ।

সবকিছু শেষ করে ১৯৭৬ সালে ‘রুটস|| দ্যা সাগা অফ এন আমেরিকান ফ্যামিলি’ যখন প্রকাশিত হয় তখন তার বয়স ৫০ পেরিয়ে গেছে। সেলিব্রিটির খ্যাতি পেলেন তারও কয়েক বছর পরে যখন তা মিনি সিরিজ হিসেবে টেলিভিশনে প্রচারিত হলো, বিশ্বজুড়ে অনূদিত হলো অনেকগুলো ভাষায়।

আবার ইতিহাসের একজন ক্ষমতাধর মানুষের কথা ধরুন। ২১ বছর যখন তার বয়স তখন তিনি ব্যবসায়ে লস করলেন। ২২ বছর বয়সে আইনসভার নির্বাচনে পরাজিত হলেন। ২৪ বছর বয়সে আবারও ব্যবসায়ে লোকসান হলো। ২৬ বছর বয়সে হারান প্রিয়তমা স্ত্রীকে এবং ২৭ বছর বয়সে নার্ভাস ব্রেক-ডাউনের শিকার হন। ৩৪ বছর বয়সে আবারও কংগ্রেস নির্বাচনে পরাজিত হন, ৪৫ বছর বয়সে সিনেট নির্বাচনে পরাজিত হন এবং এর মাঝখানে ৩৭ বছর বয়সে ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজিত হন এবং ৪৯ বছর বয়সে আবারও সিনেট নির্বাচনে পরাজিত হন।

অবশেষে ৫২ বছর বয়সে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এই মানুষটি হলেন আব্রাহাম লিংকন- গৃহযুদ্ধ এবং দাসপ্রথার অবসানের জন্যে যাকে আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে খ্যাতিমান প্রেসিডেন্ট হিসেবে গণ্য করা হয়। গেটিসবার্গে দেয়া তার বিখ্যাত ভাষণে—‘ডেমোক্রেসি ইজ বাই দি পিপল, অফ দি পিপল, ফর দি পিপল’-এ উক্তিটিকে বলা হয় পৃথিবীর ইতিহাসে গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে এ যাবৎকালে সবচেয়ে উদ্ধৃত উক্তি।

ইমাম আবু হানিফার কথা ধরুন। বর্তমান বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মুসলিম এখন হানাফী মাজহাবের অনুসারী। তাঁকে বলা হয় ইমামে আজম অর্থাৎ শ্রেষ্ঠতম ইমাম। অথচ শৈশবে তিনি কোনো পড়াশোনাই করেন নি। বাবার কাপড়ের ব্যবসা দেখাশোনা করতেন। একদিন তিনি যখন আল্লামা শাবীর বাড়ির সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন, শাবী তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কার ছাত্র? আবু হানিফা জবাব দিলেন, আমি কারো ছাত্র নই। আমি পড়াশোনা করি নি। শাবী তখন বললেন, কিন্তু তোমার মধ্যে তো আমি বুদ্ধিদীপ্ততা দেখতে পাচ্ছি। তোমার উচিত জ্ঞানী লোকদের সংস্পর্শে থাকা। শাবীর এ বাক্যটিই আবু হানিফার জীবন পাল্টে দিলো। তিনি জ্ঞানসাধনায় ব্রতী হলেন। পরবর্তী জীবনের কথা তো আমরা সবাই জানি।

এঁরা যদি এত পরে জীবন শুরু করেও সফল হতে পারেন, খ্যাতিমান, অমর হতে পারেন তাহলে আপনি কেন পারবেন না। অতএব জীবনে যেখানে আছেন সেখান থেকে শুরু করুন। যা আছে তা নিয়েই শুরু করুন। আপনি অবশ্যই যেখানে পৌঁছতে চান সেখানে যেতে পারবেন।

সুত্রঃ প্রশ্নোত্তর | কোয়ান্টাম মেথড

Skip to content