Business Care News

News That Matters

depressed, lonely, person struggle

প্রশ্নোত্তর সিরিজ – পর্ব ৫০ঃ জীবনে শূন্যতাবোধ

প্রশ্নঃ গুরুজী, আমি একজন ব্যবসায়ী। এক জীবনে অর্থকড়ি যথেষ্টই কামিয়েছি। সন্তানদেরকেও প্রতিষ্ঠিত করেছি। যার যার মত সংসার নিয়ে সবাই-ই ব্যস্ত। স্ত্রীর জন্যেও সম্পদের কোনো কমতি রাখি নি। অর্থবিত্তের কোনোই অভাব নেই আমাদের। মোটকথা জীবনে যা-কিছু পেতে চেয়েছি তার সবই পেয়েছি। তবু আজকাল মনটা খা খা করে। কেমন একটা শূন্যতাবোধ! ভেবে দেখেছি আমার থাকা না থাকা চারপাশের মানুষের জীবনে কোনো প্রভাব ফেলবে না!


উত্তরঃ জীবনের কাছে চাওয়াগুলো, মানে জীবনের লক্ষ্য যখন কেবলই অর্থবিত্ত নামযশ হয় তখন শেষটায় অবস্থা তো এমন হবেই!

আসলে আমরা অনেকেই এই ভুলটা করি। জীবনের সুখের জন্যে যেগুলো স্রেফ উপলক্ষ সেগুলোকে লক্ষ্য বানিয়ে বসে থাকি! তাই লক্ষ্য পূরণের আনন্দ পাই না। সুখীও হই না।

আপনার জীবনের লক্ষ্য ছিল কোটিপতি হওয়া। যখন তা হলেন তখন আপনার পরের লক্ষ্য কী হলো? স্বাভাবিকভাবেই আরো ধনী হওয়া। শত কোটিপতি হওয়া। তারপর হাজার কোটিপতি হওয়া।

এখন এই ওয়ান মোর ওয়ান মোর- এর কি কোনো শেষ আছে? নাই তো! তাহলে আপনি জীবনে সুখি হবেন কী করে? আপনি গন্তব্যে পৌঁছানোর আনন্দই কখনো পাবেন না।

কিন্তু আপনার জীবনের লক্ষ্য যদি মহৎ হয় অন্যের জন্যে কল্যাণকর হয় তাহলে তা যখন অর্জন করবেন তখন আপনি অপার্থিব আনন্দ পাবেন। আপনি সুখি হতে পারবেন।

আসলে এই যে জীবনের লক্ষ্য, এই লক্ষ্যটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যে, কেন আমি বেঁচে থাকব। আমার বেঁচে থাকতে কেন হবে- এই উত্তরটা যারা পান তারা সুস্থ থাকেন, জীবনটাকে কাজে লাগাতে পারেন। আর যারা পান না একটা পর্যায়ে এসে জীবনের ষোল আনাই তাদের কাছে মিছে মনে হয়।

আমরা আমাদের কোর্সে প্রফেসর ডঃ এম. ইউ আহমেদের একটি ঘটনা বলি।

১৯৭৩ সালের ২৬ মার্চ। তখন তার বয়স ৬৪ বছর। শ্বাসকষ্ট শুরু হলো। একটা পর্যায়ে ক্লিনিকেলি ডেড। সে অবস্থায় আসা একটা উপলব্ধি তাকে বেঁচে থাকতে উদ্বুদ্ধ করলো। ছয় ঘণ্টা ক্লিনিকেলি ডেড থাকার পরে তিনি আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসেন। তার মধ্যে নতুন করে প্রাণের সঞ্চার হলো। পরবর্তীতে তিনি পুরো ঘটনা বর্ণনা করেন।

তিনি অলমোস্ট পৃথিবী ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। প্রথমটায় বেশ কষ্ট হচ্ছিল। আস্তে আস্তে কষ্টের অনুভূতি চলে গেল। একটা পথ। পথের শেষপ্রান্তে আলো দেখা যাচ্ছে। তিনি সেই আলোর দিকে যাচ্ছেন। এমন সময় শুনতে পেলেন- “বাবা, তোমাকে বাঁচতে হবে। তোমাকে বাঁচতে হবে। লিভ লং হ্যাপি স্ট্রং…!”

এটা ছিল তার বিখ্যাত একটি অটোসাজেশন। আদরের মেয়ে মেরি ক্লিনিকেলি ডেড বাবার উপরে তারই অটোসাজেশন প্রয়োগ করে। বাবার মৃত্যু সে কোনোভাবেই মানতে পারছিল না।

এটা শুনে সেই অবস্থাতেই প্রফেসর সাহেবের মনে হলো- কেন বাঁচতে হবে আমাকে?

তিনি ভেবে দেখলেন- ছেলেমেয়েরা সবাই-ই প্রতিষ্ঠিত। তাদের জন্যে আলাদা করে বেঁচে থাকার আর কোনো প্রয়োজন নেই। তবে তাকে বাঁচতে হবে তার রোগীদের জন্যে। কারণ যারা তার শরণাপন্ন হতো তাদেরকে তো দেখার মতো কেউ নাই! তিনি মারা গেলে এই রোগীরা কার কাছে যাবে?

আসলে ডঃ এম. ইউ আহমেদ ছিলেন অসাধারণ জ্ঞানী আর প্রাজ্ঞ একজন মানুষ। মেডিস্টিক সাইকোথেরাপির পথিকৃত তিনি। ধ্যানকে আত্মউন্নয়ন ও নিরাময়ের ক্ষেত্রে প্রয়োগের একজন প্রবর্তক ছিলেন তিনি। কিন্তু জীবন মৃত্যুর সায়াহ্নে এসে তার মনে হলো- আমি তো এই বিদ্যা কাউকে শিখিয়ে যেতে পারি নাই, যে তার কাছ থেকে তারা উপকৃত হবে!

যখন তিনি একটা কারণ খুঁজে পেলেন বাঁচার তখন বলে উঠলেন, আমি বাঁচতে চাই আমি বাঁচব, আপনারা চেষ্টা করুন!

ডাক্তাররা বিস্মিত হলেন, যে একজন ক্লিনিকেলি ডেড মানুষের মুখ থেকে এত জোরালো শব্দ বের হতে পারে!

তারা আরো সক্রিয় হয়ে উঠলেন এবং ঐ সময়ের প্রেক্ষিতে যা-যা তাদের করা সম্ভব ছিল তা করলেন। ছয় ঘণ্টা পরে তিনি বেঁচে উঠলেন। এরপর আরো ১৬ বছর তিনি দিব্যি বেঁচে ছিলেন।

এবং এই ১৬টি বছর, যে-বয়সে অসুখবিসুখ আরো বেশি হওয়ার কথা, সেই বয়সেও তিনি ছিলেন পুরোপুরি সুস্থ। তিনি তার সমস্ত জীবন উৎসর্গ করলেন তার রোগীদের জন্যে, যারা তার পরামর্শ নিত।

আসলে জীবনের সঠিক লক্ষ্য যদি সামনে থাকে তাহলেই আপনি ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। বেঁচে থাকার প্রেরণা পাবেন। অহেতুক শূন্যতাবোধ আপনাকে গ্রাস করবে না।

সুত্রঃ প্রশ্নোত্তর | কোয়ান্টাম মেথড

Skip to content