প্রশ্নঃ আমি প্রাচুর্য চাই। কিন্তু আমার চারপাশের প্রাচুর্যবান মানুষদের অসুখী জীবন দেখে আমি বিভ্রান্ত। তাহলে কি ধনবান হতে চাওয়া ঠিক নয়?
উত্তরঃ আপনার চারপাশের যে প্রাচুর্যবান মানুষের কথা আপনি বলছেন, তারা তথাকথিত প্রাচুর্যবান। আসলে ধনবান হওয়া আর প্রাচুর্যবান হওয়া এক নয়। অর্থাৎ প্রচুর অর্থের মালিক হলেই প্রাচুর্যবান হওয়া যায় না, যদি না সে অর্থ আপনাকে অভাববোধ থেকে মুক্তি দিতে পারে।
আমার পরিচিত এক ব্যবসায়ী ছিলেন, কোটি কোটি টাকার মালিক। একবার বিদেশ থেকে তার ফোন পেলাম। তখন সেখানে মধ্যরাত। আমি প্রশ্ন করলাম, এত রাত, আপনি ঘুমাচ্ছেন না? উত্তরে জানালেন, পরদিন তার একটি বড় কনট্রাক্ট সাইন হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তাতে কিছু সমস্যা দেখা গেছে। তাই টেনশনে তার রাতে ঘুম হচ্ছে না।
সাদরে ইস্পাহানী একবার নিজের সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘I am a poor millionaire’.-মিলিয়নিয়ার হওয়ার পরও তিনি নিজেকে দরিদ্রই ভাবছেন।
গ্রিসের ধনকুবের এরিস্টটল ওনাসিস, যিনি প্রেসিডেন্ট কেনেডির বিধবা স্ত্রী জ্যাকুলিন কেনেডিকে বিয়ে করেছিলেন। তার এক পুত্র আলেকজান্ডার ওনাসিস, এক কন্যা ক্রিস্টিনা ওনাসিস। পুত্র আলেকজান্ডার ওনাসিস মাত্র ২৪ বছর বয়সে প্লেন ক্র্যাশে মারা যান। এরিস্টটলের মৃত্যুর পর তার অগাধ সম্পদের ৫৫ শতাংশের উত্তরাধিকারী হন কন্যা ক্রিস্টিনা। ৩৭ বছর বয়সে তিনি তিন বছরের শিশু কন্যাসন্তানকে রেখে আত্মহত্যা করেন। এরিস্টটল ওনাসিসের বিখ্যাত প্রমোদতরী ‘ক্রিস্টিনা’ কিনেছিলেন সৌদি ধনকুবের ও অস্ত্র ব্যবসায়ী আদনান খাসোগী।
আপনি যাদের প্রাচুর্যবান বলছেন তারা এদের মতোই অনেক অর্থ-বিত্ত থাকার পরও অভাবগ্রস্ত। কারণ প্রতিনিয়ত তারা আশঙ্কায় ভোগেন এই বুঝি তার অর্থ কমে গেল, নষ্ট হলো বা হারিয়ে গেল। কারণ প্রাচুর্যের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি তারা ধারণ করতে পারেন নি।
প্রাচুর্যের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি কী হবে এ প্রসঙ্গে ইমাম ইবনে তাঈমিয়া তাঁর ‘মজনু আল ফতোয়া’য় এক চমৎকার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। ইমাম তাঈমিয়ার এই উদ্ধৃতিটি অনুধাবন করলে অর্থ এবং প্রাচুর্যের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করতে এবং তথাকথিত প্রাচুর্যবানদের বিভ্রান্তি ও অস্থিরতা বুঝতে পারবেন।
‘One should have money with grace so that it is blessed for him. One should not have it with greediness. Money should be like restroom. He should go to it when he needs it. It should never exist in his heart. One should manage his wealth just as he needs his bathroom.’
অর্থাৎ অর্থ সম্পর্কে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করলেই তা আমাদের জন্যে আশীর্বাদ হতে পারে। অর্থকে দেখতে হবে প্রয়োজন হিসেবে—অনেকটা বাথরুমের মতো। প্রয়োজনের সময় আমরা বাথরুম ব্যবহার করি কিন্তু সারাক্ষণ এর কথা চিন্তা করছেন, এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। অর্থকেও তেমনি দেখতে হবে প্রয়োজন হিসেবে, এর প্রতি মোহগ্রস্ত বা আসক্ত হলে আপনি রোগজর্জরিত হবেন।
তথ্যসূত্রঃ প্রশ্নোত্তর | কোয়ান্টাম মেথড
Related Posts
Q&A Series – Episode 292: Failure is the pillar of success!
Q&A Series – Episode 291: What exactly is visualization?
Q&A Series – Episode 290: How does visualization work?