প্রশ্নঃ একজন হাত দেখে বলেছেন আমাকে তাবিজ করা হয়েছে এবং তাবিজ দ্বারা আমার বিয়ে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এরপর আমার মা তার কাছ থেকে তাবিজ এনে আমার হাতে বেঁধে দেন।
উত্তরঃ এই তাবিজ-কবচগুলো হচ্ছে তথাকথিত পীরদের পয়সা কামাই করার একটা বুদ্ধি। আর এদের সবচেয়ে সহজ শিকার হয় দুর্বলচিত্ত পুরুষ ও মহিলারা। হযরত মওলানা আশরাফ আলী থানভী (র) সুন্দরভাবে বলেছেন, এখন মুরীদ পীর খোঁজে আখেরাতের জন্যে আর পীর মুরীদ খোঁজে দুনিয়ার জন্যে। দুনিয়াতে তার কী লাভ হবে, এজন্যে পীর মুরিদ খোঁজে।
তথাকথিত পীররা মুরিদের আত্মিক উন্নতির পরিবর্তে, তাদের আত্মশক্তি জাগ্রত করার পরিবর্তে তাদেরকে তাবিজ-কবচ-ঝাড়ফুঁক ইত্যাদিতে নির্ভরশীল করে তোলে। যেমন, কোনো বিবাহিতা মহিলাকে যদি অস্থির মনে হয় তাহলে তাকে বললেই হয় যে, আপনার স্বামী কি আপনার দিকে একটু কম নজর দিচ্ছে? মহিলা তখন খুঁজে খুঁজে সাম্প্রতিক সময়ে তার স্বামীর সেই আচরণগুলোকেই মনে করার চেষ্টা করবে, যেখানে তার স্বামীকে তার ব্যাপারে একটু অমনোযোগী মনে হয়েছে।
সে তখন এই বাস্তবতার কথা মাথায় রাখবে না যে, বিয়ের পরের কয়েক মাস একজন স্বামী তার স্ত্রীকে নিয়ে যেভাবে ব্যস্ত থাকে সারাবছর তো আর তা থাকবে না। আর এরপর ভন্ডপীর যখন বলবে, আপনার স্বামীর নজর তো মনে হচ্ছে অন্যদিকে। খুব একটা ভালো আলামত পাচ্ছি না।
ব্যস, কোনো মহিলাকে কাবু করার জন্যে এটুকুই যথেষ্ট। তিনি তখন তার সঞ্চয়ের সবকিছুই ঐ ভন্ডপীরকে দিয়ে দিতে রাজি থাকবেন তার স্বামীকে ফিরিয়ে আনার আশ্বাসের বিনিময়ে। আর পীর সাহেবও তখন ‘তে-মাথার মাটি লাগবে, চার নদীর পানি লাগবে, জোড়া খাসি লাগবে, পাঁঠা লাগবে’ ইত্যাদি নানা অজুহাতে পয়সা হাতাতে শুরু করেন। সঞ্চয় তো বটেই, নিজেদের স্বর্ণালংকার পর্যন্ত মহিলারা এভাবে তুলে দেন তাদের হাতে।
কাজেই এই তাবিজ-কবচগুলো হলো মানুষের অসহায় অবস্থাকে পুঁজি করে একশ্রেণীর প্রতারকের ব্যবসাবুদ্ধি। এগুলো নিয়ে মাথা ঘামাবেন না। বিয়ে যদি না হয় তার বাস্তব কারণ কী সেটা খুঁজে বের করুন। যেমন, অনেক সময় দেখা যায়—পাত্রীপক্ষ বেশি বাছবিচার করছেন। চেহারা, পেশা, আর্থিক ও পারিবারিক অবস্থান, শিক্ষাগত যোগ্যতা—সবকিছু নিয়েই এত উচ্চমাত্রার প্রত্যাশা করেন যে, প্রথমদিকে অনেক প্রস্তাবকে হেলায় ফিরিয়ে দেন।
এদিকে তো পাত্রীর বয়স বাড়ছে। বাড়ছে তার যোগ্যতাও। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে হয়তো সে ভালো ক্যারিয়ারে ঢুকে গেছে। এখন যোগ্য পাত্র পেতে তো তাকে আরো অপেক্ষা করতে হবে। অর্থাৎ বাস্তব কারণ না খুঁজে যদি তাবিজ-কবচের পেছনে ছোটেন তখন সমস্যার সমাধান তো হবেই না, উল্টো টাকাপয়সা খোয়াবেন।
তথ্যসূত্রঃ প্রশ্নোত্তর | কোয়ান্টাম মেথড
Related Posts
Q&A Series – Episode 292: Failure is the pillar of success!
Q&A Series – Episode 291: What exactly is visualization?
Q&A Series – Episode 290: How does visualization work?