Business Care News

Business News That Matters

mountain, climber, man

প্রশ্নোত্তর সিরিজ – পর্ব ২৩৪: সাফল্যের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে থাকতে চাইলে!

প্রশ্নঃ নিজেকে সাফল্যের কেন্দ্রবিন্দুতে নিতে হলে কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে? শ্রমানন্দ শব্দটি বুঝলাম না। ব্যাখ্যা করলে খুশি হবো।


উত্তরঃ আসলে সাফল্য হচ্ছে এক বিরামহীন প্রচেষ্টার নাম। সাফল্যের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে থাকতে চাইলে প্রতি মুহূর্তে রক্তকে ঘাম করে ঝরাতে হবে এবং রক্তকে ঘাম করে ঝরানোর মতো মানসিক উদ্দীপনা, উদ্যম, উদ্যোগ ও শক্তি আপনার থাকতে হবে। শ্রমানন্দে কাজ করতে হবে, অর্থাৎ শ্রমকেই আনন্দে রূপান্তরিত করতে হবে। পবিত্র কোরআনে সূরা বালাদের চার নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘লাকাদ খালাক নাল ইনসানা ফি কাবাত’-‘আমি মানুষকে কষ্ট ও পরিশ্রমনির্ভর করে সৃষ্টি করেছি।’ অর্থাৎ যত পরিশ্রম করবেন তত আপনি ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। যেমন একটা উদাহরণ দেয়া যায়। একটা মেশিন বা একটা ইউনিট বা একটা ফ্যাক্টরিকে যত ফুল ক্যাপাসিটিতে কাজ দেয়া যায়, তত সে মেশিন বা ইউনিট বা ফ্যাক্টরির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা যাবে, তত সেটা লাভজনক অবস্থায় থাকবে। আর যদি এটাকে রেস্ট দেয়া হয়, ওয়াক আউট/ লক আউট করা হয়, তাহলে কী হয়, তার একটা উদাহরণ আদমজী জুট মিল। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এই জুট মিলটি একসময় ছিলো সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের গর্ব। তখনকার দিনে বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধান ঢাকায় এলে তাকে আদমজী জুট মিল দেখাতে নিয়ে আসা হতো। এই মিলের মালিক আদমজী পরিবারও ছিলো শীর্ষ ধনী পরিবার। কিন্তু কাজ দিতে না পারার কারণে স্বাধীনতা পরবর্তী পাঁচ বছরের মধ্যেই এটা পরিণত হলো শ্বেতহস্তিতে। আয়ের তুলনায় ব্যয় এত বেশি হলো যে, মিল আর চালানো যাচ্ছিলো না। ফলে গোল্ডেন হ্যান্ডশেক করে বন্ধ করে দেয়া হলো। বলা হয়, আধুনিক যুগে পাটের চাহিদা কম। কিন্তু যারা দক্ষ ব্যবস্থাপনা করতে পেরেছে, শ্রম দিয়েছে, তাদের দেশে জুট মিল বিকশিত হয়েছে, হচ্ছে এখনো। আদমজী জুট মিল যখন ফুল ক্যাপাসিটিতে চলেছে, তখন সেটা লাভজনক ছিলো, কিন্তু যখন আমরা এটাকে বিশ্রাম দিলাম, আরাম দিলাম, তখন থেকেই আস্তে আস্তে এটা তার শ্রী হারাতে শুরু করলো এবং এখন এর কোনো অস্তিত্বই আর নেই। মনে রাখবেন, জীবন হচ্ছে সময়ের সমষ্টি, আর সময় অর্থবহ হয় কাজের মধ্য দিয়ে। স্রষ্টা আমাদেরকে মানুষ বানিয়ে পাঠিয়েছেন। কিছু মানবীয় গুণাবলি, কিছু কল্যাণকর গুণাবলি দিয়ে পাঠিয়েছেন। সৃজনশীল শক্তি দিয়ে পাঠিয়েছেন, মমতা দিয়ে পাঠিয়েছেন যাতে আমরা মানুষের কল্যাণ করতে পারি, নতুন নতুন সৃষ্টি করতে পারি। যাতে নতুন কিছু করার তৃপ্তিতে, সৃষ্টির আনন্দে আনন্দিত থাকি। অর্থাৎ মানুষ হিসেবে কর্মের যে স্বাধীনতা, সৃজনশীলতার যে স্বাধীনতা-এই স্বাধীনতা প্রতিটি মানুষকে দেয়া আছে। সাফল্যের কেন্দ্রবিন্দুতে আসার জন্যে কাজের এই আনন্দকে উপলব্ধি করতে হবে। রক্তকে ঘাম হয়ে ঝরতে দিতে হবে, তাহলে ঘামের ঐ নোনা পানিতে সাফল্যের বীজ অঙ্কুরিত হবে। যত বুদ্ধিমত্তার সাথে পরিশ্রম করবেন, তত আপনার লক্ষ্য অর্জন করতে পারবেন। লক্ষ্যের জন্যে কাজকে ভালবেসে আনন্দের সাথে রক্তকে ঘাম হয়ে ঝরতে দেয়ার নামই শ্রমানন্দ।

তথ্যসূত্রঃ প্রশ্নোত্তর | কোয়ান্টাম মেথড

Skip to content