Business Care News

Business News That Matters

man holding fork taking food, fancy restaurant food

Photo by Fidel Hajj on Pexels.com

প্রশ্নোত্তর সিরিজ – পর্ব ২৪০: প্রয়োজন আর অপচয় – এই দুয়ের মধ্যে পার্থক্য

প্রশ্নঃ প্রয়োজন আর অপচয়-এই দুয়ের মধ্যে পার্থক্য করব কীভাবে?


উত্তরঃ প্রয়োজন আর অপচয়—এই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য করা খুব সহজ। আপনার পোশাকের কথাই ধরুন—পোশাক সবসময় আপনার পরিবেশের উপযোগী হওয়া উচিত। সর্বহারাদের সমাবেশে আপনি বক্তৃতা করতে যাচ্ছেন। সেখানে ছেঁড়া জামাকাপড় পরে আপনি হয়তো যেতে পারেন। কিন্তু কোনো পাঁচতারা হোটেলে আপনি ওসব পরে ঢুকতেই পারবেন না।

আবার আপনার জুতো প্রয়োজন। কিন্তু যদি মনে করেন, এ জুতোয় ডায়মন্ড বসানো থাকতে হবে, শার্টের বোতাম সোনার তৈরি হতে হবে, তাহলে এটা বাহুল্য-অপচয়। আপনার ১০/২০ সেট জামা থাকতে পারে। যখন নতুন কিনবেন, পুরনোগুলো যা আপনি আর পরবেন না, অভাবীদের দিয়ে দিন। কিন্তু যদি ২০০ সেট জমিয়ে রাখতে চান, সেটা হবে অপচয়।

আসলে প্রয়োজন আর অপচয়ের মধ্যে পার্থক্য করতে না পারলে কী হয়, সম্প্রতি জাতিসংঘের একটি রিপোর্টে তার এক করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে। ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে ‘টেকসই উন্নয়ন’ বিষয়ক শীর্ষ সম্মেলনে জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে প্রতিবছর ১৩০ কোটি টন খাদ্য বিনষ্ট হয়। এটা বিশ্বে মোট উৎপাদিত খাদ্যের এক-তৃতীয়াংশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নষ্ট হয় ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার দেশগুলোতে। প্রতিবছর সেখানে ২২ কোটি ২০ লাখ টন খাবার ভালো ও তাজা অবস্থায় ফেলে দেয়া হয় যা গোটা সাব-সাহারা অঞ্চলে একবছরে উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্যের প্রায় সমান—২৩ কোটি টন।

‘এভয়ডিং ফিউচার ফ্যামিনস’ বা ভবিষ্যৎ দুর্ভিক্ষ এড়ানোর উপায় শীর্ষক এ প্রতিবেদনটির ওপর একটি খবর প্রকাশিত হয় ২৬ জুন, ২০১২—দি টাইমস অফ ইন্ডিয়ায়। এতে বলা হয়, ‘বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ যখন না খেয়ে থাকছে, উন্নত বিশ্বের মানুষ তখন বছরে মাথাপিছু ৯৫ থেকে ১১৫ কেজি খাবার নষ্ট করছে। সামষ্টিক পর্যায়ে এ হিসাবটা আরো বেশি—২৮০ থেকে ৩০০ কেজি। শুধু শিল্পোন্নত দেশগুলোই বছরে নষ্ট করে ৬৭০ মিলিয়ন টন খাবার যার মধ্যে রয়েছে সবজি থেকে শুরু করে ফলমূল পর্যন্ত। পরিবহনের সময় পথে অথবা ভোক্তার নিজের হাতেই ফেলে দেয়া এসব খাবার কখনো ঐ ক্ষুধার্ত মানুষগুলোর কাছ পর্যন্ত যায় না।

জরিপে দেখা যায়, মধ্য ও উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে খাওয়ার উপযোগী থাকা সত্ত্বেও খাবার ফেলে দেয়ার প্রবণতা উল্লেখযোগ্য। আমেরিকায় কেনা খাবারের ২৫ শতাংশই ফেলে দেয়া হয়। অন্যদিকে মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়া এবং মার্কেটিং অফারের ফাঁদে পড়ে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি কেনার কারণে ব্রিটিশরা প্রায় এক-তৃতীয়াংশ খাবার ফেলে দেয়। শিল্পোন্নত দেশগুলোতে ৪০ শতাংশের বেশি খাদ্যই নষ্ট হয় খুচরা বিক্রি ও ভোক্তা পর্যায়ে।

নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে কি অপচয় হয় না? হয় এবং তা শিল্পোন্নত দেশের চেয়ে খুব একটা কমও নয়—বছরে ৬৩০ মিলিয়ন টন। তবে সেটা মূলত খাদ্য সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাবে। যেমন, যথাযথভাবে গুদামজাত না করার কারণে বা সঠিক প্রক্রিয়াকরণের অভাবে।

উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ফসল তোলার পর প্রক্রিয়াকরণের অভাবে ৪০ শতাংশ খাদ্য নষ্ট হয়ে যায়। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি নষ্ট হয় চাল। এছাড়াও সামুদ্রিক মৎস্য আহরণের সময় নয় থেকে ১৫ ভাগ বিনষ্ট হয়। আর মাছ কেনার পর ভোক্তাদের বাড়িতে নষ্ট হয় ছয় থেকে আট ভাগ। এ ধরনের খাদ্য বিপর্যয় রোধে কেন্দ্রীয় খাদ্য সংরক্ষণাগার, সমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থা এবং বাজার সুবিধা গড়ে তোলার সুপারিশ করা হয়েছে।

অর্থাৎ খাদ্যের কোনো অভাব নেই। অপচয় সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা গেলে, প্রয়োজনের অতিরিক্তের ব্যাপারে ব্যক্তিক এবং সামষ্টিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা গেলে, খাদ্যাভাব বা দুর্ভিক্ষ বলে পৃথিবীতে কোনোকিছু থাকবে না।

মূল: প্রশ্নোত্তর | কোয়ান্টাম মেথড

Skip to content