প্রশ্নঃ গুরুজী, আমি বারবার প্রতারণার শিকার হই। কী করবো?
উত্তরঃ আমরা প্রতারিত হই প্রধানত তিনটি কারণে। প্রথমত, লোভ অর্থাৎ পরিশ্রম না করে সহজে কিছু পেতে চাওয়া। সেটা অর্থ হতে পারে, খ্যাতি হতে পারে, প্রশংসা, প্রেমিক-প্রেমিকা বা স্বামী-স্ত্রী হতে পারে। দ্বিতীয়ত, কোনো কারণে আবেগকে যুক্তির ঊর্ধেব স্থান দেয়া, তৃতীয়ত, যাচাই-বাছাই না করে সবাইকে ভালো মানুষ মনে করা। আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে, আপনি হয়তো সবাইকেই বিশ্বাস করেন। সরল হওয়া ভালো, কিন্তু সরলতাকে কখনো বোকামির পর্যায়ে নিয়ে যাবেন না-নাসির উদ্দিন হোজার মতো। হোজা অনেকদিন পরে বাড়িতে ফিরছে। যখন বাড়ির খুব কাছাকাছি চলে এসেছে, তখন এক লোক তাকে ডেকে বললো, হোজা, তুমি অনেকদিন পরে বাড়িতে ফিরলে। কিন্তু তোমার স্ত্রী তো বিধবা হয়ে গেছে। এখন কী হবে? হোজা সেখানে বসেই কাঁদতে শুরু করলো। কিছু লোক জড়ো হয়ে গেল। একজন জিজ্ঞেস করলো, হোজা তুমি কাঁদছো কেন? হোজা বললো, আমার স্ত্রী বিধবা হয়ে গেছে। কাঁদবো না তো কী করবো। কয়েকজন তখন বললো, তুমি বেঁচে থাকতে তোমার স্ত্রী বিধবা হয় কীভাবে? তার হুঁশ হলো। তাইতো, আমি বেঁচে থাকতে আমার স্ত্রী বিধবা হয় কীভাবে?শুধু গল্পে না, এই হোজারা বাস্তবেও আছে।
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি জেলায় এক ভদ্রলোকের ছিলো ৯০০ বিঘা জমি, যেখানে তিনি চিংড়ির ঘের করেছিলেন। পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে তার পোস্টিং ছিলো আবার অন্য জায়গায়। দুতিনজন লোককে ব্যবসায়ের কোনো শর্ত ছাড়াই অংশীদার করে তাদের হাতে সবকিছু ছেড়ে দিয়ে এসেছিলেন। তারা প্রায়ই বিভিন্ন লোকসানের কথা বলে তার কাছ থেকে টাকা নিতো। এদিকে ব্যবসায়ে ভালো মনোযোগ দেয়ার জন্যে তিনি তার চাকরিটা ছেড়ে যখন সেখানে যান, দেখেন-ঐ লোকগুলো ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সবকিছু নিজেদের দখলে নিয়ে নিয়েছে। চাকরি, ব্যবসা-দুটোই হারিয়ে এখন কোনোরকমে চলে তার সংসার।
আসলে প্রতারিত হওয়ার ঘটনাগুলো কষ্টের, দুঃখের। কিন্তু এর পেছনে প্রতারিতের দোষগুলোও খুব উল্লেখযোগ্য। এক ব্যাংকারের ঘটনা বলি- ব্যাংক থেকে তো বটেই, বন্ধুবান্ধব-আত্মীয়স্বজন সবার কাছ থেকে ধার করে তিনি ১৭ লাখ টাকা দিয়েছিলেন ঘড়ি ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দিয়েছিলো এমন এক লোককে। এমনকি লোকটিকে তিনি ভালো করে চিনতেনও না। শুধু তিনি না, তার দেখাদেখি ঐ অফিসের আরো অনেকে টাকা দিয়েছিলো এই লোকটিকে। লোকটি প্রথম কয়েকদিন লভ্যাংশের নামে কিছু কিছু করে টাকা দিলো। এর কয়েক মাস পরে একদিন লোকটি উধাও। তাকে আর পাওয়া যায় নি। সেই ব্যাংকার এখনো সেই ঋণের ভার বয়ে চলেছেন। তিনি লোভ করেছিলেন। ভেবেছিলেন-পরিশ্রম না করে যদি বসে বসে পাওয়া যায় ক্ষতি কী? আর সেই সাথে দিয়েছিলেন চূড়ান্ত সরলতার পরিচয়-ভালো করে লোকটির খোঁজখবর না নিয়ে।
সুত্রঃ প্রশ্নোত্তর | কোয়ান্টাম মেথড
Photo by Kat Smith
Related Posts
Q&A Series – Episode 292: Failure is the pillar of success!
Q&A Series – Episode 291: What exactly is visualization?
Q&A Series – Episode 290: How does visualization work?