Business Care News

Business News That Matters

falling, male, trees

প্রশ্নোত্তর সিরিজ – পর্ব ৪৭ঃ ভয় – যদি লোকসান হয়?

প্রশ্নঃ আগামী মাসে আমি বিজনেস শুরু করতে যাচ্ছি। মনে জোর পাচ্ছি না। ভয় হচ্ছে যদি লোকসান হয়? ভয়ে আমি ঘুমাতে পারি না। কী করবো?


উত্তরঃ আসলে নিজের মনের ভেতরে আগে সাহস আনতে হবে। বিশ্বাস আনতে হবে। ভয় পাওয়া মানেই হচ্ছে নিজের ওপরে বিশ্বাসের অভাব রয়েছে। বিশ্বাস যখন আসবে তখন ভয়টা এমনিতেই কেটে যাবে। সাহস করতে না পারলে কেউ কখনো বড় কাজ করতে পারে না। আসলে যুক্তিসঙ্গত সীমার মধ্যে কোনোটাই ঝুঁকি নয় যদি বিশ্বাস এবং সাহস থাকে। কারণ আপনি এমন কিছু করতে যাচ্ছেন না যেটা এর আগে কেউ করে নি। এর আগে যেহেতু কেউ না কেউ পেরেছে অতএব আপনিও পারবেন। কাজেই লোকসানের ঝুঁকি নয়, আপনার অন্তর্গত ভয়ই হচ্ছে আপনার বাধা।

আর ব্যবসায়ে যদি আপনি এই নিয়ত নিয়ে নামতে পারেন যে, আপনি আপনার ক্লায়েন্টদের সেবা দেবেন, আপনার কর্মীদের একটা ভালো কর্মসংস্থানের সুযোগ দেবেন তাহলে আপনাকে কখনো লোকসানের ভয়ে ভীত হতে হবে না। একটা উদাহরণ দেই।

বিশ্ববিখ্যাত প্যানাসনিক কর্পোরেশনের প্রতিষ্ঠাতা কনসুকি মাতসুশিতা জন্মেছিলেন ১৮৯৪ সালে পশ্চিম জাপানের এক প্রত্যন্ত গ্রামে। জুয়াড়ি বাবার অপরিণামদর্শিতার ফলে সবকিছু খুইয়ে পরিবারটি যখন পথে বসতে যাচ্ছিলো তখন আট ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট নয় বছর বয়সী মাতসুশিতা বাইসাইকেলের দোকানে ফুটফরমাশের কাজ করে ধরেন পরিবারের হাল। কিছুদিনের মধ্যেই সেটি ছেড়ে যোগ দেন ওসাকা লাইট কোম্পানিতে। দক্ষতা ও বিশ্বস্ততার কারণে একের পর এক পদোন্নতি পেয়ে ইন্সপেক্টরের পদে উন্নীত হলেও স্বপ্ন ছিলো তার আরো বড়। ভাবনা ছিলো মানুষকে কীভাবে আরো সেবা দেয়া যায়। উদ্ভাবন করলেন নতুন এক ধরনের লাইট-সকেট, প্রচলিতগুলোর চেয়ে যা অনেক ভালো।

কিন্তু মালিক এর উৎপাদনে রাজি হলেন না। অগত্যা-‘বল বল আপন বল’। চাকরি ছেড়ে দিলেন। স্ত্রী এবং তিনজন মাত্র সহকারী নিয়ে মাতসুশিতা শুরু করলেন তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠান। অর্থ নেই, ব্যবসা করার অভিজ্ঞতা নেই এবং প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া বা ইলেকট্রিক বাল্ব উৎপাদনে কোনোরকম অভিজ্ঞতা নেই-এমন সহকারীদের নিয়ে একটানা কয়েক মাস কাজের পর তারা সফল হলেন। উৎপাদন তো হলো। কিন্তু বিক্রি করতে গিয়ে দেখা দিলো বিপত্তি। পাইকারি বিক্রেতারা তার পণ্য নিতে চাইলো না পরিমাণে কম বলে। লেগে থাকলেন মাতসুশিতা। গুণগত মান বাড়িয়ে দিলেন। দাম কমালেন ৫০%। পত্রিকায় পণ্যের বিজ্ঞাপন দেয়ার অভিনব উপায় তিনিই প্রথম চালু করেন। হু হু করে বাড়তে লাগলো তার বিক্রি।

১৯২২ সাল নাগাদ মাতসুশিতার প্রতিষ্ঠান প্রতিমাসেই নতুন নতুন পণ্য নিয়ে হাজির হতে লাগলো। ব্যবসাক্ষেত্রে মাতসুশিতা দিলেন এক যুগান্তকারী ধারণা। প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে বাজারে প্রচলিত পণ্যের চেয়ে অন্তত ৩০% ভালো পণ্য দিতে হবে আর দাম কমাতে হবে অন্তত ৩০%। আফটার সেল সার্ভিস দেয়ার ধারণাটি মাতসুশিতাই চালু করেন।

কর্মীদের তিনি নিজ পরিবারের সদস্য বলে ভাবতেন। মহামন্দার সময় কোম্পানিগুলো যখন কর্মী ছাঁটাই করে মন্দা মোকাবেলার চেষ্টা করছিলো মাতসুশিতা তখন উৎপাদন কর্মীদের বিক্রয়কাজে নিয়োজিত করে চেষ্টা করেছেন ছাঁটাই না করে কীভাবে চলা যায়। সে সময় কর্মীদের আধবেলা কাজ করালেও বেতন দিতেন পুরোবেলার। এই ভালবাসার প্রতিদানও তিনি পেয়েছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মিত্রবাহিনীর অভিযোগের মুখে কোম্পানি প্রধানের পদ ছেড়ে দিতে হলেও তার কর্মীরাই তাকে আবার ফিরিয়ে আনে কোম্পানিতে। তিনি বলতেন, একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান শুধু তার শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থই রক্ষা করবে না, রক্ষা করবে সমাজের স্বার্থও।

আপনি যদি মনে করে থাকেন-এত দান-দক্ষিণা করে মাতসুশিতার কী লাভ হলো, তাহলে ভুল করবেন। ১৯৮৯ সালে ৯৪ বছর বয়সে মৃত্যুর সময় তার ব্যক্তিগত সম্পদেরই পরিমাণ ছিলো তিন বিলিয়ন ডলার। ২০ হাজার কর্মীসমেত তার প্রতিষ্ঠান ছিলো বিশ্বের সবচেয়ে লাভজনক ইলেকট্রনিক কোম্পানি। আমেরিকার কোনো ভিসিআর বিক্রির দোকানে গিয়ে যদি আপনি ব্র্যান্ড ভিসিআর খোঁজেন তাহলে দেখবেন সবগুলোই মাতসুশিতার। আপনিও এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজে নেমে পড়ুন। কখনো লস করবেন না।

সুত্রঃ প্রশ্নোত্তর | কোয়ান্টাম মেথড

Skip to content