প্রশ্নঃ নিরাময়ের জন্যে মেডিটেশনের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তরঃ চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে, শতকরা ৭৫ ভাগ রোগের কারণই মনোদৈহিক। অর্থাৎ রোগের লক্ষণ দেহে প্রকাশ পেলেও এর উৎস হচ্ছে মন। আর এই ৭৫ ভাগ রোগ নিরাময় হতে পারে শুধুমাত্র দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে সুস্থ জীবনদৃষ্টি গ্রহণের মধ্য দিয়েই। আর সুস্থতার জন্যে দৃষ্টিভঙ্গি বা জীবনচেতনা পরিবর্তনের সবচেয়ে সহজ পথ হচ্ছে মেডিটেশন।
আসলে সুখের অভাবই অসুখ। মনে সুখের অভাব হলেই তার প্রভাব পড়ে দেহে। মনের দুঃখ কষ্ট ক্ষোভ হতাশা গ্লানি জমে তা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ব্যথা-বেদনারূপে প্রকাশ পায়। মেডিটেশনে এলে মনের ভেতর থেকে ধীরে ধীরে অপ্রয়োজনীয় এ জঞ্জালগুলো বের হয়ে যায়। বইতে শুরু করে নিরাময়ের সুবাতাস।
এখন এটা চিকিৎসাবিজ্ঞানেও প্রমাণিত। ১৯৮৭ সালে গবেষক ডা. ডেভিড ওরমে জনসন এক ব্যাপক নিরীক্ষা চালান। তাঁর পরিসংখ্যানে দেখা যায়, যারা মেডিটেশন করেন, তাদের ডাক্তারের কাছে পরামর্শ নেয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলনামূলকভাবে অনেক কম। বয়স অনুপাতে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে যাওয়ার পরিমাণ হচ্ছে শিশু-কিশোর (০-১৯ বছর) ৪৬.৮ ভাগ কম। যুবক (১৯-৩৯) ৫৪.৭ ভাগ কম। বয়স্ক (৪০-এর ওপরে) ৭৩.৭ ভাগ কম।
এ পরিসংখ্যান প্রমাণ করে যে, মেডিটেশনে মনোদৈহিক স্বাস্থ্যের কী পরিমাণ উন্নতি হয়। একজন মধ্যবয়সী মেডিটেশনকারী যে সময়ে একবার ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন, ঠিক একই সময়ে যিনি মেডিটেশন করেন না, তিনি শরণাপন্ন হবেন ৪ বার।
ড. জন কাবাত জিন এবং ডা. রিচার্ড ডেভিডসন এক পরীক্ষায় দেখেছেন যারা মেডিটেশন করেন তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্যদের চেয়ে বেশি। মেডিটেশন করেন না এবং নতুন মেডিটেশন শিখেছেন এমন দুশ্রেণীর লোকদের মধ্যে ফ্লু’র জীবাণু সংক্রমিত করে দেখা গেছে, যারা মেডিটেশন করেছেন তাদের রক্তে এ সংক্রমণের ৪ সপ্তাহ এমনকি ৮ সপ্তাহ পরেও এন্টিবডির মাত্রা ছিলো বেশি।
আমেরিকায় জীবন-সংহারক মারাত্মক দুটি ব্যাধি হচ্ছে হৃদরোগ এবং ক্যান্সার। ড. জনসনের সমীক্ষায় দেখা যায়, যারা মেডিটেশন করেন তাদের মধ্যে এই রোগে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা অনেক অনেক কম। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির পরিমাণ হচ্ছে ৮৭.৩ শতাংশ কম। ক্যান্সার বা টিউমারের ক্ষেত্রেও এ পরিমাণ ৫৫. ৪ শতাংশ কম।
ডাক্তারি ওষুধ বা প্রচলিত রোগ প্রতিরোধ পদ্ধতিতে আজ পর্যন্ত কেউ এ সাফল্য দেখে নি। কোনো কোলেস্টেরল হ্রাসকারী ওষুধ যদি হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা ৫০ শতাংশ হ্রাস করতে সক্ষম হতো, তাহলে তা সারা বিশ্বব্যাপী সংবাদ শিরোনামে পরিণত হতো।
পঞ্চাশ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করে গবেষণা চালানোর পরও সেখানে ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর হার অপরিবর্তনীয়ই রয়ে গেছে। কিন্তু খোদ যুক্তরাষ্ট্রে পরিচালিত পরিসংখ্যান থেকেই আমরা দেখতে পাই, মেডিটেশনের মাধ্যমে মেডিটেশনকারীদের হৃদরোগ বা ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কতটা কমানো যায়। শুধু তা-ই নয়, ডা. কার্ল সিমনটন এবং ডা. বার্নি সীজেল প্রচলিত চিকিৎসার সাথে মেডিটেশনের টেকনিক প্রয়োগ করে শত শত ক্যান্সার রোগীকে নিরাময় করতে সক্ষম হয়েছেন।
২০০৩ সালের এপ্রিলে আমেরিকান ইউরোলজিক্যাল এসোসিয়েশনের সম্মেলনে ডা. ডীন অরনিশ তার সাম্প্রতিক গবেষণার ফলাফল ঘোষণা করেন, মেডিটেশন প্রোস্টেট ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
আরেকটি পরীক্ষায় দেখা গেছে, যে মহিলারা নিয়মিত মেডিটেশন করেন এবং রোগ নিরাময়ে মনছবির প্রয়োগ করেন, তাদের স্তন টিউমারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম। হেল্থ ম্যাগাজিনের সেপ্টেম্বর, ১৯৯৫ সংখ্যায় প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয় পিরিয়ড শুরু হওয়ার আগে সমস্যায় ভুগতেন এমন মহিলাদের ওপর এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৫ মাস নিয়মিত মেডিটেশন করার পর তাদের সমস্যা কমে গেছে শতকরা ৫ ভাগ।
Related Posts
Q&A Series – Episode 292: Failure is the pillar of success!
Q&A Series – Episode 291: What exactly is visualization?
Q&A Series – Episode 290: How does visualization work?